জেড করিম জিয়া, টেকনাফ … ভেসে আসা শিশুটির নাম হল পরী, দায়িত্ব নিল বিজিবি। মিয়ানমার থেকে নাফনদীতে ভেসে আসা দেড় মাসের শিশুটির ভরণ পোষন ও দায়ভারের দায়িত্ব নিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। শিশুটি যেহেতু শাহপরীরদ্বীপ এলাকা থেকে পাওয়া যায়, সেহেতু তার নাম হল পরী এবং এই নাম নির্ধারণ করেন বিজিবির সদর দপ্তর। গত ১২ জুন মঙ্গলবার রাত অনুমান ১২ টার দিকে বিজিবির টহল সদস্যরা দেখতে পান, একটি নৌকা শাহ পরীর দ্বীপের নাফনদীতে ভাসছে। নৌকায় কেউ আছে জানতে চাইলে কোনো প্রতিউত্তর না পাওয়ায় বিজিবি সদস্যরা নৌকার কাছে যান। রাত প্রায় ৩ টার দিকে তারা নৌকাটিকে শাহপরীরদ্বীপ জেটিঘাটে ভেড়াতে সক্ষম হন। এসময় নৌকাটি তল্লাশি করে দেখেন, নৌকাটিতে কেউ নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখে তারা অনুমান করলেন, সেখানে লোক ছিল। নৌকাটিতে তল্লাশির এক পর্যায়ে ইঞ্জিন রুমের ভেতর গিয়ে বিজিবি জওয়ানরা একটি কাপড়ের উপর রাখা প্রায় অজ্ঞান ও কঙ্কালসার একটি জন্ম থেকে ঠোঁট কাটা প্রতিবন্ধী মেয়ে শিশু। নেই তার কান্নার শক্তি, যেন দুর্ভিক্ষপীড়িত বিধ্বস্ত দেশের প্রতিচ্ছবি। জওয়ানরা দেখে প্রায় অসাড় শিশুটির শ্বাস চলছে। এসময় তারা শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে বিজিবি ক্যা¤েপ নিয়ে যায় এবং পরে তাকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ঘোলাপাড়ার স্থানীয় জেলে কবির আহমদ মাঝির হাতে তুলে দেন। কবির আহমদ শিশুটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে স্ত্রী মোস্তফা বেগমের হাতে তুলে দেন। সেই নিজেও ৯ সন্তানের জননী। শিশুটিকে দেখেই মোস্তফা বেগম নিজের সন্তানের মত বুকে টেনে নেন। এ যেন তার কোল থেকে জন্ম নেওয়া সদ্য এক শিশু। এরপর দিন জাতীয় ও স্থানীয় গনমাধ্যমে ফিচার প্রকাশিত হয়। “কেউ লিখেছেন, সাগরে ভেসে আসা শিশুটি কোল পেল। আবার কেউ লিখেছেন, শিশুটি রোহিঙ্গা। আবার কেউ লিখেছেন, টেকনাফের তীরে কঙ্কালসার শিশু”। এ শিশুটির ভবিষ্যত নিয়ে দ্বিধাদন্ধে পড়ে যায় বিজিবি। শিশুটিকে না পারছে পুশব্যাক করতে কিংবা আইনের আওতায় আনতে। বিষয়টি বিজিবি সদর দপ্তরে অবহিত করলে অবশেষে গতকাল ১৮ জুন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আনোয়ার হোসেন শিশুটির দায়িত্ব বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)র ভরনপোষনের দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষনা দেন। টেকনাফ ৪২ ব্যাটলিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল জাহিদ হাসান দত্তক মা মোস্তফা বেগম সহ শিশুটিকে নিয়ে টেকনাফ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ আতাউর রহমান শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এব্যাপারে টেকনাফ ৪২ ব্যাটলিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল জাহিদ হাসান জানান, মানবিক দিক বিবেচনা করে শিশুটিকে না রোহিঙ্গা না বাংলাদেশী তা বিবেচনা না করে এক মানব শিশু হিসেবে আখ্যায়িত করে শিশুটির দায়-দায়িত্ব বিজিবি কর্তৃপক্ষ নিয়ে মোস্তফা বেগমের হাতে দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply