লন্ডন, ২৯ জুলাই: ‘প্রতিবেশি মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের চেষ্টারত হাজার হাজার মুসলিম শরণার্থীদের ভেতরে সন্ত্রাসীদের সম্ভাব্য যোগসূত্রের বিষয়ে গত রাতে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’, লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারের বরাত দিয়ে রোববার এ খবর প্রকাশ করেছে বৃটিশ দৈনিক ডেইলি এক্সপ্রেস’র রবিবাসরীয় সংস্করণ- সানডে এক্সপ্রেস।
পত্রিকাটির সাংবাদিক টেড জিওরি’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনীতে যোগ দিতে লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারে বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের ঘটনায় তিনি দেশটির কাছে উদ্বেগ জানিয়েছেন।
খবরে বলা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার দেশটির সীমান্তে শরণার্থীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে; এতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অন্য সংস্থাগুলো ক্ষুদ্ধ।
পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ‘‘শেখ হাসিনা বলেছেন যে একটি ইসলামি মৌলবাদী দল জামায়াতে ইসলামী’র মিয়ানমার সীমান্তের কাছে শক্ত সমর্থন রয়েছে এবং দলটির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে যা দলটি অস্বীকার করে।’’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের দেশে বিশাল সংখ্যক শরণার্থী ঢুকতে চেষ্টা করছে অথচ আমাদের দেশে ইতোমধ্যেই মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা আছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা কতজনকে নিতে পারবো? বাংলাদেশে আমরা কোনো শরণার্থী চাইনা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের খুঁজে দেখা উচিত যে এই শরণার্থীরা কেন আসতে চাইছে।’’
প্রসঙ্গত, গত ১২ জুলাই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত সরকারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেন বৃহস্পতিবার জাতিসংঘকে, ‘‘আমরা আমাদের লোকেদের দায়িত্ব নেবো। কিন্তু যারা নৃতাত্ত্বিকভাবে আমাদের লোক নয়, সেই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করা অসম্ভব।’’ রোহিঙ্গাদের অন্য কোনো দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে তার সরকারের চিন্তার কথা জানান তিনি।
দেশটির আরাকান প্রদেশের এই নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা দশকের পর দশক ধরে দেশটিতে তীব্র বর্ণবাদ ও রাষ্ট্রীয় দমননীতির শিকার হয়ে আসছে। বিভিন্ন সময়ে স্বশস্ত্র রাষ্ট্রীয় গণহত্যার শিকার কয়েক লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন দশকের পর দশক।
সর্বশেষ গত জুন মাসের শুরু থেকে সরকারি বিভিন্ন বাহিনী ও সংখ্যাগুরু রাখাইনদের যৌথ সহিংসতার শিকার হয়ে এ পর্যন্ত বেসরকারি হিসেবে কমপক্ষে তিনশত রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন। অসংখ্য রোহিঙ্গা শরণার্থী নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলের অধিবাসীদের কাছে আশ্রয় পেয়েছেন সীমান্তরক্ষীদের চোখ এড়িয়ে। অবশ্য সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারের শরণার্থীদের সিংহভাগকেই আবার সাগরে ঠেলে দেয়া (পুশব্যাক) হয়েছে।
Leave a Reply