মুহাম্মদ তাহের নঈম,টেকনাফ সাগর পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রাক্কালে ২৬ জনের মৃত্যু আর ৮২ জনের কারাবন্দির খবরে টেকনাফের কয়েকটি গ্রামে শোকের মাতম চলছে। তাদের আত্বীয়-স্বজনরা এখন শোকে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।আদরের সন্তানের জন্য মা-বাবা, ভালবাসার স্বামীর জন্য স্ত্রী, প্রিয় বাবার জন্য সন্তান আর ভাইয়ের জন্য ভাই চোখের জলে তারা বুক ভাসাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বেঁচে আছেন ভেবে আশায় বুক বাঁধেন আবার বন্দিদশা আর মারা যাওয়া কথা ভেবে ডুকরে কেঁদে উঠেন তারা। একটি দুটি নয়; টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কুতুবদিয়া পাড়া, উংছিপ্রাংসহ বিভিন্ন স্থানে ১৪টি পরিবারে চলছে কান্নার রোল। সম্প্রতি সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রাক্কালে ২৬ জনের মৃত্যু আর ৮২ জনের বন্দির খবরে তাদের স্বজনরা এখন দিশেহারা। বুধবার সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের গত ১০ মে ১০৮ জন আদম নিয়ে যে ট্রলারটি সমুদ্র পথ দিয়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমায়, সেই ট্রলারে অন্য যাত্রীদের মধ্যে ছিল টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কুতুবদিয়া পাড়ার আবদুশ শুক্কুরের পুত্র মোহাম্মদ হারুন (২৭), আবদুর রহিমের পুত্র আবছার উদ্দিন (২০), শামসুল আলমের পুত্র সরওয়ার (১৯), নুরুল আলমের পুত্র আবদুর রহিম (২০), আবদুস সবুরের আজিজুল হক (৩০), নুর আহমদের পুত্র মীর কাসেম (২০), আবু তালেবের পুত্র মোহাম্মদ রফিক (২৪), কবির আহমদের পুত্র মোহাম্মদ আনিছ (৩০), একই ইউনিয়নের উংছিপ্রাংয়ের আবদুর রহমানের পুত্র শাহ আলম (২৫), রইক্যং এর কালা মিয়ার পুত্র আবু ছিদ্দিক (৩০) ও আমির হামজার পুত্র আবদুল করিম (৩০), উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের মোহাম্মদ বশিরের পুত্র ফুতু ও শফিকুর রহমানের পুত্র এবাদুল্লাহ। এছাড়া চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শেকের বিল ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বাদশাহ মিয়ার পুত্র আবদু জব্বার ও আবুল বশরের পুত্র আনোয়ারুল ইসলাম।
গতকাল দুপুরে সরেজমিনে উক্ত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সব কটা পরিবারই নিন্ম আয়ের। যারা দিনে আনে দিনে খায়। যারা মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়েছেন-তাদের মধ্যে অনেকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। একজন এক মায়ের এক সন্তান।
শামসুল আলম নামে এক পিতা জানান, টেকনাফের মুছা নামে এক দালাল স্বল্প খরচে মোটা অংকের বেতনের চাকরীর আশা দিয়ে ছেলেদের মালয়েশিয়া যেতে উদ্ধুদ্ধ করে। অনেকের পিতা-মাতা রাজি হওয়ায় দালাল কৌশলে ছেলেদের লোভে ফেলে মালয়েশিয়া যেতে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে। এক পর্যায়ে অনেকে পরিবারের কাউকে না বলে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
অভিভাবকরা জানান, একজনকে মালয়েশিয়া নিতে দেড় লাখ থেকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ হয়। প্রথমে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করবে। পরে তারা মালয়েশিয়া পৌঁছালে ওই দালালদেরকে বাকি টাকা পরিশোধ করবে তাদের অভিভাবকরা। তবে সমুদ্র পথে নয় তাদেরকে বিমানে করে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে টাকা নেয় দালালরা।
আবদুর রহিম নামে এক অভিভাবক জানান, তারা টাকা দিয়েছেন মুছা দালালকে। মুছা ওই টাকা ও যুবকদের সাবরাংয়ের ভুট্টো, শাহেদ ও ফারুক দালালের হাতে তুলে দেন। ঘর থেকে বের হওয়ার পর তারা আর সন্তানের কোন খবর পাননি।
তবে দালাল মুছা কেবল ৩ জন যুবক থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেয়া এবং ওই দালালদের হাতে তুলে দেয়ার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু অন্যদের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবী করেন। হোয়াইক্যং ইউনয়নের সাবেক মেম্বার আবুল বাচেত আমার দেশকে জানান,অত্র এলাকায় মালয়েশিয়া আদম পাচারের একটি শক্ত সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছে। তাদের মালয়েশিয়া,থাইল্যান্ড,ঢাকা ভিত্তিক একটি দালাল চক্র রয়েছে। উক্ত চক্র শাহপরীদ্বীপ,টেকনাফ,কক্সবাজার ও চট্রগ্রামে জাহাজ আছে মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করে আদম সংগ্রহ করে থাকে। সংগ্রহকৃত এইসব আদম তাদের লোভে পড়ে সাগরে গিয়ে মাছের খোরাক হয়। এইসব দালালদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করেছে এলাকা বাসী। তাদের প্রশ্ন দালালদের খপ্পরে পড়ে সাগরে আর কত প্রান যাবে ?
Leave a Reply