নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে অন্যতম মসলায় টেক্সটাইলের রং মিশিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে ব্যাপক ভেজাল মসলা বাজারজাত করছে মুনাফালোভীরা। সমপ্রতি ভেজাল বিরোধী মোবাইল কোর্ট রাজধানী ও চট্টগ্রামে মসলা তৈরি কারখানায় অভিযান চালিয়ে মসলায় টেক্সটাইলের রং মেশানোর সময় তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে। কারখানার মালিকরা টেক্সটাইলের রং মেশানো কথা স্বীকার করে জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে মসলায় রং মিশিয়ে বিক্রি করে আসছে। পচা ও নিম্নমানের মরিচের গুড়া হলে তা সাদা দেখা যায়। এ গুড়ার সঙ্গে তারা টেক্সটাইলের লাল রং মেশায়। তখন এটি দেখতে টককে লাল হয় এবং ক্রেতারা এটিকে ফ্রেশ মনে করে। মরিচের গুড়ার সঙ্গে লাল রং ও ধনিয়া গুড়ার সঙ্গে টেক্সটাইলের ছাই রং মেশানো হয়। যে মসলার রং যে রকম টেক্সটাইলের সেরকম রং মেশানো হয়। মানুষের দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর জেনেও কেন এ প্রাণঘাতী রং মেশানো হচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে মসলা কারখানার মালিকরা মোবাইল কোর্টকে জানায়, মসলায় এক টাকা ৮০ পয়সা লাভ থাকে। কিন্তু ভেজাল করলে মুনাফা অনেক বেড়ে যায়। অতি মুনাফার লোভেই তারা এসব করছে বলে মোবাইল কোর্টের কাছে স্বীকার করে। মোবাইল কোর্টের তিন ম্যাজিস্ট্রেট ও বিএসটিআইয়ের দুই কর্মকর্তা বলেন, ইতিপূর্বে আরও দুই দফা বিষাক্ত মসলা তৈরির সময় হাতেনাতে ধরে জেল-জরিমানা করা হয়। ঐ সময় আর না করার অঙ্গীকার করেছিল মুনাফালোভীরা।
ভেজাল মসলা উত্পাদনকারীরা মোবাইল কোর্টের কাছে স্বীকার করেছে, তাদের এ বিষাক্ত মসলার মার্কেট গ্রামাঞ্চলে ৬০ ভাগ। পাইকাররা তাদের কারখানা থেকে নিয়ে নিয়মিত বাজারজাত করছে বলে জানায়। গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের বিবিরহাট এলাকায় ভেজাল বিরোধী মোবাইল কোর্ট মেসার্স আকতার হোসেনের মরিচের কল (ব্র্যান্ড উট মার্কা) ইব্রাহীমের মসলার কারখানা ও মেসার্স হরিণ মার্কা মসলা প্রোডাক্টস (ব্র্যান্ড-হরিণ মার্কা) কারখানায় অভিযান চালিয়ে টেক্সটাইলের বিপুল পরিমাণ রং উদ্ধার করে। মালিকদের জেল-জরিমানাও করেছে মোবাইল কোর্ট। র্যাব-৭ এর পরিচালনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জয়নাল আবেদীন উক্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। চট্টগ্রাম থেকে বস্তায় বস্তায় পাইকাররা মসলা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকে। সেখানে রয়েছে মসলার বৃহত্ মার্কেট। মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেটগণ বলেন, যে হারে বিষাক্ত কেমিক্যাল ও টেক্সটাইল রং মসলাসহ খাদ্যসামগ্রীতে ব্যবহার হচ্ছে বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশে এ আইন দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এ আইনে ভেজালকারীরা আরও উত্সাহিত হয়। দুর্বল আইনকে তারা তোয়াক্কা করে না। জাতিকে ধ্বংস করার এ বিষাক্ত খাদ্যসামগ্রী উত্পাদন ও বাজারজাত বন্ধ করতে হলে মৃত্যুদণ্ড প্রদান ছাড়া সম্ভব হবে না বলে ম্যাজিস্ট্রেটগণ অভিমত ব্যক্ত করেন।
রাজধানীর পুরান ঢাকায় অলিগলিতে ভেজাল মসলা তৈরির প্রচুর কারখানা রয়েছে। সম্প্রতি র্যাব শ্যামবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০টি ভেজাল মসলার কারখানার সন্ধান পায়। মসলায় টেক্সটাইলের রং মেশানোর সময় হাতেনাতে তাদের ধরে ফেলে র্যাব কর্মকর্তারা। ঐ সময় মোবাইল কোর্ট জেল-জরিমানা দিয়েছিল। ঈদকে সামনে রেখে বিষাক্ত ও ভেজাল মসলা উত্পাদন ব্যাপকহারে শুরু হয়েছে। রাজধানী ও শহর এলাকা ছাড়াও গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে এ বিষাক্ত মসলার চাহিদা ব্যাপক। অল্পমূল্যে ও টাটকা রং দেখে গ্রামাঞ্চলের নিরীহ ও অশিক্ষিত লোকজন এ বিষাক্ত মসলা কেনার জন্য উত্সাহী। টাকা দিয়ে যে বিষ কিনে নিয়ে যাচ্ছে তা ঐ নিরীহ লোকজন জানে না।
ক্যান্সার, গাইনি, কিডনি, শিশু ও স্নায়ু রোগী বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, টেক্সটাইল ও কেমিক্যাল সংমিশ্রণে তৈরি মসলা কিংবা খাদ্যসামগ্রী খেলে দ্রুত ক্যান্সার, কিডনি, লিভারসহ মরণব্যাধি হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। খাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে এ সব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাতৃগর্ভে শিশুদের অর্গান মোমের মত গলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। ওষুধেও কোন কাজ হবে না। মৃত্যু একমাত্র ঠিকানা। বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে খাদ্য ভেজালকারীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে জাতিকে রক্ষা করা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
Leave a Reply