আদম পাচারকারী সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের হাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তুলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু ম্যানুয়েলই নয়, মেশিন রিডেবল পাসপোর্টও রোহিঙ্গাদের হাতে চলে যাচ্ছে। পুলিশ, ট্রাভেল এজেন্সী, বিমান বন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থা ও কয়েকটি এয়ারলাইন্সের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় আদম পাচারকারী সিন্ডিকেট এ কাজ করছে। ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে আসল মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে রোহিঙ্গাদের কম্বডিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করছে আদম পাচারকারী ওই চক্রটি।
গত ১১ আগস্ট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আটক দালাল ইকবাল জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছে। একই দিন বিমান বন্দর থেকে শিশু ও মহিলাসহ ৪ রোহিঙ্গা নাগরিককে আমর্ড ব্যাটালিয়ন পুলিশ পাসপোর্টসহ গ্রেফতার করে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট কি করে রোহিঙ্গাদের হাতে চলে গেল- এ নিয়ে বিমান বন্দরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তাদের সৌদি আরবে পাচার চেষ্টায় জড়িত অভিযোগে ইকবালসহ ৩ দালালকে গ্রেফতার করা হয়।
বিমান বন্দর থানা সূত্রে জানা যায়, আটক রোহিঙ্গাদের হাতে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে এসব পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে দালালরা। আটক ইকবাল পুলিশকে জানায়, তার বাড়ী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, পিতার নাম মকবুল হোসেন। সে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় রাহাত ট্রাভেলসে চাকরি করে। ওই ট্রাভেলসের মালিক প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতন দেয় তাকে। ওই টাকার বিনিময় সে রোহিঙ্গাদের ঢাকায় নিয়ে আসে। ঢাকায় নয়াপল্টনে ইসলাম টাওয়ারে কয়েকজন দালালের কাছে সে রোহিঙ্গাদের পৌঁছে দেয়। সেখানে কালাম নামের একজন দালাল পাসপোর্ট, ভিসা সংগ্রহ করে রোহিঙ্গাদের বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেয়।
ইকবাল আরো জানায়, ইতিপূর্বে আরো ২০/২২ জন রোহিঙ্গাকে সে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে নিয়ে এসে দালাল কালাম ও রাহাত ট্রাভেলসের মালিকের সহযোগিতায় সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। ইকবালের দাবি, পুলিশের একটি সংঘবদ্ধ চক্র মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করছে।
তবে রাহাত ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক কবির জানান, ইকবাল নামে রাহাত ট্রাভেলসে কোনো কর্মচারী বা কর্মকর্তা নেই। পূর্ব শক্রতার জের ধরে তাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্যই রাহাত ট্রাভেলসকে জড়িয়ে ইকবাল এই স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত ১১ আগস্ট কুয়েত এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইটে সৌদি আরব পাচারকালে শিশু ও মহিলাসহ ৪ জনকে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এপিবিএন নিশ্চিত হয়- এরা বার্মার নাগরিক। আটককৃতরা হলেন- আয়শা খাতুন (৩৫), রোকসানা খাতুন (১০), ইপমানা খাতুন (৮) এবং মোহাম্মদ জাভেদ (১৬)। পরে তাদের পাচারে সহযোগিতাকারী দালাল ইকবাল (৩৫), মাহফুজ (২০) ও কায়সারকে (২৯) গ্রেফতার করা হয়।
বিমান বন্দরে কর্মরত আর্মড ব্যাটেলিয়ন পুলিশের এএসপি মিনহাজুল ইসলাম জানান, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট নিয়ে ওরা সৌদি আরব যাচ্ছিল। সন্দেহ হলে ইমিগ্রেশনের সহযোগিতায় আটক করা হয়। উদ্ধার করা মেশিন রিডেবল ৪টি পাসপোর্টের মধ্যে একটি আসল। তবে নাম-ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে ভুয়া। তিনি জানান, আয়শা খাতুন নামের মহিলা মিরপুরের মনিপুর এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করলেও সে প্রকৃত পক্ষে রোহিঙ্গা নাগরিক। ওই মহিলা অন্য একজনের ছেলেকে নিজের ছেলে বানিয়ে সৌদি আরব নিয়ে যাচ্ছিল। তবে সে কি করে আসল মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট সংগ্রহ করলো- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Leave a Reply