মুহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিক ….কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সামগ্রিক ভাবে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পানি নামতে শুরু করেছে। তবে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট এই বন্যায় রামুতে শুক্রবার আরও একজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এনিয়ে লাশের সংখ্যা ১২ জনে দাঁড়ালো। জনপ্রতিনিধিরা দাবি করেছেন, স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় রবিশস্য, মৎস্য খামার, পোল্ট্রি শিল্পে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শত শত গবাদি পশু ভেসে গেছে পানিতে। এখনো পানিতে ভেসে যাওয়া ৩ ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন বলে খবর মিলেছে।
পানিতে ডুবে থাকায় পুরো উপজেলাজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে দিন কাটাতে হচ্ছে। অধিকাংশ বাড়িতে হাঁটু ও কোমর পরিমাণ কাদামাটি জমে বিরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসিদের দাবি, বন্যা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে রবি ফসল। কোথাও এক ফোঁটা মাঠও ক্ষতি বাঁচেনি।
শুক্রবার উদ্ধার হওয়া লাশটি হলো চাকমারকুল ইউনিয়নের আশকরখিল পাড়ার মৃত সুলতান আহমদের ছেলে মোকতার আহমদ (৬০)। তিনদিন নিখোঁজ থাকার শুক্রবার সকালে তার লাশ পাওয়া গেছে।
৫ দিন ধরে রামু-মরিচ্যা-টেকনাফ সড়কে সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারী শুক্রবারও রামু উপজেলার দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি দূর্গত এলাকায় ত্রাণও বিতরণ করেন। তার সাথে ছিলেন রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে নজিবুল ইসলাম, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক, কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন প্রমূখ।
সেনাবাহিনীর সহায়তায় কচ্ছপিয়া ও কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা মইষকুম ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় জেলা প্রশাসক জয়নুল বারী ত্রাণ বিতরণ করেছেন।
রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল সাংবাদিকদের জানান, রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, কাউয়ারখোপ, রশিদনগর, খুনিয়াপালং, চাকমারকুল, জোয়ারিয়ানালা, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ও ঈদগড় ইউনিয়নের শতাধিক ওয়ার্ডের সহ¯্রাধিক গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তার মতে, ¯্রােতের তোড়ে ওই সব এলাকার শত শত গ্রামীণ সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। যার কারণে মানুষকে এখন হেঁটেই পৌঁছতে হচ্ছে গন্তব্যে। এসব সড়কের ছোট-বড় কালভার্টও পানির ¯্রােতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আরও জানান, বেশ কিছু এলাকায় সড়কে উপড়ে পড়ে আছে গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। বাঁকখালী নদীর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ভূতপাড়ায় দুইটি, হাইটুপী, তেমুহনী, অফিসের চর, আতিক্কা বিবির ঘাট, অফিসের চর ডাকবাংলো এলাকা, রাজারকুল, চাকমারকুল মিস্ত্রিপাড়া, নয়াপাড়া, চরপাড়াসহ অন্তত ১৫টি স্থানে বাঁধ ও সড়ক ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবনের শিকার হয়েছিল।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দ জানান, বন্যাদূর্গত এলাকার জন্য নতুন করে ১০০ বস্তা চিড়া, ৫০ পাটি গুড় বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে বন্যাদূর্গতদের জন্য পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, চিড়া ও গুড় বরাদ্দ করা হয়েছে।
তিনি জানান, রামুতে ইতিপূর্বে বন্যাদূর্গতদের জন্য ১০০ মে.টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের পরিবারে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
মুহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিক
রামু উপজেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার।
Leave a Reply