রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি বস্তিতে গতকাল সকালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৭শ’ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভস্মীভূত ঘরের নিচে চাপা পড়ে মায়া (৬) নামের এক শিশু মারা গেছে বলে তার মা আছিয়া বেগম জানান। আরও এক শিশুসহ চারজন নিখোঁজ রয়েছে। দমকল কর্মীরা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিস অবশ্য শিশু মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সোয়া ৯টায় বস্তির পূর্বপাশ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই তা লাগোয়া বস্তিঘরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আগুন নেভাতে গিয়ে প্রায় ৫০ জন গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আশপাশের ক্লিনিকে নিয়ে যায়। রেড ক্রিসেন্টের একটি দল আহতদের চিকিত্সা প্রদানের জন্য সেখানে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতর থেকে একটি ইউনিট পরে বারিধারা ও তেজগাঁওয়ের মোট ৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ব্যাপারে বস্তির মালিক হেলালউদ্দীন সাংবাদিকদের জানান, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তিনি অভিযোগ করেন, পাশের পদ্মা গামের্ন্টের মালিক খান মোহাম্মদ আমীর হুসেন বিল্টু বেশ কয়েকদিন আগে আমাদের এখান থেকে বস্তি উঠিয়ে নেয়ার চাপ দেয়। এখান থেকে উঠে না গেলে তিনি মামলা দেয়ার হুমকি দেন। বস্তিটির সীমানা আরও অনেকদূর পর্যন্ত ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে ভূমিদস্যুরা বস্তির জমি দখল করেছে। জমি দখলকে কেন্দ্র করে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি দাবি করেন এবং একে ষড়যন্ত্র বলে অবহিত করেন। বস্তির বাসিন্দা মাহিদুল ইসলাম কান্নারত অবস্থায় জানান, সকালে নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার স্ত্রী প্রথমে আগুন আগুন বলে চিত্কার করলে আমার ছেলেকে নিয়ে ঘর থেকে দ্রুত বের হয়ে যাই। তিনি বলেন, জীবনের শেষ সম্বলটুকু আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। তিনি বলেন, ঘটনার ১ ঘণ্টা পর দমকল কর্মীদের গাড়ি এসে পৌঁছে। কিন্তু আমরা আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তাদের খবর দেয়েছি। যথাসময়ে দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে এলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আর কম হতো। তিনি জানান, এখানে ৭০০ ঘর ছিল। যা সব আগুনে পুড়ে গেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে দক্ষিণপাশে একটি কেমিক্যালের কারখানা। বস্তির কয়েক হাত দূরে কেমিক্যালের ড্রাম পড়ে ছিল। আগুনের তীব্রতায় পদ্মা গামের্ন্টের কয়েকটি কাচ ভেঙে গেছে দাবি করেছে মালিকপক্ষ। এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান আকন্দ জানান, বৈদ্যুতিক শট সার্কিট বা রান্না ঘরের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। বস্তির ঘরগুলো কাছাকাছি হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া হাতিরঝিলের পাশে অবস্থান হওয়ায় প্রচুর বাতাসে আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায়। এতে আগুন বস্তির বিভিন্ন স্থানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। তাছাড়া ঘর থেকে দ্রুত বের হওয়ার সময় অনেকেই আহত হন। তিনি দাবি করেন, সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস হওয়ায় রাস্তায় যানজট থাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে আসতে দেরি হয়েছে। এ অগ্নিকাণ্ডে কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাত্ক্ষণিক জানা যায়নি। তবে স্থানীয়দের দাবি প্রায় ১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
Leave a Reply