নিয়মের ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দিয়ে গ্রহক ‘হয়রানি বা প্রতারণা’ ঠেকাতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের জন্য ১৪টি নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। পাশাপাশি ব্যবহারভিত্তিক ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে ফি কমানোরও সুপারিশ থাকছে।গত অগাস্ট মাসে সব ধরনের প্যাকেজে ১০ সেকেন্ড পালস চালু করতে দেশের ছয়টি মোবাইল ফোন অপারেটরকে নির্দেশ দেয় বিটিআরসি। এতে বলা হয়, গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন মিনিটে ভিন্ন ভিন্ন হারে কলচার্জ আদায় করা যাবে না। এ নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে এক মাস টানাপোড়েনের পর চলতি মাসে এসব নির্দেশনা মেনে নিতে বাধ্য হয় অপারেটররা।
এর রেশ না কাটতেই নতুন নির্দেশনা জারির উদ্যোগ নিয়ে বিটিআরসি বলছে, মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই এসব নতুন নিয়ম।
বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল মো. রকিবুল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় বিটিআরসি বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করলেও তার সঠিক প্রতিপালন হচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ভুল ব্যাখ্যা করে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতারণার ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থায় এসব নির্দেশনা সঠিকভাবে পালনের ক্ষেত্রে কমিশন শিগগিরই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
এই ১৪টি নির্দেশনার ব্যাপারে গ্রাহকদের মতামতও চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আগামী ১০ অক্টোবর পযন্ত গ্রাহকরা ই-মেইল ([email protected], [email protected]) করে তাদের মতামত জানাতে পারবেন।
‘শর্ত প্রযোজ্য’
মোবাইল ফোন অপারেটররা বিভিন্ন সেবা বা অফারের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনে তারকা চিহ্ন দিয়ে শুধু ‘শর্ত প্রযোজ্য’ শব্দবন্ধটি উল্লেখ করে, যার ব্যাখ্যা ওই বিজ্ঞাপনে থাকে না। নতুন নির্দেশনায় বলা হচ্ছে, ‘শর্ত প্রযোজ্য’ কথাটি না লিখে প্রয়োজনীয় সব তথ্য ‘স্পষ্ট ও পাঠযোগ্য আকারে’ প্রকাশ করতে হবে। মূল বিজ্ঞাপনে সব তথ্য দেয়া না গেলেও পত্রিকার ভেতরের পাতায় সব তথ্য উল্লেখ করতে হবে এবং তা মূল বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করতে হবে।
কোনো কোনো অপারেটরে গ্রাহক কল করলে রিং ব্যাক টোন শুরু হওয়ার আগে অপারেটরের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়। অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে কল করলেও সংযোগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সেবা ও অফার এর বিজ্ঞাপন শোনানো হয়।
নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে এসব ক্ষেত্রে গ্রাহককে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন শোনানো যাবে না। তবে গ্রাহক পর্যায়ে বিনামূল্যে দেয়া সেবার ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে।
সার্ভিস বা অফারে নতুন নিয়ম
কোনো সেবা বা অফারের ক্ষেত্রে মাসিক ‘সাবক্রিপশন ফি’ কেটে নেয়ার আগে ও পরে কমপক্ষে ৩ বার ‘এসএমএস’ দিয়ে গ্রাহককে জানাতে হবে এবং প্রতিটি এসএমএসে অনিবন্ধিত হওয়ার পদ্ধতি উল্লেখ করতে হবে।
প্রি-পেইড গ্রাহকের আউট গোয়িং কলের ক্ষেত্রে প্রতিবার কল শেষ হওয়ার পর ইউএসএসডি প্রটোকলের মাধ্যমে কলের ব্যবহারকৃত মিনিট ও কেটে নেয়া টাকার পরিমাণ এবং গ্রাহকের জমা টাকার পরিমাণ জানাতে হবে।
ঘণ্টা, দিন বা মাসের সর্বোচ্চ রিচার্জ বা ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিজয়ীদের কোনো ধরনের পুরস্কার বা উপহারও দেয়া যাবে না।
বন্ধ সিম চালু
বন্ধ সিম চালু করার ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনায় বলা হচ্ছে, মূল গ্রাহক ছাড়া অন্য কাউকে সিম ‘রিপ্লেসমেন্ট’ দেয়া যাবে না। বন্ধ সংযোগে বোনাস বা অন্য কোনো অফার থাকলে তা যাতে মূল গ্রাহকই পায়, সে ব্যাপারে অপারেটরদের উদ্যোগ নিতে হবে।
বিটিআরসির নিয়ম অনুযায়ী, একটি সংযোগ শুধুমাত্র একবারই বিক্রি করা যায়। নিবন্ধিত গ্রাহক সেটি ব্যবহার না করলেও সংযোগটি অন্য কারো নামে বরাদ্দ দেয়ার সুযোগ নেই।
বর্তমানে একজন গ্রাহক তার সংযোগটি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার না করে পরে সংযোগটি আবারো সচল করতে চাইলে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে নতুন করে সিম কার্ড কিনতে হয়। নতুন নিদের্শনায় বলা হচ্ছে, গ্রাহক তার পুরনো সিম কার্ড যে কোনো সময় রিচার্জ করলে সংযোগটি তাৎক্ষণিকভাবে সচল করতে হবে।
ইন্টারনেট প্যাকেজ
বর্তমানে সব নতুন সংযোগে পি-১ প্যাকেজে ( পে এজ ইউ গো) অর্থাৎ, ব্যবহারভিত্তিক ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে ২ পয়সা/কিলোবাইট হারে বিল কেটে নেয়া হয়। সরকার এখন পর্যন্ত বেশ কয়েক ধাপে ইন্টারনেট ব্যান্ড উইথের মূল্য কমালেও পি-১ প্যাকেজে ২০০৪ সালে একই হারে বিল কাটা হচ্ছে।
নতুন নির্দেশনায় পি-১ প্যাকেজের মূল্য অর্ধেক করার কথা বলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে কোনো গ্রাহক পি-১ প্যাকেজের ১০০ টাকা সীমা অতিক্রম করার পর প্রচলিত অন্য কোনো প্যাকেজে মাইগ্রেট না করলে মাসের বাকি সময়ের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পরের মাসের প্রথম দিনে পি-১ প্যাকেজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু করার কথা থাকছে।
দেশে বর্তমানে পাঁচটি জিএসএম ও একটি সিডিএমএ অপারেটর সেবা দিচ্ছে। বিটিআরসির হিসাবে বর্তমানে প্রায় ৯ কোটির বেশি লোক মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন এবং প্রায় ৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর শতকরা ৮০ ভাগই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
Onek din por ekta valo podakkep nilo btrc..thanks..