শাহপরীরদ্বীপ বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত.. মসজিদসহ ভিটেবাড়ি সাগরে বিলীন
শনিবার ০৭ জুলাই, ২০১২ ১:০৪ অপরাহ্ন
147 বার এই নিউজটি পড়া হয়েছে
হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ : সাগরের প্রচন্ড ঢেউয়ে শাহপরীরদ্বীপ বেড়ীবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে পশ্চিম পাড়ার জামে মসজিদসহ ১০টি ভিটে-বাড়ি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। একদিকে উত্তাল সাগরের ঢেউ অন্যদিকে পূর্ণিমার ‘জো’তে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদ ও ভিটে-বাড়িগুলো সম্পূর্ণভাবে রাক্ষুসে সাগর গ্রাস করেছে।সাগরে বিলীন হওয়া ভিটে-বাড়িগুলোর মালিক হচ্ছে- শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিম পাড়ার- বর্তমান মেম্বার নুরম্নল আমিন, মো. আমিন, বনি আমিন, ইসমাইল, মুবিন, জিয়াবুল, ইসলাম, কবির আহমদ, আবদুল গফুর, ফেরদৌস। এছাড়া একটি জামে মসজিদও সাগরের বিলীন হয়ে গেছে। ৪ জুলাই একদল সংবাদকর্মী সরেজমিন পরিদর্শনে যায়। বেড়ি বাঁধের ভাঙ্গা একটি অংশ দিয়ে পানি ঢুকে প্রায় ১ কি. মি. বাঁধটি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে সাগরের সাথে মিশে গেছে। এছাড়া সাগরের জোয়ারের পানিতে শাহপরীরদ্বীপ দক্ষিণ পাড়া, মিস্ত্রীপাড়া, জালিয়া পাড়া এবং ঘুলার চরের শতশত পরিবার পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত, অমাবশ্যার ‘জো’ এবং অবিরাম বর্ষণে টেকনাফের উপকূলীয় জনপদ ব্যাপক ভাবে পস্নাবিত হয়েছে এবং জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শতশত পরিবার সাগর ও নাফ নদীর লবণাক্ত পানিতে নিমজ্জিত এবং পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। এদিকে ৪ জুলাই দুপুরে উখিয়া-টেকনাফে সাংসদ আবদুর রহমান বদি সরেজমিন বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ ও ক্ষতিগ্রসত্ম এলাকা পরিদর্শন করেছেন। শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিম পাড়ায় সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়া ভিটে বাড়ির এক মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- বর্ষা আসলেই তড়িঘড়ি করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ আরম্ভ করে। ঢিলেঢালা বেড়িবাঁধ নির্মাণ অসম্পূর্ণ ও টেকসই না হওয়াতে বেড়িবাঁধ বাঁধতে না বাঁধতেই বিধ্বস্ত হয়ে বার বার জোয়ারের পানি ঢুকে এলাকা পস্নাবিত হচেছ এবং বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে ভিটে-বাড়ি সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। অপরদিকে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি হয়ে বাঁধ ও চিংড়ি ঘের ডুবে যাওয়ায় উপকূলীয় এলাকার চিংড়ি ও মৎস্য প্রকল্পসমূহ থেকে কোটি কোটি টাকা মূল্যের চিংড়ি এবং বিভিন্ন জাতের মাছ ভেসে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৬৮ নং ফোল্ডারের কয়েকটি অংশ বিশেষতঃ শাহপরীরদ্বীপ এলাকায় নির্মাণাধীন এবং নবনির্মিত ও সংস্কারকৃত বাঁধে কাজে ব্যাপক অনিয়ম-কারচুপির দরম্নণ কাজ শেষ হতে না হতেই ব্যাপক আকারে ভাঙ্গন ও বিধ্বস্ত হয়ে ভিটে-বাড়ি সাগরে তলিয়ে গেছে। বর্ষার শুরম্নতেই বেড়িবাঁধের এই ব্যাপক ও ভয়াবহ ভাঙ্গনে উপকূলীয় এলাকার লক্ষাধিক বাসিন্দা চরমভাবে শংকিত হয়ে পড়েছে। সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান- জরম্নরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ২০ কেজি করে ১ হাজার পরিবারকে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধের ব্যাপারে এখনো কোন পরিকল্পনা হয়নি। প্রসঙ্গত- শাহপরীরদ্বীপের ইতিহাস ঐতিহ্য অনেক পুরনো। এক সময়ে শাহপরীরদ্বীপের বদর মোকাম প্রসিদ্ধ বাণিজ্যক স্থান ছিল। ঐতিহাসিক বিভিন্ন গ্রন্থে শাহপরীরদ্বীপের উলেস্নখ দেখা যায়। তাছাড়া শাহপরীরদ্বীপে ছিল প্রখ্যাত ওলি আওলিয়া এবং বিখ্যাত আলেমগণের আবাসস্থল। এমনকি শাহ সুজা এই শাহপরীরদ্বীপে স্ব-স্ত্রীক এসেছিলেন বলে বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থে বর্ণনা রয়েছে। এমনই একটি ঐতিহাসিকভাবে গুরম্নত্বপূর্ণ বাংলাদেশ ভূ-খন্ডের সর্বদক্ষিণ জনপদ শাহপরীরদ্বীপ মাত্র একটি বেড়িবাঁধের অভাবে সাগরগর্ভে বিলীন হতে চলেছে। ইতোমধ্যেই ঐতিহাসিক বদর মোকাম সাগর গর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। বাকি ভূখন্ড যা আছে তাও ভয়াবহ হুমকিতে এবং বিলীন হচ্ছে। দেশের এমন একটি ঐতিহাসিক জনপদকে রক্ষা করতে যত দ্রম্নত সম্ভব জরম্নরি ভিত্তিতে টেকসই শাহপরীরদ্বীপ রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। এদিকে অসহায় শতশত পরিবার অপেক্ষার প্রহর গুণছে বর্তমান সরকার মহা-পরিকল্পনা গ্রহণ করে দ্রম্নত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে হাজার হাজার মানুষকে উদ্ধাস্ত্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে এ আশায়।