সুজন-লিজার সংসারে ভাঙন ধরানো মডেলকন্যা রিয়াকে নিয়ে সিলেটের শোবিজ অঙ্গনে এখন তোলপাড় চলছে। বেরিয়ে আসছে একের পর এক বহু চাঞ্চল্যকর খবর। এতে এখন ঘুম হারাম রিয়ার। কয়েকজন পরিচালক ও অভিনেতা জানিয়েছেন, রিয়া তার স্বভাবের শিকার। বেপরোয়া আচরণ ও প্রতারণার জীবন ছেড়ে দিলে এ জগতে তার অবস্থান সুদৃঢ় হয়ে যেতো সহজেই। কিন্তু সেই পথ এখন আর খোলা নেই।
সিলেটের ডিজে পার্টিতে রিয়ার কদর বেশ। সে যে পার্টিতে সে পার্টির রূপ ভিন্ন। শুধু সিলেটেই নয় ঢাকা ও কক্সবাজারে একাধিক পার্টিতে রিয়াকে দেখা গেছে। সিলেটের মডেল রিয়ার বেপরোয়া জীবন এতদিন ছিল আড়ালে-আবডালে। শোবিজের অনেকেই তার অন্ধকার জগতের অনেক কিছু জানলেও মুখ খোলেননি এতদিন। কিন্তু সুজন ও লিজার সংসারে ফাটল ধরানোর পর থেকে তার নানা কর্মকাণ্ড প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। আগে শোবিজ অঙ্গনে পা রাখে রিয়া। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে রিয়া সিলেট নগরীর রুবেল নামে এক ছেলের হাত ধরে প্রবেশ করে এ জগতে। দেখতে বেশ সুন্দরী হওয়ায় এ জগতে পা ফেলার পরপরই আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ইতিমধ্যে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছে সে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- টেক্কা খান, তিন চাকার হানিমুন, কুদ্দুস চেয়ারম্যান, ফুটানি কইর্যা ধরা খাইছি, মামুর বাড়ি, গাউর দামান্দ, তিন নাটা ভূতের আসরে, উল্টাপাল্টা প্রেমসহ আরও কয়েকটি। এছাড়া নিশি রাইত, অন্তর, বন্ধু দরদিয়া, বাঁশি নিলো কুলমান ও বন্ধু রঙ্গিলারে সহ বেশ কয়েকটি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছে সে। শোবিজে নাম কুড়ানোর পরপরই তার আসল চরিত্র ফুটে উঠতে থাকে। বিয়ে করে পর পর চারটি। প্রতিটি বিয়েতেই নিয়েছে প্রতারণার আশ্রয়। বড় অঙ্কের কাবিন নিয়ে বিয়ের পরপরই ভেঙে যায় প্রতিটি সংসার। আর মাঝপথে রিয়া লুটে নেয় টাকা। কারও কাছ থেকে ২ লাখ, আবার কারও কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে সে। রিয়ার সঙ্গে প্রথম বিয়ে হয় লন্ডন প্রবাসী রাজনের। তার কাছ থেকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় রিয়া। বন্ধুরা জানায়, প্রথমে রিয়ার প্রতারণার জালে আটকা পড়ে রাজন। এরপর প্রেম প্রেম খেলে রিয়া টাকা লুটে নেয়। কয়েক মাস এক সঙ্গে কাটানোর পর রাজন লন্ডন চলে গেলে তখন সব ভুলে যায় রিয়া। ঘটে সম্পর্কচ্ছেদ। এরপর রিয়া আরেক যুবককে নিয়ে আনন্দ-ফুর্তিতে মেতে ওঠে। ওই যুবকের নাম রাসেল। তার বাড়ি সিলেটের কুরুয়ায়। রাসেলের সঙ্গে বেশ কয়েক মাস চুটিয়ে প্রেম করে রিয়া। ওই সময় প্রতি মাসেই বড় অঙ্কের টাকা রাসেলের কাছ থেকে লুটে নেয় রিয়া। এক পর্যায়ে রাসেলের সঙ্গে রিয়ার সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু বিয়ের পরদিনই রূপ বদল করে রিয়া। রাসেলকে বলে, আমাকে ডিভোর্স দাও। এ কথা শুনে অবাক হয় রাসেল। শুরু হয় দ্বন্দ্ব। রিয়ার প্রতারণার ফাঁদ বুঝতে পারে রাসেল। এ নিয়ে শোবিজ অঙ্গনে কয়েকজন দফায় দফায় বৈঠক করেন। পরে প্রতারণার ফাঁদ থেকে বাঁচতে রিয়াকে দু’লাখ টাকা দিয়ে বিয়ের ইতি ঘটায় রাসেল। এরপর সিলেট নগরীর আজাদ নামের আরেক যুবকের সঙ্গে প্রেমের ফাঁদ পাতে রিয়া। বিষয়টি বুঝতে পেরে সে মুখ খুলেছে। আজাদকে বিয়ে করতে নানা ছলচাতুরি আশ্রয় নেয় রিয়া। এ নিয়ে গত ১৫ দিন রিয়া ও আজাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। আজাদ জানিয়েছেন, রিয়া তার কাছ থেকে ফার্নিচার ও বিভিন্ন প্রজাতির একুরিয়াম মাছ নেয়ার পর এখন তার পিছনে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে রিয়া মানবজমিন-এর কাছে স্বীকার করেছে, আজাদের সঙ্গে তার প্রেম চলছে। তিনি জানান, ‘আজাদের সঙ্গে আমার দিনে এক শ’ বার ঝগড়া হয় আবার এক শ’ বার মিলমিশ হয়।’ এদিকে, রিয়া থাকে সিলেট নগরীর মেজরটিলার নুরপুর এলাকায়। একটি তেতলার বাসার নিচ তলায় মা ও বোনদের নিয়ে সংসার পেতেছে সে। তার বাসা অচেনা, অজানা যুবকদের নিরাপদ আস্তানা। মেজরটিলা এলাকার কয়েকজন যুবক জানান, কয়েক দিন আগে টিএনজ এক ছেলেকে বাসায় নিয়ে যায় রিয়া। এক পর্যায়ে ওই ছেলের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, স্বর্ণের চেইন রেখে দিলে এলাকার যুবকরা ক্ষুব্ধ হয়। তারা রিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষেপে ওঠে। পরে মোবাইল ফোন, টাকা, স্বর্ণের চেইন ফেরত দিয়ে রিয়া রেহাই পায়। এর আগে আরেক যুবক বিয়ের নামে রিয়ার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছে। কয়েকজন পরিচালক জানান, রিয়ার ব্যবসা হচ্ছে মিউজিক ভিডিওর নামে প্রবাসী ধনাঢ্যদের পটানো। এ কাজে তাকে সহায়তা করে শোবিজের কয়েকজন ক্যামেরাপার্সন। প্রবাসী টাকাওয়ালাদের নিয়ে শুটিংয়ের নামে মনোরম লোকেশনে চলে যায় তারা। একটি গান শুটিং করার পর ওই প্রবাসীকে নিয়ে আমোদ-ফুর্তিতে মেতে ওঠা রিয়ার কাজ। এভাবে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে সে। এমনকি ঢাকা নামী শিল্পীদের গান নিয়ে অন্যরকম ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে রিয়া ও ওই চক্র। সিলেট শহরের সব ডিজে পার্টিতে দেখা যায় রিয়ার সরব উপস্থিতি। স্বল্প বস্ত্রে পার্টি মাতিয়ে রাখতে দেখা যায় তাকে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, রিয়া প্রতারণার অন্যতম সঙ্গী হতে শুরু করেছে তার ছোট বোন। সমপ্রতি একটি ঘটনায় তার ছোট বোন রাহী প্রতারণার মাধ্যমে কুলাউড়ার এক ছেলের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কুলাউড়ার ওই ছেলের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে মোবাইল ফোনে ছবি তোলে রাহী। পরে ওই ছবিকে পুঁজি করে সে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা লুটে নেয়। মেজরটিলার নুরপুর এলাকার বাসিন্দারা জানান, শুধু রিয়া নয় তার পুরো পরিবার ছলচাতুরির মাধ্যমে টাকা কামানোর ধান্ধায় ব্যস্ত। এ ব্যাপারে মডেল রিয়া মানবজমিনকে জানান, তার বিরুদ্ধে অনেকেই এখন অনেকটা রটনা রটাচ্ছে। যা ঠিক নয়। ছেলেরা তাকে ধোঁকা দেয়। তিনি কখনও কাউকে ধোঁকা দেননি। সুজন-লিজার সংসারের ভাঙন সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।
Leave a Reply