জাতীয় নির্বাচনের এক বছর আগে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে এক হচ্ছেন দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া।
বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার পাশাপাশি দেশের রাজনীতিক, বিচারপতি, কূটনীতিক ও ঊর্ধ্বতন বেসামরিক কর্মকর্তারাও যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা বরাবর এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এলেও গত দুই বছর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যাননি বিএনপি চেয়ারপারসন।
সর্বশেষ ২০০৯ সালে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে যোগ দেন খালেদা জিয়া। সরকারের তৎপরতায় সেনানিবাসের বাড়ি হারানোর পর ২০১০ ও ২০১১ সালে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে যাননি তিনি।
খালেদা জিয়া এবার যাচ্ছেন কি না- জানতে চাইলে তার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে বিরোধীদলীয় নেতা যোগ দেবেন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত বিমান বাহিনী প্রধান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসের এই অনুষ্ঠানে থাকবেন বলে ডি-এইট সম্মেলনে যোগ দিতে পাকিস্তান সফর বাতিল করেন প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানও এই অনুষ্ঠানে থাকবেন।
দুই নেত্রীকে এক অনুষ্ঠানে সচরাচর দেখা না গেলেও দুই বছরের আগের সময়গুলোতে বরাবরই সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে এক হতেন তারা।
২০১০ সালে সর্বশেষ দুজনের একসঙ্গে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে দেখা হলে কুশল বিনিময়ও হয়।
মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী। স্বাধীনতার পর থেকে দিনটি সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
দিবসের কর্মসূচি
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
সশস্ত্র বাহিনীর পরিচালনাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
দেশের সব সেনানিবাস, নৌ-ঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমান ঘাঁটির মসজিদে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে বুধবার ফজর নামাজের পর বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে ফুল দেবেন। এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া, নৌ-বাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল জহির উদ্দিন আহমেদ এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে ফুল দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী বীর শ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্বাচিত খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা জানাবেন।
দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য ঢাকা সেনানিবাসের জাহাঙ্গীর গেইট থেকে স্টাফ রোড পর্যন্ত প্রধান সড়কে সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ১০টা এবং বেলা ১২টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সাধারণ যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।
এদিকে ঢাকা (সদরঘাট), নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালে বিশেষভাবে সজ্জিত নৌ-বাহিনী জাহাজগুলো বুধবার দুপুর ২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দেশের সব সেনানিবাস, নৌ ও বিমান ঘাঁটিতেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। যুদ্ধজয় ত্বরান্বি^ত করতে ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ সূচনা করে।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় সশস্ত্র বাহিনীর জীবন উৎসর্গকারী সদস্যসহ মুক্তিযুদ্ধের সব বীর শহীদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। বর্তমান সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply