হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ …বেড়ীবাঁধ বিধ্বস্থ হয়ে যাওয়ার পর এবার ভাঙ্গছে শাহপরীরদ্বীপের জনপদ। ভাঙ্গণে গ্রামের পর গ্রাম সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। শাহপরীরদ্বীপ বেড়ীবাঁধের ভয়াবহ ভাঙ্গণ রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরী মেরামতের উদ্যোগও ভেস্তে গিয়েছে। ঝড়ো হওয়ায় উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙ্গণে বালিভর্তি বস্তাগুলোসহই সাগরে তলিয়ে গিয়েছে। ‘পূর্ণিমার যো’ এর সাথে বেড়ীবাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে সাগরের পানি ঢুকে পুরো শাহপরীরদ্বীপ প্লাবিত হয়েছে। ভয়াবহ রুপ নিয়েছে ভাঙ্গণ। যেন উম্মত্ত সাগর গিয়ে খাচ্ছে শাহপরীরদ্বীপকে। শাহপরীরদ্বীপের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ ও আতংকে রয়েছে। ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে সাগরের জোয়ার- ভাটায় লবণাক্ত পানি চলাচল করা এবং জলমগ্ন থাকায় শাহপরীরদ্বীপের কয়েক হাজার একর জমিতে বর্তমানে রোপ আমনের মৌসুমে চাষাবাদ করা শুধু অনিশ্চিত নয়, প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বেড়ীবাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে সাগরের পানি ঢুকে সাবরাং এর হারিয়াখালী থেকে শাহপরীরদ্বীপ উত্তরপাড়া পর্যন্ত মানুষ যাতায়ত ও নিজ প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহণ করছে নৌযান দিয়ে। একদিকে ভয়াবহ ভাঙ্গণ অন্যদিকে শাহপরীরদ্বীপের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় শাহপরীরদ্বীপের ৩০ হাজার বাসিন্দাদের জীবন যাত্রা দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিম অংশে প্রতি মূহুর্তেই ভাঙ্গছে জনপদ। শাহপরীরদ্বীপ রক্ষাকারী বেড়ীবাঁধ বিধ্বস্থ তো হয়েছে অনেক আগেই, এখন প্রতিদিনই সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ী, বাস্তভিটা, সৃজিত বাগান ও ফসলের জমি। সরেজমিন পরিদর্শনকালে বাস্ত বসতভিটা হারা মানুষ সপরিবারে ঘরের মালামাল নিয়ে অন্যত্র পাড়ি জমাতে দেখা গেছে। জোয়ারের সময় হারিয়াখালী থেকে শাহপরীরদ্বীপ উত্তর মাথা পর্যন্ত এবং কাটাবনিয়া থেকে পূর্বে শাহপরীরদ্বীপ জালিয়াপাড়া পর্যন্ত ওদিকে সাবরাং নয়াপাড়াসহ সাগরের পানিতে একাকার হয়ে যায়। ভাটার সময় সামান্য পানি কমে মাত্র। এভাবে চলছে ২১ জুলাই থেকে। প্রায় ৩ কিলোমিটার স্থান পায়ে হেঁটে নৌকায় করে পাড়ি দিতে গিয়ে অহরহ দুঘর্টনা ঘটেছে। বিশেষতঃ বৃদ্ধ, রুগ্ন ব্যক্তি এবং নারী ও শিশুদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। ভাঙ্গণে গৃহহারা, ভিটেহারা, জমিহারা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এসব অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেনা কেউ। যেন এদের বুক ফাটা আর্তনাদ শোনার জন্য কেউ নেই। কেউ কেউ শান্তনার বানী শুনিয়ে গেলেও দুর্গত এসব পরিবার এখনও সরকারী জরুরী ত্রাণ পর্যন্ত পায়নি। মোট কথা বেড়ী বাঁধের অব্যাহত ভাঙ্গণে শাহপরীরদ্বীপে এই পবিত্র রমজান মাসে যে দুর্বিসহ দুঃখ- দুর্দশা ও দুর্ভোগ স্বচক্ষে না দেখলে লিখে ভাষায় বর্ণণা করা কঠিন। শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিম অংশে ছিল ছিমছাম ছবির মতো সুন্দর গ্রাম। জামে মসজিদ, মক্তব, বসতবাড়ী, ফলজ বনজ বিভিন্ন প্রজাতির বাগান, ফলবান বৃক্ষরাজি, ফসলের জমি, গৃহস্থের গোশালা, বাস্তভিটা- তা এখন শুধুই কল্পনা। সেখানে বর্তমানে ফুটছে সাগরের ঢেউ। অনেক পরিবারে চুলোয় আগুন জ্বলছেনা সপ্তাহর পর সপ্তাহ ধরে। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে এদের। এখন পবিত্র মাহে রমজান চলছে। অনেকেরই প্রাকৃতিক দুর্ভোগের কবলে পড়ে রোজা রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। আর ক’দিন পরেই ঈদুল ফিৎর। সব হারা এসব পরিবারে ঈদ কিভাবে কাটবে এনিয়ে তারা নির্বাক। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়- ভয়াবহ ভাঙ্গণ রোধে বালিভর্তি বস্তা ফেলতে উদ্যোগ নিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রায় হাজার খানেক বস্তা ও ভরা হয়েছিল। কিন্তু তা যথাস্থানে ফেলার আগেই ভাঙ্গণে বস্তাসহ সাগরে তলিয়ে গিয়েছে। ##
Leave a Reply