সেন্টমার্টিন ও কুতুবদিয়ায় বিলাসবহুল বাংলো নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি দেশের কুয়াকাটা, দুবলার চর, ভোলা এবং মনপুরা দ্বীপে ৪টি নতুন লাইট হাউজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়। এজন্য ‘গ্লোবাল মেরিটাইম ডিস্ট্রেস এন্ড সিগন্যাল সিস্টেমস (জিএমডিএসএস)’ নামে ৩৬২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দেবে কোরিয়া। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর সূত্রে একথা জানা গেছে।
অধিদপ্তর সূত্র জানায়, একশ ৬৬ বছর আগে তৈরি এসব লাইট হাউজে প্রতিদিনই নানা সমস্যা দেখা দেয়। এগুলো মেরামত বা সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশও সহজ লভ্য নয় বলে নতুন চারটি লাইট হাউজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাতে সমুদ্রে জাহাজ চলাচল নির্বিঘœ করতে ইংরেজ শাসনামলে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা নারিকেল জিঞ্জিরা, কক্সবাজার ও কুতুবদিয়া দ্বীপে তিনটি লাইট হাউজ তৈরি করা হয়েছিল। ১৮৪৬ সালে প্রথম তৈরি করা হয়েছিল কুতুবুদিয়া দ্বীপের লাইট হাউজ। এটির উচ্চতা ১২৮ ফুট। এটিতে প্রতি ১০ সেকেন্ড পরপর বাতি জ্বলে উঠে। যা রাতে অনেক দূর থেকেও দেখা যায়। সেন্টমার্টিন দ্বীপের লাইট হাউজটি ১২৮ ফুট উঁচু। প্রতি ৩০ সেকেন্ড পরপর বাতি জ্বলে। কক্সবাজারের লাইট হাউজটির উচ্চতা ১৭৭ ফুট। যেটির বাতি জ্বলে ওঠে প্রতি ১৫ সেকেন্ড পর পর। তবে বর্তমানে এগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ।
অথচ এই লাইট হাউজগুলোর মাধ্যমে কেবল বিদেশী জাহাজই নয়, অভ্যন্তরীণ জাহাজও রাতে চলাচল করে আসছে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এসব লাইট হাউজগুলো ঐতিহ্য ও কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এই খাতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের রাজস্বের পরিমাণ ১৫ কোটি টাকার মতো।
সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী একেএম ফখরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে। এ কারণে দেশের উপকূলীয় এলাকায় কোরীয় সরকারের সহায়তায় নতুন করে আরও ৪টি লাইট হাউজ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
কর্তৃপক্ষ জানায়, এ প্রকল্প পূর্ণ বাস্তবায়ন ও কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল সেন্টারের জন্য সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের নিজস্ব ভবনের প্রয়োজন। সাড়ে তিন একর জমি বরাদ্দ পেলে ভবন ও আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারে। জমি বরাদ্দ পেলে এ ভবনও তৈরি করে দেবে কোরিয়া। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৩৬২ কোটি টাকা।
শেল্টার হাউস কাম পরিদর্শন বাংলো নির্মাণ করা হবে। দেশের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন বা নারিকেল জিঞ্জিরা এবং কুতুবদিয়ার অধিবাসীদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিরাপদ রাখতে আশ্যয় কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি লাইট হাউস দুটি পরিদর্শনের জন্য দুটি ‘শেল্টার হাউস কাম পরিদর্শন বাংলো’ করবে মন্ত্রণালয়।
পনের কোটি টাকা ব্যয়ে এ দুটি পরিদর্শন বাংলো তৈরিতে ইতিমধ্যেই পরিকল্পনার কাজ শুরু করেছে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর।
সূত্র জানায়, সরকারিভাবে এ দুটি জায়গায় বসবাসের সুযোগ নাই। নাই কোনও অবকাশ যাপনের অবকাঠামোও। এ জন্য সেন্টমার্টিন ও কুতুবদিয়ায় আধুনিক সুবিধা সমৃদ্ধ বিলাসবহুল পরিদর্শন বাংলো তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নির্মাণ শেষে সরকারি ও সাধারণ পর্যটকদের কাছে এগুলো ভাড়াও দেওয়া হবে। তাতে এখান থেকে বড় আকারের রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা আছে। পাশাপাশি সরকারি সম্পত্তি বেদখলের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে স্থানীয়রা এখানে আশ্রয় নিতে পারবেন।
Leave a Reply