মুহাম্মদ আবুবকর ছিদ্দিক, রামু…কক্সবাজারের পূরাকীর্তি সমৃদ্ধ রামুতে সংগঠিত ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোঃ নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের সরকারী তদন্ত কমিটি। প্রতিনিধি দলের বাকী সদস্যরা হলেন, পার্বত্য বান্দরবানের পুলিশ সুপার কামরুল হাসান, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুর রউফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। তদন্ত টিম ক্ষতিগ্রস্থ মন্দির ও বাড়িঘর পরিদর্শন, আলামত সংগ্রহ পূর্বক স্থানীয় সকল ধর্ম, পেশার লোকদের সাথে কথা বলেছেন। তদন্ত দলের প্রধান মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, সরকারী নির্দেশে ২৯ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাতে রামুর বৌদ্ধ পল্লীতে সংগঠিত ঘটনার সুত্রপাতসহ সার্বিক বিষয়ের উপর তদন্ত কাজ চলিতেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা যাবেনা বলে জানান তিনি। তদন্ত টিম ১ অক্টোবর থেকে শুরু করেছে তাদের কার্যক্রম এবং আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেয়া হবে বলে জানান তিনি ।
এদিকে রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের উত্তর মিঠাছড়ি বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত দেশের সর্ববৃহৎ সিংহশয্যা গৌতম বুদ্ধমুর্তি ধ্বংসে ব্যবহৃত হাতবোমা (ককটেল)সহ ধ্বংস যজ্ঞে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে বিশেষজ্ঞ দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে সুত্রে জানা যায়।
সরেজমিন পরিদর্শনে ওই দিনের ঘটনা সুষ্টু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের খুজেঁ বের করার দাবী জানিয়ে রামু উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহরের অধ্যক্ষ সারমিত্র মহাথের জানান, ‘আমরা অহিংসার উপাসক, আমরা শান্তি ও সহমর্মিতায় বিশ্বাসী’। আগের মতো আমরা অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে শান্তি ও সম্প্রীতির সহ-অবস্থানে বসবাস করতে চাই। তিনি জানান, রামুর উত্তর মিঠাছড়ি বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত দেশের বৃহত্তম একশ ফুট সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধ মুর্তির অবকাঠামোর ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৭টি বিষ্ফোরিত হাতবোমা (ককটেল)’র খোসা। বুদ্ধমুর্তির প্রতিষ্ঠাতা করুনাশ্রী থের জানান, ২৯ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর গত ৩ অক্টোবর বুদ্ধমুর্তির শরীরে ফাটল দেখে তিনি স্থানীয় লোকজন নিয়ে অবস্থানরত বিজিবি’র সদস্যদের উপস্থিতিতে ফাটল দেখতে বুদ্ধমুর্তির অবকাটামোর ভেতরে প্রবেশ করলে একে একে সাতটি বিষ্ফোরিত হাতবোমা (ককটেল)’র খোসা খুঁজে পায়। তিনি জানান, ওই দিন পুলিশের তদন্তদল একটি ও বাংলাদেশ বুড্ডিষ্ট ফেডারেশনের সভাপতি অশোক বড়–য়া বিষ্ফোরিত হাতবোমা (ককটেল)’র একটি খোসা নিয়ে যায়। গতকাল ৪ অক্টোবর সিআইডি’র এএসপি হ্লাচিংপ্রু মারমার নেতৃত্বে তদন্ত দল একটি বিষ্ফোরিত হাতবোমা (ককটেল)’র একটি খোসা পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায় বলেও তিনি জানান।
বৌদ্ধ মন্দির হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত লোকের কথা উল্লেখ করে রামু থানায় ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ভিডিও ফুটেজ ও স্থির চিত্র সংগ্রহ করে হামলাকারী ও ইন্ধনদাতাদের সনাক্ত করছে। ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে পৃথক ৬ টি মামলায় এ পর্যন্ত ৬৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
রামুতে সংঘটিত সহিংস ঘটনায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। বাড়িঘর পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে অস্থায়ী বসবাসের জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষে ইতিপূর্বে একটি করে তাবু টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে।বিজিবি সহ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে এগিয়ে আসছে।তবে এসব কিছুর পরও যারা মন্দির পুড়ানো সহ যারা এ জঘন্য ঘটনা সংঘটিত করেছে তারা এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে থাকায় বাড়ছে ক্ষোভ ও আতংক। ঐদিনের ঘটনায় যারা প্রকৃত অপরাধী তাদেরকেই খুঁজে বের করা হোক। নিরাপরাধ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন।
প্রেরক-
মুহাম্মদ আবুবকর ছিদ্দিক, রামু (কক্্সবাজার) প্রতিনিধি
মোবাইল নং- ০১৮১৭৭৫৭০৭৯।
Leave a Reply