রফিক উদ্দিন বাবুল… কুতুপালংয়ে সরকারি বনভূমি দখল করে ও ঝুঁপড়ি বেঁধে বসবাসরত প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা জীবন-জীবিকার তাগিদে অবাধ বিচরণ করছে এলাকায়। তারা জীবিকার প্রয়োজন মেটাতে কোন না কোন অনৈতিক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রমজানের শুরু থেকে এসব রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যে কারণে প্রতি রাতে গ্রামগঞ্জে চুরি-ডাকাতি, হাটবাজারে পকেটমার ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ অধিকাংশ ঘটনাকে নিচক চুরির ঘটনা উল্লেখ করে আদালতে চালান দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করতে দেখা গেছে। পাহারায় থাকা পুলিশের সদস্য অপ্রতুল হওয়ায় রোহিঙ্গা বস্তি সম্পূর্ণ অরক্ষিত বলে দাবি করছেন স্থানীয় গ্রামবাসী।
জানা গেছে, কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে বসবাসরত প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে সরকার অবৈধ ঘোষণা করে। এখান থেকে রোহিঙ্গারা তাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের লক্ষে ক্যাম্পে দায়িত্বরত পুলিশকে দৈনিক চাঁদা দিয়ে ভোরে বেরিয়ে পড়ে। ঁ ৭ম পৃষ্ঠার ৫ম কলাম
কিন্তু সন্ধ্যায় তারা ক্যাম্পে ফিরছে কি-না তা নিয়ে পুলিশের মাথাব্যথা নেই। রমজানকে সামনে রেখে বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে এসব রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয় গ্রামবাসী অভিযোগ করেন। তারা বলেন, বসতবাড়ির হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ও মূল্যবান মালামাল রোহিঙ্গারা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। কুতুপালং পশ্চিম পাড়া গ্রামের আফাছ উদ্দিন (৫০) বলেন, রোহিঙ্গা মহিলারা দিনের বেলায় কাজের অজুহাতে এসে বসতবাড়ির অবস্থান জেনে নিয়ে রাতে অভিনব কায়দায় চুরি সংঘটিত করে। এভাবে এ উপজেলার অধিকাংশ গ্রামগঞ্জে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঘটছে নিত্যদিন।
পশ্চিম হলদিয়া পালং গ্রামের এখলাছ মিয়া জানান, রোজার প্রথম দিনে সশস্ত্র রোহিঙ্গা ডাকাতরা দুইটি বসতবাড়িতে হানা দিয়ে মহিলাসহ ৪ জনকে আহত করে প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উখিয়া থানার এসআই আনোয়ার উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, ‘ডাকাতি না চুরি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ এর আগে একই গ্রামে ৪টি বসতবাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে ভুক্তভোগী গ্রামবাসী জানান। এ ছাড়াও রাজাপালং ইউনিয়নের হাঙ্গরঘোনা গ্রামের অমিয় বড়ুয়ার বসতবাড়ি থেকে চোরের দল লক্ষাধিক টাকার মালামাল অভিনব কায়দায় চুরি করে নিয়ে যায়। গত ২৬ জুলাই পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমান পাড়া ও ফারির বিল গ্রামে এক রাতে ৪ বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি সংঘটিত হয়েছে। ২৭ জুলাই জালিয়া পালং ইউনিয়নের মো. শফির বিল ও চোয়াংখালী গ্রামে ১০/১২ জনের সশস্ত্র ডাকাত দল হানা দিলে গ্রামবাসী মসজিদের মাইকে ডাকাত আসার খবর প্রচার করে দেয়। এ সময় শত শত গ্রামবাসী এগিয়ে এলে সশস্ত্র ডাকাতরা পালিয়ে যায়। প্রতি রাতে ডাকাতেরা ওই গ্রামগুলোতে ডাকাতির চেষ্টা করছে। এতে ডাকাত আতংকে গ্রামবাসী নির্ঘুম রাত যাপন করছে বলে জানান এলাকার লোকজন।
জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বললেন, ‘কাঠ চোরদের ডাকাত বলা হচ্ছে।’
কুতুপালং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা বখতিয়ার আহমদ অভিযোগ করে বলেন, কুতুপালং রেজিস্টার্ড শরণার্থী ক্যাম্পে প্রায় ১ ডজন অস্ত্রধারী ডাকাত রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে উখিয়া, রামু ও টেকনাফ থানায় একাধিক ডাকাতি মামলা রয়েছে। এসব ডাকাতরা ক্যাম্পে আত্মগোপন করে ঈদের পূর্ব মুহূর্তে সড়কে যানবাহন ডাকাতিসহ বসতবাড়িতে হানা দিতে পারে। তিনি বলেন, সীমিত সংখ্যক পুলিশ দিয়ে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণে রাখা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তাই এসব রোহিঙ্গারা রাতে বাসা-বাড়ির হাঁঁস-মুরগি, গৃহপালিত গরু-ছাগলসহ বসতবাড়ির নিত্যব্যবহার্য মালামাল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্যাম্প ইনচার্জ জালাল উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে খোলামেলা অবাধে চলাফেরা করতে না পারে সে ব্যাপারে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। এছাড়াও কোন চুরি-ডাকাতির ঘটনায় রোহিঙ্গা সম্পৃক্ত আছে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উখিয়া থানার ওসি অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, হলদিয়া পালং দুইটি বসতবাড়ি ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতি মামলা রুজু করা হয়েছে এবং রমজানে যাতে আইনশৃংখলার অবনতি না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে।
Leave a Reply