রামুর সহিংস ঘটনা নিয়ে আটক করা হয়েছে জামায়াত নেতা ও কক্সবাজার সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি শহীদুল আলম বাহাদুরকে। র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা যৌথভাবে গতকাল বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে চট্টগ্রাম পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আটক করেছে। আটককৃত ভিপি বাহাদুর কক্সবাজার শহরতলীর হাজি পাড়া এলাকার মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে। ২৯ সেপ্টেম্বর রামুতে বৌদ্ধ মন্দির পুড়ানো সহ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে তাকে লিংক রোডস্থ বিসিক নগরীর র্যাব কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, র্যাব কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সরওয়ারÑইÑআলম।
জানা যায়, ২৯ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর থেকে পুলিশ সহ গোয়েন্দা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে ছিলেন জামায়াত নেতা শহীদুল আলম বাহাদুর ওরফে ভিপি বাহাদুর। কিন্তু তার বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকা সহ চালচলন পর্যবেক্ষণ করে সহিংসতায় জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্যই এতদিন সময়ক্ষেপন করা হয়েছিল। গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই শহীদুল আলম বাহাদুরকে আটক করতে মরিয়া হয়ে ওঠে র্যাব ও পুলিশ। কিন্তু বিষয়টি বুঝতে পারার পর থেকেই আত্মগোপনে চলে যান ভিপি বাহাদুর। একপর্যায়ে গতকাল চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে রামুর বাইপাস সড়কে তাকে আটক করে র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। এ সময় ভিপি বাহাদুর র্যাব ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়েছেন।
জানা যায়, ভিপি বাহাদুরের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের গভীর সম্পর্ক ছিলো। বিশেষ করে বাংলাদেশে বসবাসরত আরএসও নেতাদের সঙ্গেই তার যোগাযোগ ছিলো বেশি। সম্প্রতি কক্সবাজার শহর থেকে আটক হওয়া আরএসও নেতা আবু সালেহ’র সঙ্গেও তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আবু সালেহ শহরের পাহাড়তলীতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দিতেন। পাশাপাশি নিজ এলাকা সংলগ্ন কক্সবাজার সরকারী কলেজের পেছনে গড়ে তুলেছেন অবৈধ রোহিঙ্গা পল্লী। বিভিন্ন সময় কলেজ হোস্টেলে রোহিঙ্গা নেতাদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে, এতদিন এসব অভিযোগ নিয়ে প্রশাসনসহ কেউ তেমন সোচ্চার ছিলেন না। রামুর ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি সামনে চলে আসে। এ সময় তাকে বেশ কয়েকবার আটক করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। আত্মগোপনে থাকায় প্রশাসনের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি।
এদিকে আটক হওয়ার পর থেকেই রামুর সহিংসতায় ভিপি বাহাদুরের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। ২৯ সেপ্টেম্বর ঝিলংজার বাংলাবাজার এলাকা থেকে ট্রাকে করে সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে রামু নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওই ট্রাকটি ভাড়া করা হয় ভিপি বাহাদুরের পক্ষ থেকে। এছাড়াও ওই দিন মোটর সাইকেলের বহর নিয়ে ভিপি বাহাদুর রামু গিয়েছিলেন। যা র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। মূলত জেলায় রোহিঙ্গাদের অবস্থান জানান দেয়াই ছিল রামুর সহিংসতার প্রধান উদ্দেশ্য। আর তাই ভিপি বাহাদুরের আটককে রামুর সহিংসতার বিষয়টি প্রমাণে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।
এদিকে ভিপি বাহাদুর আটক হওয়ার পর থেকেই তার বিভিন্ন অপকর্ম সামনে আসতে শুরু হয়েছে। দীর্ঘসময় জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন শহীদুল আলম বাহাদুর। এক পর্যায়ে জামায়াত শিবিরের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৯৩ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভিপি নির্বাচিত হন। এ সময় থেকেই তিনি ভিপি বাহাদুর হিসেবে পরিচিত হতে থাকেন। নির্বাচিত হওয়ার পর দীর্ঘসময় পর্যন্ত ছাত্রত্ব না থাকলেও তিনি ভিপি পদে বহাল ছিলেন। সে সময় থেকে জামায়াত শিবিরে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। বিশেষ করে কক্সবাজার কলেজ সংলগ্ন এলাকায় তার বাড়ি হওয়ার কারণেই এটি হয়েছে। শিবির ক্যাডার হওয়া ছাড়াও কলেজ সংলগ্ন এলাকার সন্তান হওয়ায় কক্সবাজার কলেজের নিয়ন্ত্রণও রয়েছে তার হাতে। প্রতিবছর ভর্তির সময় কলেজ সংসদ না থাকা সত্ত্বেও সংসদের নাম দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা নিয়ে থাকেন ভিপি বাহাদুর। একপর্যায়ে তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে কলেজ সংলগ্ন কলেজের বিভিন্ন জায়গা দখল করে নিজ কব্জায় নিয়ে আসেন। পরে ওই দখলকৃত জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে তুলেন কেজি স্কুল। আর নিজে হয়ে যান ওই স্কুলের অধ্যক্ষ।
এসবের পাশাপাশি ভিপি বাহাদুরের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগ কম নয়। বিশেষ করে কলেজ গেইট সংলগ্ন এলাকায় সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির জায়গা দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া জেলা শহরের জামায়াত কার্যালয়ের সামনে অনুমোদনবিহীনভাবে ক্লিনিক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কক্স ন্যাশনাল হাসপাতাল নামে ওই ক্লিনিকে অপচিকিৎসার শিকার হয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।
শিবির রাজনীতি ত্যাগ করে জামায়াতের রাজনীতিতে যোগ দিলে সেখানে আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা চালিয়েছেন ভিপি বাহাদুর। বিগত ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জামায়াত তাদের প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়নটির সাবেক চেয়ারম্যান মৌলানা গফুর উদ্দিনকে মনোনীত করেছিল। কিন্তু ভিপি বাহাদুরের গোঁয়ার্তুমির কারণে শেষ পর্যন্ত জামায়াতকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ভিপি বাহাদুরকে প্রার্থী করতে হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছর জমির দালালির টাকাকে কেন্দ্র করে জামায়াতের এক রুকনকে অপহরণ করে নিয়ে যান ভিপি বাহাদুর। ওই ঘটনায় জামায়াত সাময়িকভাবে তাকে বহিস্কার করেছিল। কিন্তু কক্সবাজার সরকারী কলেজের বিষয়টি মাথায় রেখে পুনরায় রুকন হিসেবে তাকে সংগঠনে স্থান দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামু, উখিয়া ও টেকনাফে সহিংসতার ঘটনায় দায়েরকৃত ১৭টি মামলায় পুলিশ গতকাল পর্যন্ত মোট ২৩৩ জনকে করেছে।
এক সময় সত্যা বের হয়ে আসবে আমরা তার অপেক্কায় আছি । এই দুদিনে আমরা জামাতের একটা বিবৄতি আশা করছি ।