প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের উপরে যে সৌন্দর্য্য রয়েছে তার বহুগুণ বেশি মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য্য পড়ে রয়েছে সাগরে তলদেশে। একটু শ্রম আর সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলে স্রষ্টার সৃষ্টি লীলা স্ব-নয়নে উপভোগ করতে পারেন পর্যটকরা।
ডুবুরী ও পর্যটকদের বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, নীল সমুদ্রের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সমুদ্র সৈকতে দাঁড়ালে একেবারে নিচ অবধি দেখা যায়। আর সেখানেই বাস করে বর্ণিল এক ধরনের জীব। সূর্যের আলো ঠিকরে পড়লে আরও সুন্দর, আরও রহস্যময় হয়ে ওঠে এসব ‘সাগর রত্ন’। আমাদের এই পৃথিবী পৃষ্ঠে অহরহ ঘটে চলেছে নানা ঘটনা। তাদের নিয়েই ব্যস্ত আমরা। অথচ ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক নিচে, সাগর-মহাসাগরের তলায় যে একটা আশ্চর্য, রহস্যময় জগত আছে তার কথা আমরা যেন ভুলেই গেছি। এখানে মানুষ বসবাস না করলেও আছে বিচিত্র সব প্রাণী, হরেকরকম জীব। আর তাদেরই অন্যতম ‘কোরাল’ বা প্রবাল, যা এক ধরনের অমেরুদন্ডী প্রাণী।
আবদুর রহমান (৪১) নামে এক পর্যটক জানান, বিশ্বে যখন মানুষে মানুষে দ্বন্দ, মারামারি, হিংসা, তখন বর্ণিল এই প্রাণীগুলো শুধু সারাটা জীবন নয়, মরণের পরও সংঘবদ্ধ হিসেবে বাস করে। সমাজের একটা অংশ হিসেবেই থেকে যায়। তবে এখানেই শেষ নয়, মৃত কোরালের দেহ স্তুপাকারে জমা হয়ে নানা আকৃতির কাঠামো তৈরি করে। আমরা যাকে বলি ‘কোরাল রিফ’ বা প্রবাল দ্বীপ- জীবনে বেশ কয়েকবার সেন্টমার্টিনের তলদেশে ভ্রমণ করে তিনি এ অভিজ্ঞতার কথা বলেন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, কোরাল রিফ মৃত কোরালের একটি আকৃতি। যা ২২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা কোরাল রিফ গঠনে সবচেয়ে সহায়ক। আর সেন্টমার্টিনের সাগর তলদেশ কোরাল বা প্রবাল জন্মের জন্য অত্যন্ত উপযোগী স্থান।
সুত্র আরো জানায়, কোন পর্যটক যদি শুধু সৌন্দর্য্যই দেখে ফিরে যান-তাহলে বিরাট একটা জিনিস মিচ করবেন। কেননা উপরে সাগরের সুনীল জলরাশি আর নারিকেল গাছের ছায়ায় ঢাকা বিস্তীর্ণ সাদা বালুকাবেলার চেয়েও সুন্দর এক জগত পড়ে আছে পাশেই পানির তলে। কোরাল বা প্রবালের পাশাপাশি ছোট জীব; যা কি-না সাগরের তলদেশে তৈরি করে বিচিত্র বর্ণ ও ধরনের বাসা। সেন্টমার্টিনের আশপাশে সাগরের নিচে ডুব দিলে দেখা মেলে বিচিত্র এই কোরাল, নানা ধরনের মাছ ও শৈবালের। এছাড়া যতই গভীর যাওয়া হবে-ততই সৃষ্টির বিশাল উপমা চোখে পড়বে। পাহাড় সম বিশাল পাথর ও মৃত প্রবালের স্তুপ, গাছপালার মতো নতুন জীব। সব মিলিয়ে মনে হবে যেন আরো একটি দেশ রয়ে গেছে এখানে।
কিভাবে দেখা যাবে এ সৌন্দর্য্য : সাগরের নিচে দেখার জন্য চোখে পরতে হবে মাস্ক বা সাঁতারের চশমা, সবচেয়ে ভালো হয় স্নোরকল ব্যবহার করলে। স্নোরকল হচ্ছে চোখে দেওয়ার একটি মাস্ক ও নিশ্বাসের জন্য একটা ছোট্ট পাইপ দিয়ে তৈরি বস্তু, যা পরে অনেকক্ষণ পানিতে সাঁতার কাটা যায় নিশ্বাসের জন্য পানি থেকে মাথা না তুলেই। পানির নিচে দেখার জন্য ভালো ভাটার সময়, যেসব জায়গায় অনেক মৃত প্রবাল রয়েছে সেখানে হাঁটু পানি বা কোমর সমান পানিতে ডুব দিয়ে দেখতে পারেন। ছেঁড়াদ্বীপে পানি নেমে গেলে যেসব স্থানে বেসিনের মতো জমে থাকে পানি, কোস্ট গার্ডের অফিসের সামনে ও মরিন পার্কের উভয় পাশে কম পানিতে প্রবাল ও মাছ দেখা যায় ।
প্রবাল দ্বীপের সৌন্দর্য্য বর্ণনা করতে গিয়ে স্থানীয়রা আরো জানান, দ্বীপে ১০ ফিট নিচে গেলেই পান যোগ্য পানি পাওয়া যায়। তবে এ দ্বীপে সর্বোচ্চ ৩৮ ফিট পর্যন্ত গভীরে যাওয়া যায়। এর চেয়ে বেশি আর ছিদ্র করা যায় না। ৩৮ ফিটের নিচে বিশাল পাথরের মতো স্তর রয়েছে, যার কারণে আর সামনে যাওয়া যায় না। আর সমুদ্রের নির্দিষ্ট পরিমাণ গভীরে গেলে এ বিস্তর পাথরের গোপন রাজ্যটিও দেখতে পারেন পর্যটকসহ ডুবুরীরা।
Leave a Reply