নিজস্ব প্রতিবেদক ॥একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে বলেন, ‘মি. চেয়ারম্যান আপনারা যদি ফাঁসির আগেই শাস্তি চালু রাখেন, তাহলে আমাদের কিছুই করার নেই।’অসুস্থ থাকার কারণে মামলার কার্যক্রম আগামী রবিবার দেয়ার আবেদন খারিজ করে দিলে ট্রাইব্যুনালে এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
রবিবার চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্রথম আন্তজাতিক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের ৩৭তম সাক্ষী চপলা রানীর (৭৮) সাক্ষ্য শেষে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাকে প্রশ্ন করতে চাইলে প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ‘আসামির আইনজীবী আছেন, তিনিই প্রশ্ন করবেন। আইন অনুযায়ী আসামি প্রশ্ন করতে পারেন না।’তখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, ‘রানা বাবু আমরা আইন তৈরি করি আর আপনারা আইনের ব্যবসা করেন। আমার জানা আছে, সাক্ষীকে আসামি প্রশ্ন করতে পারেন কিনা। আইনটি ভালো করে পড়ে আসবেন।’তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি বিচারকদের এখতিয়ার। উনারা ইচ্ছা করলে আমাকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে পারেন।’এ সময় বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বলেন, ‘চৌধুরী সাহেব আপনার আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করুক। তারপর আপনি আপনার প্রশ্ন তিনটি করবেন।’পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা সাক্ষীকে জেরা শুরু করেন। জেরা শেষ হলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাক্ষী চপলা রানীকে প্রশ্ন করেন।প্রথম প্রশ্নে তিনি জানতে চান, ’৭১ এ আপনি কি কখনো হাড়ি-পাতিল বিক্রি করতে আমার বাড়িতে গিয়েছেন? তখন সাক্ষী বলেন, না। দ্বিতীয় প্রশ্ন, ’৭১ এ আমি কি আপনার বাড়িতে হাড়ি-পাতিল কিনতে গিয়েছি কখনো? সাক্ষী বলেন, আমি দেখিনি এবং তৃতীয় প্রশ্ন, ’৭১ এ চট্টগ্রামে আমার কোনো স্থায়ী ঠিকানা ছিল আপনি কি তা বলতে পারবেন? সাক্ষী বলেন, না। প্রশ্ন শেষে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ৩৮ ও ৩৯ নম্বর সাক্ষী জব্দ তালিকায় সাক্ষ্য দেন। একজন হলেন- এএসআই এরশাদুল হক জিআরও চট্টগ্রাম কোর্ট এবং অপরজন হলেন সাবেক জিআরও চট্টগ্রাম কোর্ট এসআই মোহাম্মদ আব্দুল হাই।সাক্ষ্য শেষে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী রবিবার দেয়ার জন্য আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল ২১ তরিখ ধার্য করেন।এ সময় সালাউদ্দিন কদের চৌধুরী বলেন, ‘আমার তিনদিন হলো জ্বর এরপরও আপনারা সময় দিচ্ছেন না। আমারও বয়স হয়েছে। আপনারা ন্যায়বিচার করুন। ট্রাইব্যুনাল ২১ তারিখই ধার্য হয়েছে বলেন।’তখন তিনি বলেন, ‘ঠিক আছে আপনারা যদি ফাঁসির আগে শাস্তি চালু রাখেন তাহলে কিছুই করার নেই। বাড়ির কর্তা মরায়, ফকির এখন বাড়ির মালিক হয়েছে।’এ সময় সালাহউদ্দিন কদের চৌধুরী ট্রাইব্যুনাল কক্ষ ছাড়তে ছাড়তে রানা দাশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আইনও বুঝে না, গাইনও বুঝে না। আমাকে ইংরেজী শিখাতে এসেছে। ব্রিটিশদের ইংরেজী শিখালাম, বাংলাদের ইংরেজী শিখালাম। আর আমাকে কিনা ইংরেজী শিখাবে।’রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ সিমন। অপরদিকে আসামীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এএইচএম আহসানুল হক হেনা ও রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকে সালমা হাই টুনি।বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত ১৪ মে থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের ৩৬ জন সাক্ষী তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন।গত ৪ এপ্রিল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সুনির্দিষ্ট ৭২টি ঘটনায় ২৩টি অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করা হয়।