শফিউল ইসলাম আজদ : উখিয়ার বৌদ্ধ সম্প্রদায় বিভিন্ন গ্রামের ৩৬টি বৌদ্ধ মন্দির ও বিহারে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমার উৎসব ঝাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান পরিহার করে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়েছে। অন্যান্য বছরের মত ছিল না ফানুস উড়ানোর এবং বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে কীর্তনের অনুষ্ঠান মালা। উপজেলার প্রত্যেক মন্দিরে সাদা-মাঠা ভাবে প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করা হয়। মন্দিরগুলোতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষের উপস্থিতিও ছিল গত বছরের তুলনায় কম।
সরেজমিনে ও উখিয়া উপজেলা বৌদ্ধ সার্বজনীন উন্নয়ন কমিটি সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে উখিয়ার হলদিয়াপালং, রতœাপালং, রাজাপালং, জালিয়াপালং ও পালংখালী ইউনিয়নের বৌদ্ধ সম্প্রদায় অধ্যুষিত বিভিন্ন গ্রামের ৩৬টি মন্দির ও বিহারে একই সময়ে সকাল সাড়ে ৮টায় অষ্টশীল, ৯টায় বৌদ্ধ পূজাঁ, দুপুর ২টায় ধর্ম সভা, বিকেলে প্রার্থনা ও সন্ধ্যা ৬টায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচী সমাপ্ত করা হয়। গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ জাদী বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে দেখা যায়, নিরব পরিবেশে মন্দিরের ভিতরে বৌদ্ধ দেবের উদ্দেশ্যে নারী-পুরুষরা সমবেত প্রার্থনা করছে। এ সময় উক্ত বিহারের অধ্যক্ষ জ্যোতি শুভ ভিক্ষু ধর্মীয় নিয়মানুসারে ত্রিপিঠকের শ্লোকের মাধ্যমে প্রার্থনা পরিচালনা করছেন। প্রার্থনা শেষে তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, উখিয়া উপজেলা বৌদ্ধ সার্বজনীন উন্নয়ন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত পরিসরে পুরো উখিয়ায় বৌদ্ধ সম্প্রদায় প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করেন। এছাড়া সরকার, দেশ ও প্রত্যেক মানুষের অগ্রগতি ও শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা করা হয়। এ সময় অন্যান্য বছরের তুলনায় উক্ত মন্দিরের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। উক্ত বিহারের দায়িকা কলেজ ছাত্রী প্রতিমা বড়–য়া (২২) এ সময় জানান, গত বছরের মত আনন্দ ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এবারের প্রবারনা পূর্ণিমা পালন করতে না পারায় মনের আনন্দ কম। গত ৩০ তারিখের ঘটনা আমাদের সব কিছু ম্লান করে দিয়েছে। উল্লেখ্য প্রতি বছর অত্র এলাকার বৌদ্ধ সম্প্রদায় ঝাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে আকর্ষনীয় ফানুস বাতি (ডোলবাজি) উড়িয়ে, বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে কীর্তন ও সন্ধ্যায় সমেশ্বরে আড়ম্বর আয়োজনে সমবেত প্রার্থণা করা হত। উখিয়া উপজেলা বৌদ্ধ সার্বজনীন উন্নয়ন কমিটির আহবায়ক প্লাবন বড়–য়া ও যুগ্ন আহবায়ক শিক্ষক মেধু কুমার বড়–য়া জানিয়েছেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়ায় সংঘটিত সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে উপজেলার ৩৬টি মন্দির ও বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি/সম্পাদকদের নিয়ে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মসূচী সংক্ষিপ্ত করে অনাড়ম্বর পরিবেশে এবারের প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব পালন করা হয়। সন্ধ্যা ৬টায় প্রত্যেক মন্দিরে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে এবং দেশ-জাতির মঙ্গল ও শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে কর্মসূচী সম্পন্ন করা হয়। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী উখিয়ার প্রত্যেক মন্দিরে নিছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। সকাল থেকে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহল জোরদার করে। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা জানিয়েছেন, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বিত ভাবে বৌদ্ধ বিহার গুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ফলে শঙ্কামুক্ত পরিবেশে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শতস্ফুর্ত ভাবে অংশ গ্রহণ করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৌদ্ধ সম্প্রদায় নির্বিঘেœ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রবারণা পূর্ণিমার উৎসব পালন করেছে।
Leave a Reply