প্রতিবছর ঈদের সময় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে দেশী-বিদেশী অসংখ্য পর্যটকের আসেন। কিন্তু এবার ঈদুল ফিতরের সরকারী ছুটিকে উপভোগ্য করতে আশাতীত পর্যটক আসছেন না পৃথিবীর এই দীর্ঘতম সমুদ্রের দেশে।
ঈদের পর যেসব পর্যটক কক্সবাজারের আসার জন্য হোটেল বুকিং দিয়েছিলেন হরতালের কারণে তারা বুকিং ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে হোটেল বুকিং এর জন্য অগ্রিম দেয়া প্রায় দুই কোটি টাকা ফেরত দিতে হয়েছে বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার কলাতলীস্থ তারকা মানের হোটেল সী প্যালেসের এইচআর এডমিন মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, দীর্ঘ ৬ মাস ধরে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নানা কারণে কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন একদম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কক্সবাজারের হোটেল মোটেল এবং কটেজগুলো গ্রাহক ছাড়াই খালি পড়ে ছিলো। ফলে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে।
“আমরা আশা করেছিলাম ঈদের পর পর্যটক আসলে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবো। কিন্তু, জামায়াতের ডাকা দুইদিনের হরতালের কারণে অনেকেই বুকিং ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন,” জানান তিনি।
হোটেল কক্স টুডে এর ফ্রন্টডেস্ক ম্যানেজার আবু তালেব জানান, “হরতালের কারণে ইতিমধ্যে তার হোটেল থেকে শতকরা ৫০ ভাগ পর্যটক বুকিং এর অগ্রিম টাকা ফিরিয়ে নিয়েছেন। আর যারা বাকী আছেন তারা প্রতিদিনই যোগাযোগ করছেন টাকা বুকিং বাতিল করার জন্য।”
তিনি বলেন, “কর্মচারীসহ ব্যাংকলোন পরিশোধ করার জন্য কিছুটা আশা থাকলেও হরতালের কারণে ক্ষতি পুষিয়ে উঠা কঠিন হয়ে পড়ছে। কর্মচারীদের বোনাসতো দূরের কথা বেতন দিয়েও বিদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।”
কক্সবাজারের ফাইভ স্টার হোটেল ওশান প্যারাডাইসের ফাইনান্স কন্ট্রোলার মো. হায়াত খান বলেন, ছয়মাস ধরে গড়ে এক কোটি টাকা করে লোকসান দিচ্ছে তাদের হোটেল। ঈদে কিছু বুকিং হয়। কিন্তু হরতালের কারণে সব বাতিল হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এবার ঈদুল ফিতরের ছুটিতে প্রায় ৭ লাখ পর্যটক অগ্রিম বুকিং দেয় হোটেল মোটেল এবং কটেজগুলোতে। অগ্রিম বুকিং বাবদ প্রায় ২ কোটি টাকা পড়ে কক্সবাজারের তারকা মানের হোটেলসহ ৪শতাধিক হোটেল-মোটেল ও কটেজগুলোতে।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি রাজা শাহা আলম জানান, যে সংখ্যক পর্যটক আসার কথা ছিলো তা আর আসছে না। পর্যটন শিল্পকে বাঁচাতে কক্সবাজারকে হরতালমুক্ত করার দাবি জানান তিনি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: রুহুল আমিন দু:খ প্রকাশ করে বলেন, “সব কিছু সঠিকভাবে চলছিল। প্রতি বছরের মতো দেশী-বিদেশী পর্যটকরা কক্সবাজার আসবে এবং নিরাপদে বাড়ি ফিরবে এটাই ছিল বাস্তবতা। কিন্তু, জামায়াতের ঢাকা হরতালের কারনে চোখের সামনে কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে দেখে খুবই দু:খ পাচ্ছি।”
তিনি জানান, ইতিমধ্যে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আলাপ করেছেন কক্সবাজারকে কিভাবে হরতালের আওতামুক্ত রাখা যায়। কিন্তু, তাতে কি হবে? পর্যটকরা সড়ক পথে নিরাপদে যাতায়াত করতে না পারলে তারা কক্সবাজারে আসবেন কিভাবে।