ইসমাঈল হুসাইন ইমু : রাজধানীর বেশিরভাগ মাদক স্পট পুলিশ ও র্যাবের সোর্সরা পরিচালনা করে থাকে। প্রকাশ্যে এরা মাদক ব্যবসা করলেও অজ্ঞাত কারণে এদের গ্রেপ্তার করা হয় না। এ ছাড়া এরাই এলাকার উঠতি বয়সী তরুণদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উৎসাহ দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ ও র্যাবকে অপরাধী ধরিয়ে দিতে সহযোগিতার বদলে প্রতিপক্ষের গ্র“পের সদস্যদের ধরিয়ে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা কামানোই এদের মূল লক্ষ্য। এদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করেও কোনো ফায়দা হয় না। উল্টো অভিযোগকারীকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়। এ অবস্থা গোটা রাজধানীর।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ৪৮টি থানার এলাকায় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক পুলিশ ও র্যাবের সোর্স নামক মাদক ব্যবসায়ী। এরা মাঝেমধ্যে বিরোধী গ্র“পের ২-৪ জনকে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ ধরিয়ে দিয়ে নিজেদের ব্যবসা নিরাপদ রাখে। রাজধানীর মতিঝিল, লালবাগ, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর বিহারি পল্লী, ধানমণ্ডি, নিউমার্কেট, হাজারীবাগ, খিলগাঁও, সবুজবাগসহ বিভিন্ন এলাকার সোর্সরা সরাসরি মাদক ব্যবসায় জড়িত। মাঝে মধ্যে পুলিশের গাড়িতে চলাফেরার কারণে তাদের বিরুদ্ধে মানুষ ভয়ে মুখ খোলে না।
পুলিশ সূত্র জানায়, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে সাধারণত পুলিশের সোর্স প্রয়োজন হয়। এ জন্য পুলিশের নিয়মিত বাজেটের একটা বড় অংশ সোর্সমানি হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে। তবে এ সোর্সমানির টাকা কখনও সোর্সরা পায় না। তারা এলাকায় পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা করেই তাদের পাওনা পুষিয়ে নেয়। আর এ কারণে সোর্সরা কখনও ওই টাকা দাবিও করে না।
হাজারীবাগের সুইপার কলোনি গণকটুলী এলাকার ৩ মাদক ব্যবসায়ী স্বপরিবারে অবাধে নেশাজাতীয় ইনজেকশন ও ইয়াবার ব্যবসা করে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, তাদের এক নিকটাত্মীয় র্যাবের সোর্স। মাদকের মূল ডিলারও ওই সোর্স। সোর্স পরিচয়ের কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে তারা। লালবাগ থানার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি অসীম ও তার সহযোগীরা হাজারীবাগ এলাকার সুইপার কলোনিতে মাদক ব্যবসা চালায়। লালবাগ এলাকায় চিহ্নিত এক সন্ত্রাসীর স্ত্রীর রয়েছে বিশাল মাদক ব্যবসা। ওই মহিলাও স্থানীয় থানা পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত। সোর্স অসীমকে দিনে ও রাতের বেশিরভাগ সময় লালবাগ থানায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। ধানমণ্ডি, কাঁটাবন, গ্রিন রোড ও ফার্মগেট এলাকায় মাদক ব্যবসা করছে কয়েকজন নারী ও পুরুষ। এলাকাবাসী জানিয়েছে, এরা র্যাব পুলিশের এক সোর্সের স্বজন। লালবাগ থানার এক সময়ের প্রভাবশালী ২ সোর্স এখন মতিঝিল, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ফেনসিডিল ও ইয়াবা সরবরাহকারী হিসেবে পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরে রেকর্ডভুক্ত।
খিলগাঁও থানার পুলিশের সোর্স ওহাব গোরান এলাকার ছাপড়া মসজিদের পাশে আদর্শবাগের গলিতে ইয়াবা ও ফেনসিডিল ব্যবসা চালায়। সবুজবাগের ওহাব কলোনিতে পাওয়া যায় না এমন কোনো মাদক নেই। একটি বিশাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে ওহাব কলোনির মাদক ব্যবসা।
এদিকে লালবাগ থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সাহাবুদ্দিন ওরফে বুদ্দিন বর্তমানে মতিঝিল ও সূত্রাপুর থানার সোর্স বলে নিজেকে পরিচয় দেয়। ১৯৯৮ সালে ভ্যান রফিক হত্যাকাণ্ডের আসামি সাহাবুদ্দিন। এ ছাড়া শাহবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে ২টি মাদক মামলা রয়েছে। লালবাগের বেড়িবাঁধ এলাকার জামাই ইদ্রিস অপহরণ মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও সে। সোর্স পরিচয়ে মতিঝিল এলাকায় মাদকের পাইকারি ব্যবসা করছে সাহাবুদ্দিন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাহিদা নিউমার্কেট থানার তালিকাভুক্ত মাদকসম্রাজ্ঞী। ১০ মাদক মামলার আসামি সাহিদা, সোর্স বাবু, কার্তিক, কাদের, মাসুদ ও তার সহযোগীরা বর্তমানে দেদার মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
কামরাঙ্গীরচর থানার এলাকায় মাদক ব্যবসা চালাচ্ছে হত্যা ও মাদক মামলার আসামি লালবাগের আজমল। ২০০৯ সালে নিউ পল্টন জুয়েলারি দোকানে ডাকাতি ও হত্যা মামলার আসামি সে। ১৯৯৮ সালে ভ্যান রফিক হত্যা মামলার আসামিও আজমল। ২০০৮ সালে তার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে এলাকা ছেড়ে সে কামরাঙ্গীরচর এবং বেড়িবাঁধে সন্ধ্যার পর থেকে মোল্লাকে দিয়ে ফেনসিডিল ও ইয়াবা ব্যবসা চালাচ্ছে।
মিরপুরে মাদক বেচাকেনা হয় শাহ আলী থানা এলাকায়। মাদক ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই পুলিশ সোর্স। শাহ আলী ও দারুসসালাম থানা পুলিশের এক সোর্সের স্ত্রীও বড় মাপের মাদক ব্যবসায়ী। মাদক ব্যবসার টাকায় নাজু নামের ওই মাদক সম্রাজ্ঞী মিরপুরের দিয়াবাড়ি বটতলা এলাকায় দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেছে। দারুসসালাম থানায় তার একটি মাইক্রোবাস ভাড়ায় চলছে। এ ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন থানার এলাকায় নানা ধরনের অভিযোগ আছে সোর্সদের বিরুদ্ধে। অনেক সময় এরা কারও সঙ্গে টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দোকান বা বাড়িতে মাদক রেখে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়।
Leave a Reply