‘ওয়াটার, ওয়াটার এভরিহোয়্যার, নর এনি ড্রপ টু ড্রিংক’—ইংলিশ লেখক স্যামুয়েল টেলরের বিখ্যাত ‘দ্য রাইম অব দ্য এনশিয়েন্ট ম্যারিনার’ কবিতার বিখ্যাত লাইন এটি। সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া নাবিকদের নৌকার চারপাশে এত পানি, অথচ সেই পানির অভাবেই মরতে হয়েছিল তাদের। কেননা সাগরের লবণাক্ত পানি তো আর পান করা যায় না। কিন্তু দিন এমন আসছে যে, সমুদ্রের এ লবণাক্ত পানিকেই এখন পানের যোগ্য করে তুলতে হবে। তা না হলে পানির অভাবে কবিতার ওই নাবিকদের মতোই প্রাণ হারাতে হতে পারে বিশ্বের অনেককে।
লোনা পানিকে পানযোগ্য করার বর্তমান উপায়ের নাম হলো ‘রিভার্স অসমোসিস’। কিন্তু এতে প্রচুর জ্বালানি খরচ হয় এবং এটা বেশ ব্যয়বহুলও। তাই বিকল্প উপায় নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এদের মধ্যে রয়েছেন জার্মানির ‘রুয়র-ইউনিভার্সিটি বোখুম’-এর একদল বিজ্ঞানী। যার নেতৃত্বে রয়েছেন ফাবিও লা মান্টিয়া। তাদের পদ্ধতির নাম ‘ডিস্যালিনেশন ব্যাটারি’ অর্থাত্ বিলবণীকরণ ব্যাটারি।
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, একটা ব্যাটারি যেভাবে কাজ করে, ঠিক সেই উপায়েই পানি থেকে লবণকে পৃথক করে তাদের পদ্ধতিটি। মান্টিয়া বলেন, সাগরের পানিতে রয়েছে সোডিয়াম আর ক্লোরাইড। এর মধ্যে সোডিয়াম পজিটিভ আর ক্লোরাইড নেগেটিভ চার্জযুক্ত। তিনি বলেন, আমরা বিদ্যুত্ প্রয়োগ করি এবং এ বিদ্যুত্ই পানি থেকে লবণ দূর করে।
মান্টিয়ার দলে কাজ করেন আলবার্তো বাতিস্তি। তিনি বোখুম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট করছেন। মান্টিয়া আর বাতিস্তির কাজ বর্তমানে একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তারা এক মিলিলিটারের পাঁচভাগের এক ভাগ সমপরিমাণ পানি লবণমুক্ত করার চেষ্টা করছেন।
ডিডব্লিউর প্রতিনিধি যখন তাদের পরীক্ষাগারে গিয়ে উপস্থিত হন তখন তারা কাজ করছিলেন। এ সময় বাতিস্তি বলেন, আমরা প্রথমে সমুদ্রের পানি থেকে ২৫ ভাগ সোডিয়াম ক্লোরাইড দূর করার চেষ্টা করছি। সেজন্য আমি জানি, আমাকে ৪০ মিনিট ধরে পরীক্ষাটা চালাতে হবে।
তবে লোনা পানিকে পানযোগ্য করতে মান্টিয়া আর বাতিস্তিকে ২৫ নয়, ৯৮ ভাগ সোডিয়াম ক্লোরাইড দূর করতে হবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় উপাদান পাওয়া যাচ্ছে না বলে সেটা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান মান্টিয়া। তবে তিনি বলেন, আমাদের এসব উপাদান উন্নত করতে হবে এবং আমরা তা করছি। আমাদের সংখ্যাটা ২৫ থেকে ৯৮-তে নিয়ে যেতে হবে।
মান্টিয়া বলেন, আমরা যে প্রক্রিয়া বের করার চেষ্টা করছি, তা দিয়ে অতিলবণাক্ত পানি পানযোগ্য করা সম্ভব। রিভার্স অসমোসিসের মাধ্যমে যেটা সম্ভব নয়। তবে আমরা আমাদের পদ্ধতিতে ৯০ ভাগ পর্যন্ত সোডিয়াম ক্লোরাইড দূর করতে চাই। বাকি আট ভাগ করব রিভার্স অসমোসিস প্রক্রিয়ায়।
মান্টিয়া এখন পর্যন্ত তার গবেষণাকাজ নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। তবে ছোটখাটো যে সমস্যা হচ্ছে, অচিরেই তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি। মান্টিয়া বলেন, ভবিষ্যতে যদি উন্নত ইলেক্ট্রড পাওয়া যায়, তাহলে তাদের পদ্ধতি ব্যবহার করে কম খরচে অনেক বেশি পরিমাণ পানি শোধন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রযুক্তির বয়স মাত্র এক বছর। অন্যদিকে রিভার্স অসমোসিস ব্যবহৃত হচ্ছে ৪০ বছর ধরে। এতে এখনই আমাদের প্রযুক্তিটাকে রিভার্স অসমোসিসের সঙ্গে তুলনা করাটা বয়স্ক একজনের সঙ্গে একটা শিশুর তুলনা করার মতো হবে। নিজেদের গবেষণার চূড়ান্ত সফলতার জন্য আরও সময় চেয়েছেন মান্টিয়া ও তার দল। সূত্র : ডিডব্লিউ
Leave a Reply