তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার:=একে একে ৪ টি মামলায় জামিন পেয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগটনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে কক্সবাজারে পুলিশের হাতে আটক ‘মোষ্ট ওয়ানটেড রোহিঙ্গা জঙ্গি’ হাফেজ সালাউল ইসলাম অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন। আন্তর্জাতিক জঙ্গী কানেকশন সহ বিভিন্ন অভিযোগে আটক এই রোহিঙ্গা মাত্র দুই মাস আটক ছিলেন কারাগারে। কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোকতার আহমদ আটক আসামী সালাউলের একে একে ৩ টি মামলার জামিন আবেদন মঞ্জুর করার পর কক্সবাজার সদর মডেল থানার আরো একটি মামলায় (জিআর-১১৪/১৩) গত রবিবার তাকে শ্যোন এরেষ্ট দেখানো হয়। সর্বশেষ গতকাল কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট নিলুফার শিরিন কক্সবাজার সদর মডেল থানার জিআর-১১৪/১৩ ইং নম্বর মামলার জামিন মঞ্জুর করার পর সন্ধ্যায় তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার মোহাম্মদ জাবেদ।
এদিকে আটক রোহিঙ্গা জঙ্গী সালাউলের মুক্তি নিয়ে কক্সবাজারে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক এধরণের ভিনদেশী নাগরিকের এত তাড়াতাড়ি কারগার থেকে মুক্তি পেয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে নানা প্রতিক্রিয়া। রাষ্ট্র পক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মমতাজ আহমদ বলেছেন, পুলিশের দুর্বল প্রতিবেদনেই তার জামিনের বিষয়টি সহজ হয়ে পড়েছে। এমনকি গত ১২ মে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেনের দেয়া প্রতিবেদনেই বলা হয়েছিল ‘মামলা তদন্তকালে প্রাথমিক সাক্ষ্য প্রদানের ভিত্তিতে সন্ধিগ্ধ আসামী হিসাবে উক্ত আসামীর সম্পৃত্ততার বিষয়ে নিশ্চিত না হলেও-প্রাপ্ত তথ্যাদি যাচাই বাছাই অব্যাহত আছে।’ পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, একজন পুলিশ কর্মকর্তার এধরণের প্রতিবেদনই জঙ্গী সালাউলের জামিনে মুক্তির জন্য যথেষ্ট সহায়ক হয়ে পড়ে।
অপরদিকে পুলিশের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আটক রোহিঙ্গা জঙ্গীকে কারাগার থেকে মুক্ত করার জন্য স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতার অস্বাভাবিক চাপ ছিল বরাবরই। এমনকি তাকে গত ২১ মার্চ টেকনাফে আটকের পর থেকেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের আবদার ছিল তার বিরুদ্ধে কোন মামলা না দেয়ার জন্য। এমনকি সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক জামিনের পর থেকেই কতিপয় ক্ষমতাসীন দলের নেতা জেলা কারাগারে কয়েক মিনিট পর পর ফোন দিয়ে তাগিদ দেন তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। অত্যন্ত ষ্পর্শকাতর অভিযোগে আটক একজন ব্যক্তিকে কারাগার থেকে বের করার জন্য এরকম অস্বাভাবিক চাপাচাপিতে কারাগারের কর্মকর্তারাও হতবাক হয়ে পড়েছেন।
উল্লেখ্য যে, গত ২১ মার্চ কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মাদ্রাসার গোপন বৈঠক থেকে পুলিশ তাকে আটক করেছিল। হাফেজ সালাউল ইসলাম (৫০) নামের এই রোহিঙ্গা জঙ্গীকে পুলিশ আদালতে চালান দিয়েছিল গত ১৫ ফেব্র“য়ারি কক্সবাজার শহরে জামায়াত-শিবিরের সহিংস ঘটনায় তিনজনের প্রাণহানি সহ বিষ্ফোরক ও সন্ত্রাস দমন আইনে দায়েরকৃত তিনটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে। সেই সাথে জামায়াত-শিবিরের নাশকতায় অর্থ যোগান, রামুর বৌদ্ধ পল্লীর হামলা ও সহিংসতায় রোহিঙ্গা সরবরাহ, আন্তর্জাতিক জঙ্গী কানেকশন সহ আরো বিভিন্ন অভিযোগের কথাও পুলিশের ফরোয়ার্ডিংয়ে উল্লেখ করা হয়েছিল। তার মোবাইল ম্যাসেজে পাওয়া গিয়েছিল ‘সরকার পরিবর্তনের দোয়া’ সহ অনেক ষ্পর্শকাতর ক্ষুদে বার্তাও। তাকে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলেও নেওয়া হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। কিন্তু অসুস্থতার কারনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান কক্সবাজারের পুুলিশ সুপাার মোঃ আজাদ মিয়া। তিনি আরো জানান, হাফেজ সালাউল কক্সবাজারে অবস্থান করে জঙ্গী সংগটন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এর সামরিক শাখার সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।