ফরিদুল মোস্তফা খান, কক্সবাজার/
জামায়াত নিয়ন্ত্রিত বেসরকারি ক্লিনিক চকরিয়ার জমজম হাসপাতালের বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনায় শিবির ক্যাডারদের পৃষ্টপোষকতা ও তাদের অর্থ দিয়ে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে জঙ্গী কানেকশনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শুধু তাই নয়, জমজম হাসপাতালের বিরুদ্ধে রোগী ঠকানোসহ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার নামে বেপরোয়া বাণিজ্যের অভিযোগও এখন ভুক্তভোগীদের মুখেমুখে। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা উক্ত হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, সেবক-সেবিকা কর্তৃক সাধারণ রোগীদের কাছ থেকে গলাকাটা অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি এক শ্রেণীর আন্ডার গ্রাউন্ড ওষুধ কোম্পানীর সাথে সখ্যতার খবরও চকরিয়া শহরে এখন ওপেন সিক্রেট। ফলে নাজুক স্বাস্থ্য সেবার এই অঞ্চলের হাজারো জনগোষ্ঠী উক্ত জমজম হাসপাতালের গলাকাটা বাণিজ্যের শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত দুর্বিসহ জীবনের মুখোমুখিতো হচ্ছেন, চকরিয়া উপজেলার স্বাস্থ্যসেবাও নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। জানা গেছে, থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে দর্শনীয় বিলবোর্ড ও চটকদারি বিজ্ঞাপনই কেবল জমজম হাসপাতালের ভরসা। উন্নত চিকিৎসার আধুনিক যন্ত্রপাতি ও খুব বেশি উপযুক্ত চিকিৎসক না থাকলেও হাসপাতালটি বরাবরই বেপরোয়া, অতিরিক্ত রোগী ভাগিয়ে নিতে। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতদের ব্যবসায়িক অসততার কারণে এখানে সুস্থরাও অসুস্থ হয়ে পড়বে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাদের সার্ভিস চার্জ যেন সাধারণ মানুষের উপর ভুতের বোঝা। পরিবার পরিকল্পনা, প্রজনন স্বাস্থ্য, নিরাপদ মাতৃত্ব, প্যাথলজি, ইউরিন, আলট্রাসনোগ্রাফি, এক্স-রে, ভেকসিনসহ তাদের সকল স্বাস্থ্য সেবাই শুধু টাকার খেলা।
অ™ভুদ ব্যাপার হচ্ছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি সাধারণ চেকআপে যেখানে ১ শ টাকায় হয়, সেখানে জমজম হাসপাতালে তা করতে ১ হাজার টাকা লাগে। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটি সরেজমিন পরিদর্শনে ও বিভিন্ন পর্যায়ে সেবাগ্রহীতাদের সাথে আলাপে জানা গেছে উল্লেখিত তথ্য।
সুত্র জানায়, জমজম হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রত্যেকরই কাছে কয়েকজন করে দালাল রয়েছে, যারা নিয়মিত রোগী এনে দিচ্ছে।
সেখানকার চিকিৎসক ও সেবকের চেয়ারে বসে থাকা ব্যক্তিদের প্রধান টার্গেট সেবা নয়, ব্যবসা। অথচ, দেশের স্বাস্থ্যসেবায় পরিবর্তন এনে সাধারণ রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসলেও এই হাসপাতালে কর্মরতরা তা কোন দিনই কর্ণপাত করেননি। এ কারণে কতিপয় লোভী চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সেবক-সেবিকারা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেলেও সাধারণ জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে পুরো স্বাস্থ্যখাত, জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের ভূমিকা নিয়ে। এতে করে মহাজোট সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
অপর একটি সুত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার খুব অল্প সময়ে চকরিয়ায় চরম বিতর্ক সৃষ্টি করা উক্ত জমজম হাসপাতালের প্রত্যেক চিকিৎসক কতিপয় ভূঁইফোড় ও নিম্নমানের ওষুধ কোম্পানীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার পাশাপাশি রোগী প্রতি শতাংশ হারে প্যাথলজি কমিশন ভোগ করছেন। এছাড়া উক্ত হাসপাতালে ইতিপূর্বে বহু রোগী নিজেদের রোগ সুস্থ তো দুরের কথা, উল্টো রোগব্যাধি বাড়িয়ে জেলা শহর কক্সবাজার ও দেশের বিভিন্ন স্থানে হাসপাতাল ক্লিনিকে ধর্না দিচ্ছে। এই অবস্থায়, ভোক্তভোগী লোকজন বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অতঃপর বেপরোয়া বাণিজ্য বন্ধ পূর্বক উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করণের জন্য সকল গোয়েন্দা সংস্থা, জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের আন্তরিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।##
জেলার স্বাস্থ্য সেবায় ঝাড়ফুক ও লতাপাতার আগ্রাসন:
চটকদারী বিজ্ঞাপনই চলছে কক্সবাজারে লতাপাতা ও ঝাড়ফুক কেন্দ্রীক চিকিৎসা সেবা। বনলতা কবিরাজী, মহাবীর চির প্রহরী, লাইফ ভিটা হারবাল, ফাল্গুনী হারবাল, বাংলাদেশ হারবাল সেন্টার, গোল্ডেন হেলথ কেয়ার, মধুময় দাম্পত্য জীবন, পুরুষের জন্য সেবার দরজা খোলা, বিশ্বাসে মুক্তি মিলে, শতভাগ গ্যারান্টি, মোটা-তাজা ইত্যাদি প্রচার প্রচারনাই এসব প্রতিষ্ঠানের দৈনিক আয় রোজগার বাড়লেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ রোগীরা।
মেডিকেল স্বাস্থ্য অভিজ্ঞরা জানান, কাগজে প্রতিদিন দৃষ্টিনন্দন এসব বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহক ভিড়ানোর যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার কোনটিতেই স্বাস্থ্য সম্মত পর্যাপ্ত জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষিত চিকিৎসক আছে বলে মনে হয়না। যদি থাকতো তাহলে তারা কোনদিনই অল্প টাকার জন্য সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতনা। কিন্তু দুর্ভাগ্য রোগী সুস্থ হবেনা জেনেও শুধুমাত্র নিজেদের উপার্জনের জন্য এসব প্রতারকরা হরদম নানান জটিল রোগের চিকিৎসার প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
জেলা শহর কক্সবাজারের প্রাণকেন্দ্র ও প্রায়সব উপজেলায় রয়েছে এরকম প্রতিষ্ঠান। মজার কথা হচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে সাইনবোর্ড। সেখানে চিকিৎসকের নামের আগে পরে হরেক উপাধী আছে। ফলে দরিদ্র এ দেশের সাধারণ রোগীরা সরল বিশ্বাসে সেখানে ঢুকে পড়ে জীবনে আরোগ্য লাভ করছেনা বরং নিজের ছোট খাট রোগ ব্যাধি আরও বড় করে এক পর্য়ায়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে শরণাপন্ন হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন, হাসপাতালে যৌন রোগসহ বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন যতগুলো রোগী আসছে তার সিংহভাগই লতাপাতা ও ঝাড়ফুক বিশ্বাস করে আগে নানান প্রতিষ্ঠানের ধর্ণা দিয়েছেন। সেখান থেকে দেওয়া ঔষুধ, মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক তেল জাতিয় পদার্থ ম্যাসেজসহ আজগবী পদ্ধতির চিকিৎসা গ্রহণ করাই এদের করুন অবস্থা।
চিকিৎসকরা মনে করেন, একারণেই আমাদের দেশে প্রতিদিন অগনিত মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে।
ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি জানান, ফাল্গুনী হারবাল সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ডায়াবেটিস নির্মুল কোর্স সেবন করে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তাদের ঔষুধে ডায়াবেটিস কোনদিন নিয়ন্ত্রনে আসেনি বরং বেড়ে গেছে বলে জানিয়ে ওই ব্যক্তি আরো জানান, তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের আমাশয় নির্মুলের কিছু ঔষুধও সন্তানের জন্য ক্রয় করে তিনি ঠকেছেন।
অপর এক ব্যক্তি জানান, তিনি লাইফ ভিটা হারবালের গোপনাঙ্গ বড় করার একটি বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে সেখান থেকে ঔষুধ নিয়েছিলেন। কিন্তু এটাই সত্য তাদের ঔষুধে কোন উপকারতো হয়না বরং চিরতরে পুরুষত্ব হারাবার উপক্রম হয়েছে।
এই অবস্থায় অন্তত দেশের স্বাস্থ্য সেবা রক্ষার স্বার্থে বিষয়টির সঠিক খোঁজ খবর নিয়ে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। এব্যাপারে অবশ্যই র্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ান (র্যাব)সহ আইনশৃংখলা বাহিনীও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে দেশের স্বার্থে।
Leave a Reply