সৈয়দ আবুল মকসুদ / ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা কিংবা সিঙ্গাপুরের মতো বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেনি। বাংলাদেশের অভ্যুদয় রক্তাক্ত যুদ্ধের ভেতর দিয়ে। সেই যুদ্ধ শুধু হিংস্র পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ ছিল না, বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছিল আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো। তখন ছিল দুই মেরুবিশিষ্ট বিশ্ব: আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি পুঁজিবাদী বিশ্ব এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সরকার অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে অনড় ছিল। ভারতের সর্বাত্মক সমর্থন এবং বিলুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের কূটনৈতিক সমর্থন ও তৎপরতা আমাদের বিজয় ত্বরান্বিত করে। পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় আমেরিকার সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে ঘোরাফেরা করছিল, কিন্তু বাঙালির পক্ষে ভারত, রাশিয়া ও বিশ্বজনমত জোরদার থাকায় আমেরিকার নৌবহর আস্তে করে অন্যদিকে রওনা দেয়। ঘটনাটা ’৭১-এ না হয়ে ১৯৮৯-এর পর হলে দিত না।
১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল বাহিনীর সর্বাধিনায়কের অধোমুখে আত্মসমর্পণ করার পরও বেশ কিছুদিন পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে মাস তিনেকের মধ্যেই বিশ্ববাসী উপলব্ধি করে, শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ টিকে গেছে। অনেকেরই সংশয় ছিল, কোনো রকমে টিকে গেলেও উঠে দাঁড়াতে পারবে না। এর-ওর থেকে দানখয়রাত নিয়ে কোনো রকমে ধুকপুক করে বেঁচে থাকবে। বৃহত্তম পরাশক্তির সবচেয়ে খ্যাতিমান মন্ত্রী পরাবাস্তব কবিদের ভাষায় বলে দিলেন: বাংলাদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি।
এত দিন পর আমার মনে হয়, জনাব কিসিঞ্জার উপযুক্ত মেটাফোরই ব্যবহার করেছিলেন। বাংলাদেশ একটি ঝুড়ি বটে! কিন্তু এখন দেখছি সেই ঝুড়িটির খাঁচাটা নয়, তলাটাই আসল। বাংলাদেশ নামক খাঁচার তলাটাই মূল্যবান। তার তলায় তেল আছে, গ্যাস আছে, কয়লা আছে। এগুলোর চেয়েও মূল্যবান আরও যে কিছু নেই, তা কী করে বলি। হীরা, মণিমুক্তাও থাকতে পারে এবং ধারণা করি, আছে বলেই বাংলাদেশে নিযুক্ত সবচেয়ে বড় কূটনীতিক দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে সফর করে বাংলার মানুষকে বলছেন, আগামী অত বছরের মধ্যে বাংলাদেশ এশিয়ার টাইগার বা বাঘ হবে। তাঁর বেঁধে দেওয়া সময়টা খুব বেশি দূরে নয়।
ঝুড়ি, বাঘ প্রভৃতি রূপকগুলো কবিতায় মানানসই। এখন দেখছি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে কম জুতসই নয়। আমেরিকানরা মেটাফোর বা রূপকালংকার ব্যবহার করে ভাব প্রকাশ পছন্দ করেন। বাংলাদেশ যে বাঘ হবে, তা আসল বাঘ নয়, কাগজের বাঘও নয়—অর্থনৈতিক বাঘ। এক বিরাট অর্থনৈতিক শক্তি। তাঁর এই কথা শুনে বড় বড় দলের নেতারা খুশিতে আটখান। তাঁরা ওই বাঘের পিঠে উঠে বসার জন্য প্রতিযোগিতায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
বাংলাদেশ নামক বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়ার আশাতেই কেউ নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য রাস্তাঘাট উত্তাল করে তোলেন। কেউ ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেন। জনগণকে বুঝ দেন, আমরা কিছুই করিনি, যা করার আদালত করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ নাবালক থেকে সাবালক হওয়ারও চার-পাঁচ বছর পর ভোটার হন। তাঁরা সব বোঝেন। তাঁরা ঝগড়াটে দুই পক্ষের কোনো পক্ষেই নন। তাঁরা চান একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং তার মাধ্যমে একটি দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত সরকার।
বাংলাদেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ মানুষ দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা বললেও দেশের সাধারণ মানুষ ছাগল নয়। ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা তাঁদের যথেষ্টই রয়েছে। দীর্ঘদিন ইংরেজ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করার ফলে এ দেশের জনগণের একটি বিশেষ ধরনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা অর্জিত হয়েছে। বিশেষ করে পঞ্চাশের দশক থেকে তাদের রাজনৈতিক চেতনা মোটের ওপর ভালোভাবেই বিকশিত হয়েছে।
তবে সেই রাজনৈতিক যোগ্যতা যতটা না সৃষ্টিশীল বা গঠনমূলক, তার চেয়ে বেশি নৈরাজ্যমূলক ও প্রতিবাদী।
বাংলাদেশের আজ একটি আন্তর্জাতিক গুরুত্ব তৈরি হয়েছে, যা সত্তর বা আশির দশকেও ছিল না। এই গুরুত্ব তৈরির পেছনে সরকারের ভূমিকা খুবই কম। বেসরকারি উদ্যোগে গ্রামীণ দারিদ্র্য যথেষ্ট কমেছে। কম আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। শিক্ষার হার বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি দুই দিকেরই ভূমিকা রয়েছে। বেসরকারি তৎপরতায় নিম্নমধ্যবিত্তের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। সরকারি খাতে সীমাহীন দুর্নীতি না হলে আরও বেশি সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতি হতে পারত। তৈরি পোশাকশিল্পের প্রসার ঘটায় দরিদ্র মেয়েদের ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়েছে। পোশাকশিল্প থেকে অর্জিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ত পানি করা টাকা এসে জমা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিন্ধুকে। দরিদ্র মানুষের মাথার ঘাম পায়ে ফেলা টাকায় ফুটানি করছে একটি ভুঁইফোড় শ্রেণী। যাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক টাউট-বাটপার। সৎ মানুষের বাজারদর নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশ যে মোটামুটি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে, তার জন্য কৃতিত্বের দাবিদার দেশের একটি উদ্যোগী শ্রেণী। তারা আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভালো অবস্থানে চলে গেছে। আমাদের সরকারের সঙ্গে সারা দুনিয়ার দেশগুলোর সম্পর্ক মোটেই বন্ধুত্বপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ না হলেও আমাদের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বহির্বিশ্বের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানি ও সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে তাদের একটি নতুন কর্মক্ষেত্র হিসেবে পেয়ে গেছে। ফলে বাংলাদেশের উপকারও হচ্ছে, বিপদও দেখা দিয়েছে। ভালো নেতৃত্ব হলে বিপদের ঝুঁকিটা কম হতো।
স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকেও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বাংলাদেশ আজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে শূন্য বাস্কেট একদিন অবহেলার পাত্র, সেই বাংলাদেশকে আজ আমেরিকা, চীন ও ভারত আদর করে তাদের কাছে টানতে চায়। এই কাছে টানার পরিণাম দুই রকম হতে পারে—লাভজনক অথবা ক্ষতিকর। বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নের মুলাটা নাকের ডগায় ঝোলানোর অর্থ আমাদের সরকারি দল ও বিরোধী দলের কাছে কী, তা তারা জানে। কিন্তু আমার নিজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ও রাজনীতিতে যেটুকু জ্ঞান আছে, তাতে মনে হয় এই যে বাংলাদেশকে কাছে টানাটানির ব্যাপার—তা বাংলাদেশের বর্তমান দুর্বল অবস্থাকেই প্রতিপন্ন করে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত, অর্থাৎ নেতৃত্ব বলিষ্ঠ হলে শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ধরনটা হতো অন্য রকম। পামপট্টিমূলক নয়, প্রতারণামূলক নয়।
বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দল দুটির নতজানু নীতি এবং তাদের কূটনৈতিক দক্ষতার অভাব দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করে দিয়েছে। ইতিহাসের কাঠগড়ায় একদিন তাদের দাঁড়াতে হবে। কিন্তু তত দিনে দেশের ক্ষতি যা হওয়ার, তা হয়ে যাবে। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি শক্ত অবস্থানে থাকলে আমেরিকা, চীন, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের শাসক দলগুলোর দ্বিপক্ষীয় অন্য রকম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হতো। সে সম্পর্ক হতো মর্যাদাকর। শাসক দলগুলোর চারিত্রিক দুর্বলতা, নীতিহীনতা এবং তাদের মধ্যে বিবদমান অবস্থার কারণে শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক দাঁড়িয়েছে দাতা ও গ্রহীতার দয়া ও দাক্ষিণ্য পাওয়ার। বন্ধুত্বের নয়।
তাঁরা যদি নীতিবোধসম্পন্ন ও ন্যায়পরায়ণ গণতান্ত্রিক নেতা হতেন, তাহলে বিদেশি প্রভুরাও তাঁদের মর্যাদা দিতেন। ৪০ বছরের সব সরকারের চরিত্রে এক অভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যাবে। তারা রাজনৈতিকভাবে হতে চায় প্রবল ক্ষমতাসর্বস্ব এবং অর্থনৈতিকভাবে সীমাহীন বিত্তের অধিকারী। ক্ষমতা সীমাহীন করতে চায় অর্থবিত্তের জন্য, অর্থবিত্ত তাদের প্রয়োজন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এবং গিয়ে টিকে থাকার জন্য। তাদের সম্পর্ক জনগণের সঙ্গে নয়, ক্যাডারদের সঙ্গে। জনগণকে ভালোবাসলেই প্রতিদান পাওয়া যায়, ক্যাডারদের দিয়ে টাকা ছাড়া কিছু করানো যায় না। ক্যাডার পুষতে টাকার প্রয়োজন। সেই টাকা রোজগারের জন্যও তাদের ক্ষমতায় যাওয়া দরকার।
বাংলাদেশের রাজনীতির দুই শিবিরই সুপরিকল্পিতভাবে চায়, দেশের মধ্যে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থা টিকে থাকুক। সাংঘর্ষিক অবস্থা না থাকলে ক্যাডাররা বেকার হয়ে যাবে। অতীতে আমরা বারবার দেখেছি, ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশীরা অস্থিরতার সৃষ্টি করেছেন তাঁদের রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। যেহেতু আমাদের জনগণের একটি বিরাট অংশ অশিক্ষিত ও দরিদ্র, শিক্ষিত মধ্য শ্রেণী সুবিধাবাদী, এখানে যুক্তি ও বিচার-বিশ্লেষণ এবং আলাপ-আলোচনামূলক রাজনীতি মূল্যহীন। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকদের বিবাদ ও অনৈক্যের ষোলোআনা সুবিধা নিচ্ছেন বিদেশি বন্ধুরা। তাঁরা আমাদের দুই পক্ষের নেতাদের সকালে ব্রেকফাস্ট দিচ্ছেন, দুপুরে লাঞ্চ খাওয়াচ্ছেন, রাতে ডিনার, সঙ্গে পরিবেশন করছেন সোমরস।
প্রতি ৪৮ ঘণ্টায় একবার আমরা টিভিতে শুনছি যে অবিলম্বেই আমরা এশিয়ার টাইগার হতে যাচ্ছি। একাত্তরে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ জীবন দিয়েছিল একটি সুন্দর স্বাধীন দেশের জন্য, মানুষের মতো মানুষ হওয়ার জন্য, টাইগার হওয়ার জন্য নয়। বাঘ একটি পশু। আমাদের কাম্য ছিল মনুষ্যত্ব। পটুয়া কামরুল হাসান ইয়াহিয়ার যে মুখটি এঁকেছিলেন, তা একটি বাঘের মুখ—অর্থাৎ পশুর মুখ। সেদিন আমরা পশুর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম মনুষ্যত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে। বাঘ, ভালুক, হাতি, ঘোড়া হওয়ার জন্য নয়।
বাংলাদেশ যদি দেশের অমূল্য সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়ে মধ্য আয়ের দেশ বা তার চেয়েও বেশি কিছু হয়, তাতে জনগণের কী লাভ। ব্যাংকগুলো ভরে যাবে টাকায়। শত শত হল-মার্কের সুব্যবস্থা হবে। আমরা টাইগার হলাম, কিন্তু ব্যাংক লোপাট হলো, পুঁজি পাচার হলো, ব্রিজ বানাতে দুর্নীতি হলো—তাতে জাতি হিসেবে আমাদের কী লাভ?
সুশাসন ছাড়া মস্তবড় টাইগার বা ভালুক হওয়ায় কী যায়-আসে? সমাজে যদি ন্যায়বিচার না থাকে, মানবাধিকার না থাকে, দুর্বল যদি আইন-আদালতের আশ্রয় না পায়, নৈতিকতা না থাকে, শান্তিশৃঙ্খলা না থাকে, মানুষে মানুষে সহমর্মিতা না থাকে—টাইগার বনে গিয়ে কোনো বিপৎসংকুল বনভূমির রাজা হব আমরা?
লাখ লাখ মানুষকে বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করে, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলে সুজলা-সুফলা উত্তরবঙ্গকে মরুভূমি বানিয়ে সেই কয়লা রপ্তানি করে, বস্তাভর্তি টাকার মালিক হতে পারব। সমুদ্রবক্ষের তেলকূপ বিদেশিদের হাতে তুলে দিলে বেশ টাকাকড়ি পাওয়া যাবে। গ্যাস বহুজাতিক কোম্পানিকে দিয়ে দিলে আমাদের বড়লোক বা টাইগার হওয়া ঠেকায় কে?
খুব ধনী হলাম কিন্তু আমাদের জাতি ও সমাজ ধ্বংস হলো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চকচক করবে চাপাতি বা রামদা। টেন্ডার নিয়ে মারামারিতে প্রতিদিন পড়বে দু-একটি লাশ। মাথা ফাটবে ২০-৫০ জনের। মেয়ে শিক্ষার্থীর নাক ফাটবে প্রক্টরের ঘুষিতে। সরকারি কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে খাবেন ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের পাদুকার আঘাত। ভর্তি-বাণিজ্য, ঘুষ-বাণিজ্যের সীমা থাকবে না। বদলি-বাণিজ্য করে কেউ কেউ হবেন ধনকুবের। বনভূমি ও খাসজমি দখল হতে থাকবে অবলীলায় বিনা বাধায়। পাহাড়গুলো চলে যাবে বাঘের বংশধরদের অধিকারে। নদীর বালু তো নস্যি, পাড়ের ভূমি জবরদখল করে উঠবে দালানকোঠা। সেই ধনী বাংলাদেশ দিয়ে জনগণের কী লাভ?
এশিয়া-প্যাসিফিক বলয়ে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় আজ বাংলাদেশকে অনেকের প্রয়োজন। সে তো গেল সামরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপার। তাদের আরও প্রয়োজন বাংলাদেশের তেল, গ্যাস বা কয়লা। তারা তা বিনা পয়সায় নেবে না। বিনিময়ে দেবে ডলার বা টাকা। অর্থনৈতিক উন্নতি আমাদের অবশ্যই কাম্য। কিন্তু তা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূল্যে নয়।
বাংলাদেশ আজ দুই রাস্তার সংযোগস্থলে এসে দাঁড়িয়েছে। একটি সবকিছু গোষ্ঠীস্বার্থে উজাড় করে দিয়ে বিত্তবান হওয়ার পথ, অন্যটি আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করে আত্মবিকাশের পথ। দুটির মধ্যে কোনটিতে নেতারা হাঁটবেন, তাঁদের সেই সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে জাতির ভবিষ্যৎ।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
Leave a Reply