শনিবার ১৬ জুন, ২০১২ ৫:০৮ অপরাহ্ন
213 বার এই নিউজটি পড়া হয়েছে
পৃথিবীতে এমন সময় ছিল যখন মানবজাতি পৃথিবীর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অবাধে চলাচল করতে পারত। এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে যেতে বাধা দিত না, কোনো রকম সীমারেখা তাদের বাধাগ্রস্ত করতে পারত না। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠী নিজেদের দেশ গঠন করতে লাগল। মানুষ সব দলমত-নির্বিশেষে নিজেদের ঐতিহ্য, সভ্যতা, কৃষ্টি, দর্শন ও ধর্ম পালন করে তাদের দ্বারা গঠিত নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে শান্তি রক্ষা করার জন্য একটি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা স্থাপন করে। তাদের কল্যাণ ও শান্তি এবং সুশাসন রক্ষার জন্য একটি সরকারও গঠন করে এবং রাষ্ট্রীয় সীমা নির্ধারণ করে। সীমানা রক্ষার জন্য নিজ নিজ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলে রাষ্ট্রের জনগণ অন্য রাষ্ট্র থেকে এসে আশ্রয় গ্রহণ করলে একটি অতিরিক্ত বোঝার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের শরণার্থী (refugee) হিসেবে আসা মানুষকে প্রবেশ দানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শরণার্থী এবং আশ্রয় পাওয়ার জন্য তাদের নিজ দেশ ত্যাগ করে অন্য দেশে আশ্রয় গ্রহণ করে, যার সংখ্যা ছিল অনেক কম। কালক্রমে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবকাঠামোগত কারণে ইউরোপে এবং ইউরোপের বাইরে এক বিরাট পরিবর্তন আসে। শতাব্দীর পুরনো Russian Federation-এর বিপ্লব ও অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙে শুরু হয় তুর্কি রাজত্ব। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্যাপকহারে এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে শরণার্থী আসতে থাকে। তারা বেশির ভাগই আর্মেনিয়ান, যাদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখেরও বেশি। পরবর্তীকালে জার্মানি, ইতালি এবং স্পেনে দাঙ্গা সৃষ্টি হলে বিপুলসংখ্যক শরণার্থী অন্য রাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়। তারা নিজ দেশে নানা উৎপীড়নের জন্য যেতে চায় না। শরণার্থীদের নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়। কিভাবে তাদের পরিচয়পত্র, ভ্রমণ দলিল দেওয়া যাবে, কিভাবে তাদের সম্পত্তির ওপর যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে এবং দখল ও স্বত্বচ্যুতি করা হয়েছে, সে সম্পত্তি বা বাড়ি কিভাবে ফেরত পাবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। এসব মৌলিক সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে একটি ঐকমত্যে পেঁৗছায়। এই ঐকমত্যের ভিত্তিতে ৫ জুলাই ১৯২২, ৩১ মে ১৯২৪, ১২ মে ১৯২৩ এবং ৩০ জুন ১৯২৮ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আর্মেনিয়ান শরণার্থীদের জন্য শরণার্থী হিসেবে পরিচয়পত্র প্রদান ও ভ্রমণ দলিলের চুক্তি করা হয়। এভাবে ৩০ জুলাই ১৯৩৫ এবং ৪ জুলাই ১৯৩৬ সালে জার্মানি থেকে আগত শরণার্থীদের জন্য তাদের জাতীয়তা নির্ধারণ এবং সে আবাসভূমি নির্ধারণ, যাতে তারা বঞ্চিত হয়েছিল। শরণার্থীদের নিজ দেশে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশ ত্যাগ করতে কেন বাধ্য হয়েছিল, তা নির্ণয়ের জন্য ঐকমত্যে পেঁৗছাতে পেরেছিল। পরে তারা সবাই লীগ অব ন্যাশন্সে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পর শরণার্থী সমস্যা যখন অনেক বৃদ্ধি পেতে লাগল, তখন আবার কোনো কোনো রাষ্ট্র ধারণা করেছিল যে শরণার্থী সমস্যা বৃদ্ধ পেলেও রাষ্ট্রের জন্য সমস্যা হবে না। কিন্তু শরণার্থী সমস্যা যখন আরো প্রকট আকার ধারণ করতে লাগল, তখন থেকে শরণার্থীদের আইনগত স্ট্যাটাস নির্ধারণের জন্য রাষ্ট্রগুলো নতুন আন্তর্জাতিক দলিল করার প্রয়োজন বলে মনে করে, যা পরবর্তী সময়ে ১৯৪৮ সালের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা (UDHR) এবং ১৯৪৯ সালে চারটি জেনেভা কনভেনশন ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আঞ্চলিক চুক্তি ও ঘোষণা এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। (UDHR) অনুচ্ছেদ ১৪(১)-এ বলা আছে, ‘প্রত্যেকেরই নিগ্রহ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অন্য দেশে আশ্রয় প্রার্থনা ও তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’ শরণার্থীবিষয়ক মূল আইন হলো শরণার্থীর মর্যাদাবিষয়ক কনভেনশন (Convention) ১৯৫১ এবং Refugee Protocol অনুযায়ী শরণার্থী সেই ব্যক্তি; যিনি জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম, বর্ণ, জাতীয়তা, নির্দিষ্ট সামাজিক সংগঠনের সদস্যপদ বা রাজনৈতিক মতাদর্শ নিজ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এবং নিজ দেশের নিরাপত্তা পেতে যিনি অপারগ অথবা অনিচ্ছুক বা নিগ্রহে ভীতির কারণে সেখানে ফেরত যেতে চান না। শরণার্থী রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ অধিকার ১৯৪৮ সালের (UDHR) ঘোষণার মূল অধিকারগুলো ছিল :
* ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার।
* আশ্রয় প্রার্থনা ও পাওয়ার অধিকার।
* অত্যাচার অথবা নিষ্ঠুরতা, অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর ব্যবহার বা শাস্তি থেকে মুক্তি।
* দাসত্ব বা দাসত্ববন্ধন থেকে মুক্তি।
* আইনের সামনে একজন ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি।
* চিন্তা, চেতনা ও ধর্ম পালনের স্বাধীনতা।
* অবৈধ গ্রেপ্তার ও আটকাবস্থা থেকে মুক্তি।
* ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন এবং বাড়িতে অবৈধ অনুপ্রবেশ থেকে মুক্তি।
* মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা।
* শিক্ষা পাওয়ার অধিকার।
* সমাজের সাংস্কৃতিক জীবনে অংশগ্রহণের অধিকার।
কোনো সদস্য রাষ্ট্র কোনো শরণার্থীকে বহিষ্কার কিংবা এমন কোনো সীমান্ত বা ভূখণ্ডে ফেরত পাঠাবে না, যেখানে তার জীবন বা স্বাধীনতা তার বর্ণ, ধর্ম, জাতীয়তা, কোনো নির্দিষ্ট সামাজিক সংগঠনের সদস্যপদ বা রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে হুমকির সম্মুখীন হয়_অনুচ্ছেদ ৩৩(১)
এই কনভেনশনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দলিল ছিল আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইন। যিনি একজন শরণার্থী তার সম্পূর্ণ বিবরণসহ এবং উল্লেখ্য নূ্যনতম অধিকারবঞ্চিত ব্যক্তিদের চিকিৎসা করা হবে, যাদের দেখা যাবে তারা এরূপ পর্যায়ে রয়েছেন। এ ব্যাখ্যা ওই সব ব্যক্তির ওপর প্রয়োগ হবে, যারা নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে অবস্থান করছেন এবং শরণার্থী হয়েছে ১ জানুয়ারি ১৯৫১ সালের আগ পর্যন্ত। পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে এবং ষাটের দশকের প্রথম দিকে নতুন অবস্থার প্রয়োজন হওয়ায় একটি অস্থায়ী এবং ভৌগোলিক সীমার মধ্যে সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছিল। এটা বিস্তৃতভাবে বিভিন্ন সরকার স্বীকৃতি প্রদান করেছিল এবং একটি সুষ্ঠু নীতির মধ্যে সম্মেলন শেষ হয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিবেচনার পর ১৯৬৭ সালের ৩১ জানুয়ারি তা সমর্থন লাভের জন্য পাঠায় এবং ১৯৬৭ সালের ৪ অক্টোবর তা গৃহীত হয় এবং ১৯৬৭ সালের খসড়া চুক্তি আন্তর্জাতিক শরণার্থী ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হিসেবে জাতিসংঘে সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলো অনুচ্ছেদ ২ থেকে ৩৫ পর্যন্ত সম্মেলনে অনুমোদিত ধারাগুলো সব শরণার্থীর ওপর প্রযোজ্য হবে, যারা শরণার্থী হয়েছে। সম্মেলনে খসড়া দলিল নথিপত্র আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত হয়েছে, তাদের জন্য যারা নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় (asylum) নিতে বাধ্য হয়েছে, যেখানে তাদের মানবিক অধিকার, মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা কিংবা স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শরণার্থীর জন্য জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার অফিস (UNHCR) ১ জানুয়ারি ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তদনুসারে এ অফিস শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের (UN) অধীনে আন্তর্জাতিকভাবে নিরাপত্তা প্রদান করবে। ওই সব ব্যক্তি জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (UNHCR) অধীনে বিচারের জন্য আসবে, তাদের জন্য সাহায্য প্রদান করা হবে। ১৯৫১ সালের কনভেনশন (Convention) এবং ১৯৬৭ সালের Protocol-এর মাধ্যমে যদিও পরিচয়পত্র নির্ধারণ করা হয়নি, এ ব্যাখ্যার মাধ্যমে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (UNHCR) শরণার্থীদের জন্য যেকোনো সীমানায় বা ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে থাকলে তাদের ওপর প্রযোজ্য হবে। ১৯৫১ সালের কনভেনশন এবং ১৯৬৭ সালের Protocol-এর মাধ্যমে তার প্রত্যাবর্তন দেশে একজন শরণার্থী refugee হিসেবে বিবেচিত হবেন।
শরণার্থী (Convention) এবং ১৯৬৭ সালের (Protocol) তিন ধরনের বিধান রয়েছে।
১৯৫১ সালের কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ৩৫ এবং ১৯৬৭ সালের (Protocol) ২ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, একটি অঙ্গীকারনামা দ্বারা যেখানে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার করে শরণার্থীদের জন্য কার্যক্রম এবং তাদের দরখাস্ত তত্ত্বাবধানের নিমিত্তে সুবিধা প্রদান করে দলিল ও নথিপত্রগুলোতে শর্তাবলি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ১৯৫১ সালের কনভেনশনে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যিনি একজন শরণার্থী হবে তার তিনটি গুণাবলি থাকবে। ‘অন্তর্ভুক্তকরণ’ ‘রহিতকরণ’ এবং ‘বর্জন’_এগুলো যাঁদের ওপর ন্যস্ত তাঁরা খুব সচেতনভাবে এগুলো সংরক্ষণ করবেন। রাষ্ট্রের প্রথম দায়িত্ব হবে শরণার্থীদের কনভেনশন এবং প্রটোকল অনুযায়ী নিরাপত্তা প্রদান করা। আন্তর্জাতিক আইনের সাধারণ নীতি হিসেবে প্রত্যেক চুক্তিভুক্ত পক্ষদ্বয়ের ওপর অর্পিত হবে এবং এটা আন্তরিকভাব প্রয়োগ করতে হবে। ১৯৫১ সালের কনভেনশন এবং ১৯৬৭ সালের প্রটোকল অনুসারে রাষ্ট্রগুলোকে তাদের নিজ দেশে বসবাসরত শরণার্থীদের অধিকারসংক্রান্ত সব দলিলপত্র প্রদান করা হয়েছে।
কনভেনশনে অনুচ্ছেদ ৩৫ এবং প্রটোকল অনুচ্ছেদ-২-এ উল্লেখ আছে, একটি অঙ্গীকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্বয়কে UN শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, যেখানে এর কার্যাবলি এবং তত্ত্বাবধানের জন্য শর্তাবলি বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। কনভেনশন এবং প্রটোকলে দলিল সর্বাধিক ন্যায়সঙ্গত, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনগত স্ট্যাটাস শরণার্থীদের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিজের অধিকার থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক শরণার্থী জনগোষ্ঠী। আবার পেছনের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৯৪৭ সাল থেকে মানব ইতিহাসে অনেক জঘন্যতম ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যার সমাধান এখনো পাওয়া যায়নি। তখনকার সময়ে ৩৫ থেকে ৪০ লক্ষাধিক মানুষ উপমহাদেশের সীমান্তের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। পাশের রাষ্ট্র ভারত তাদের আশ্রয়ের দুয়ার শ্রীলঙ্কান, তিব্বতিয়ান, আফগানসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা মানুষের জন্য খুলে দিয়েছিল। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে এবং ইতিহাসের জঘন্যতম genocide থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রায় এক কোটি মানুষ পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগমন করে। পাকিস্তানে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ১০ লাখেরও অধিক জনগোষ্ঠী ভারতে শরণার্থী হিসেবে প্রবেশ করে এবং হাজার হাজার মানুষ এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও দেশীয় রাজাকার-আলবদরদের বর্বর নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। তখন পাকিস্তানি হানাদারদের আক্রমণ ও দেশীয় রাজাকার-আলবদরদের নির্যাতন বর্বরতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ৯ লাখ ৫০ হাজার অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতি (Internal displaced Persons) হয়েছিল। মিয়ানমার থেকে আগত বাংলাদেশ রোহিঙ্গা Burmese Rohingyas এবং IDPS মানবেতর জীবন যাপন করছে। দেশের অভ্যন্তরে আটকে পড়া পাকিস্তানি প্রায় দুই লাখ বিহারি জনগোষ্ঠী ৬৬টি ক্যাম্পে দিনযাপন করলে পার্বত্যাঞ্চলে শরণার্থী রয়েছে অনেক।
এক তথ্যে জানা যায়, সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংখ্যা এক লাখেরও বেশি, আবার বেসরকারি হিসাবে বাংলাদেশে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে। এর মধ্যে তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে ভোটার হয়েছে বলে তথ্যে জানা যায় এবং দুই লাখেরও বেশি শরণার্থী বাংলাদেশি মানুষের সঙ্গে মিশে আছে। অনেক সময় বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে অন্য রাষ্ট্রে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে নির্যাতিত হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ ২০ হাজার। অভ্যন্তরীণ শরণার্থীর মধ্যে প্রায় তিন লাখ আটকে পড়া পাকিস্তানি, যারা বর্তমানে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে বসবাস করছে এবং প্রতিবেশী ভারত প্রত্যাগত পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ৬৫ হাজার পাহাড়ি শরণার্থী ও পাহাড়ে অভিবাসিত প্রায় চার লাখ বাঙালি রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরসি) সূত্র মতে, বর্তমানে কঙ্বাজার উখিয়ার কতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে প্রায় ১৯ হাজার ৮০০ শরণার্থী বসবাস করছে। এই রোহিঙ্গা শরণার্থী ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে ৬৬টি ক্যাম্পে তিন লাখ বিহারি অভ্যন্তরীণ শরণার্থী রয়েছে। তা ছাড়া পার্বত্যাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিবেশ, মিয়ানমার সামরিক জান্তার ক্ষমতার দাপট, অন্যান্য অস্থিরতার ঘটনার জন্য ওই দেশের শরণার্থী এ দেশে আসতে বাধ্য হয়েছে এবং আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার সরকার আগত শরণার্থীদের আট হাজারের বেশি ফেরত নেওয়ার অঙ্গীকার করলেও ফেরত নেয়নি।
ড. মো. ইকবাল করিম…বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অনেক শরণার্থী প্রবেশ করেছে, যা অর্থনৈতিক মূল স্রোতধারার বিঘ্ন সৃষ্টি করে, যা এখন জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের সহযোগিতার হাত আরো প্রসারিত করতে হবে। জাতিসংঘ (UN) এবং UNHCR বিশেষ সহযোগিতা প্রয়োজন হবে এবং ব্যাপক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। শরণার্থী দ্বিতীয় কোনো একটি দেশকে নিরাপত্তা, খাদ্য ও আশ্রয়ের স্থান হিসেবে বেছে নেয়। নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন ও কনভেনশনের মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হয় এবং UNHCR অন্য সংগঠনগুলো তাদের সহায়তা প্রদান করে থাকে।
একজন শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত রাষ্ট্রের কী দায়িত্ব হবে, সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের অনুচ্ছেদ ১৪(১) বলা আছে, ‘প্রত্যেকেরই নিগ্রহ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অন্য দেশে আশ্রয় প্রার্থনা এবং তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’ শরণার্থীরা যে রাষ্ট্রে অবস্থান করবে, সে রাষ্ট্রের নিয়মরীতি মেনে চলবে। অর্থাৎ আশ্রিত রাষ্ট্রের আইন এবং নিয়মানুযায়ী জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের সহযোগিতা করবেন। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এসব অপরাধ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে ৫৭টি রাষ্ট্র এ প্রতিষ্ঠানের রক্ষণাবেক্ষণ ও সহযোগিতা কার্যক্রমের নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করে সাহায্য করছে। UNHCR জাতিসংঘের ক্ষমতাপ্রাপ্ত শরণার্থীসংক্রান্ত সনদ ও প্রটোকলের আলোকে বাংলাদেশ কাজ করছে। তবুও বাংলাদেশ জাতিসংঘ শরণার্থীবিষযক UNHCR প্রটোকলের স্বাক্ষর প্রদান ব্যতিরেকে দেশের ভেতর আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার মাত্রাতিরিক্ত চাপের ভেতর থেকেও শরণার্থীদের গ্রহণ করেছে এবং তাদের পুনর্বাসনের বিষয়গুলো UNHCR-এর সহযোগিতা করে যাচ্ছে। মিয়ানমার আরো শরণার্থী এ দেশে পাঠানোর পরিকল্পিত অবস্থার সৃষ্টি করেছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। মিয়ানমারের উচিত ছিল, সে দেশ থেকে আসা আগের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়া।
নিজস্ব সব কিছু বিসর্জন দিয়ে নিজ রাষ্ট্র ছাড়তে বাধ্য হয়ে অন্য রাষ্ট্রে গিয়ে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় মানুষ। তার অর্থ এই নয় যে আশ্রয় নেওয়া রাষ্ট্রেই তারা চিরদিন থাকবে। আন্তর্জাতিক আইন করে আবার শরণার্থী ফেরত নেওয়ার বাধ্যবাধকতা করতে হবে। এ জন্য নিজ দেশের মানুষকে নির্যাতন করে অন্য দেশে ঠেলে দেওয়ার বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করতে হবে।
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট