মন্ত্রী-এমপিসহ ৭০ জনের আমলনামা নিয়ে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তাদের মধ্যে অন্তত ৫০ জনের মনোনয়ন-ভাগ্যে বিপর্যয় ঘটতে যাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনে। দলের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের ছয়-সাতজন মন্ত্রীসহ ৭০ জনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগনামা তাদের নেত্রীর হাতে রয়েছে, এর মধ্যে ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিজস্ব সিন্ডিকেট তৈরি করে এলাকায় শাসন কায়েম করতে গিয়ে দলীয় কর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ও জনপ্রিয়তা হ্রাসের অভিযোগ রয়েছে। নানামুখী প্রতিবেদনে প্রার্থীদের
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের চিত্র আর সাংগঠনিক দুর্বলতার করুণ চেহারা উঠে আসায় শেখ হাসিনা ডিসেম্বরের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে ঢেলে সাজাতে চান। শুরু করতে চান আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজ। পরিবর্তন আনতে চান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, দলের কেন্দ্রীয় মনিটরিং রিপোর্ট, একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদন ও সাংগঠনিক স¤পাদকদের মাঠপর্যায় থেকে তুলে আনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন বিগত নির্বাচনে বিজয়ী ৭০ জনের ভবিষ্যৎ নির্বাচনী রাজনীতিকে ঝুঁকিবহুল করেছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তিনি একই সঙ্গে সরকারের সাফল্য তুলে ধরে জনমত পক্ষে টানতে সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিংসহ নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা হাতে নিতেও নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, নানামুখী প্রতিবেদনে একদিকে প্রার্থীদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের চিত্র ও অন্যদিকে সাংগঠনিক দুর্বলতার করুণ চেহারা উঠে আসায় শেখ হাসিনা ডিসেম্বরের মধ্যেই দলীয় কাউন্সিল স¤পন্ন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই কাউন্সিলের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগকে নতুন করে প্রবীণ ও নবীনের সমন্বয়ে, অভিজ্ঞ ও গতিশীল তারুণ্যের অংশগ্রহণে ঢেলে সাজাতে চান তিনি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে আনতে চান পরিবর্তন।
অন্যদিকে ডিসেম্বর থেকেই জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় প্রার্থীর সন্ধানে নামবে আওয়ামী লীগ। তৃণমূল কর্মীদের মতামতের আলোকে প্রতি আসনে পাঁচজন প্রার্থীর তালিকা তৈরি করা হবে। এর পর প্রতি আসনে উঠে আসা পাঁচজন প্রার্থীর ওপর কেন্দ্র থেকে নানা হিসাব-নিকাশ সামনে রেখে জরিপ চালানো হবে। বেছে নেওয়া হবে সঠিক প্রার্থী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এমন আভাসই দিয়েছে। সূত্র জানায়, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের রণকৌশল কেমন হবে এবং বিএনপি ভোটযুদ্ধে না এলে পরিকল্পনা কী হবে তা
সামনে রেখেই অগ্রসর হচ্ছে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, দলের নির্বাচনী প্রস্তুতির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে মূলত সেপ্টেম্বর থেকেই। ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় কমিটির সভা ডাকা, কাউন্সিলের প্রস্তুতি নেওয়া এবং দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার মধ্যেই এর অন্তর্নিহিত তত্ত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, এ ছাড়া প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও একরকম শুরু হয়ে গেছে। ১৫ সেপ্টেম্বর সাত বিভাগীয় স¤পাদক বিভাগওয়ারী বর্তমান সংসদ সদস্যদের অবস্থান স¤পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কাছে
লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর আগে অক্টোবরে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দলের অবস্থান এবং বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের অবস্থান জরিপ করে পৃথক প্রতিবেদন দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। দলের অপর এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে আসা জরিপ আমলে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলকে চাঙ্গা করতে সময়মতো কাউন্সিল আয়োজনের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে গত সপ্তাহে ভিয়েতনাম যাওয়ার আগে দলের সাংগঠনিক
স¤পাদকদেরও নির্দেশ দেন ওয়ার্ড পর্যায় থেকে বিভাগ পর্যন্ত কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে যেন নির্বাচনের দিকে নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করা হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক স¤পাদক বীর বাহাদুর এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। স্বাধীনতার আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। এ দলে তো নির্বাচনী প্রস্তুতি থাকবেই। আগামী এক বছর ক্ষমতাসীন দল হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতা ঠিকভাবে পরিচালনার পাশাপাশি আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি একটি মুখ্য বিষয়। দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক স¤পাদক আহমেদ হোসেন জানান, তিনি দলের সার্বিক পরিস্থিতি ও ঢাকা বিভাগের এমপিদের অবস্থা দলের শীর্ষ পর্যায়কে জানিয়েছেন। দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচন পদ্ধতি গণতান্ত্রিকভাবেই হবে। দু-তিন মাসের মধ্যে দলের সাংগঠনিক কাঠোমো আরও শক্তিশালী হবে। কাউন্সিল হলে নতুন নেতৃত্বের কারণে দল আরও গতিশীল হবে।
দলের যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের প্রস্তুতি তো নেবেই। নির্বাচন না করে অন্য কোনোভাবে ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের নেই। কেউ যদি এ ধরনের ষড়যন্ত্র করে তবে আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং জয়ী হয়। এখনো প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সেই ষড়যন্ত্রই করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো জনমুখী দলের কাছে এসব ষড়যন্ত্র টিকবে না। জনগণের দল জনগণের কাছে তো যাবেই। দলের নেতা-কর্মীরাও সময়মতো নির্বাচন চান। আওয়ামী লীগ সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছে।
Leave a Reply