পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৪ বছর পরও পাহাড়ে পুরোপুরি শান্তি আসেনি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ওই চুক্তি সম্পানের পর থেকে আজ অবধি প্রায়ই সেখানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, গুলিবিনিময় ও অপহরণ এবং মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। দুর্গম পাহাড়ে ১২টি সন্ত্রাসী গ্রুপ এখনো তৎপর। তাদের কাছে রয়েছে ভয়ঙ্কর সব অস্ত্রের মজুদ। সীমান্তপথে বিভিন্ন রুটে আসছে এসব অস্ত্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরা ও অভিযানে মাঝেমধ্যে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদের সন্ধান মিললেও বরাবরই এরা বেপরোয়া।
পাহাড়ে বিশাল এই অস্ত্রের মজুদ শুধু পাহাড়ি অঞ্চল নয়, গোটা দেশের নিরাপত্তার জন্যই মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। বলাই বাহুল্য, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের রয়েছে দেশজুড়েই নেটওয়ার্ক। এই অস্ত্র যেমন যাচ্ছে পেশাদার সন্ত্রাসী, ডাকাত, অপহরণকারীদের কাছে একই সঙ্গে যাচ্ছে রাজনৈতিক ক্যাডারদের হাতেও। এই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে রাজধানী সহ সারা দেশে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এই অস্ত্রভান্ডার উচ্ছেদ করতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে। দুর্গম পাহাড়ে এ কাজ যতো কঠিনই হোক। বন্ধ করতে হবে অস্ত্র চালানোর রুটও। উচ্ছেদ করতে হবে দেশী বিদেশী সন্ত্রাসী গ্র“পের আস্তানা।
ভোরের কাগজের এ সংক্রান্ত সরেজমিন প্রতিবেদনে এমনি ভয়াবহ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তথ্যানুযায়ী পাহাড়ে দেশী বিদেশী বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ এবং মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী একাধিক গ্রুপের তৎপরতা রয়েছে। বান্দরবানে এরা বেশি সক্রিয়। জনসংহতি সমিতি (জে এস এস), ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর অনেকের সঙ্গেই এসব গ্র“পের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। বান্দরবান জেলার রুমা,রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলিকদম, থানচি সহ ৭ উপজেলা এবং রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় রয়েছে এদের অপরাধের নেটওয়ার্ক। বান্দরবানের থানচির মদক থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পর্যন্ত ১২১ কিলোমিটার সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেই। এই সুযোগে মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেই। এই সুযোগে পরিচালনা করছে। রোয়াংছড়ি উপজেলার বেংছড়ি ও অংজাই পাগায় নিরাপত্তা বাহিনী মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকানা পিপলস আর্মি (এপিপি) এর আস্তানায় একাধিক অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে সেনাবাহিনীর অভিযানে এম-১৬ রাইফেল, এসএলআর, এমএমজিও গুলি, অত্যাধুনিক একে-১৬ রাইফেল, গ্রেনেড লঞ্চার, গ্রেনেড, এসএমজিও গুলি, অত্যাধুনিক একে-১৬ রাইফেল এসএলআর, এম-১৬ রাইফেলের ম্যাগজিন এবং বাংলাদেশ ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর পোশাক সহ বেশ কিছু সামরিক সরঞ্জাম উদ্ধার হয়। স্থানীয় পুলিশের দাবী, গত ৩ বছরে শুধু নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ৩০টি একে-৪৭ রাইফেল, বিপুল পরিমাণ এম-১৬, জি-৩ গ্রেনেড, বিস্ফোরক ও কয়েক লাখ গুলি। আরেক গোয়েন্দা তথ্য মতে, সারাদেশে ১২৪টি বড় ধরনের অপরাধী চক্রের কাছে প্রায় ১০ হাজার অবৈধ ক্ষুদ্র অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র আছে। এর মধ্যে ২৪টি সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে রাজধানী ঢাকায়। অপরাধী চক্রের হাতে থাকা অস্ত্রের শতকরা ৬০ ভাগ ব্যবহার করে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামাত ক্যাডাররা। আন্ডারগ্রাউন্ডের সন্ত্রাসীদের কাছে আছে ৩০ ভাগ আগ্নেয়াস্ত্র। সন্ত্রাসীদের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্রোহী ও রোহিঙ্গারাও রয়েছে। অপর ১০ ভাগ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী সহ এই শ্রেনীর অপরাধীদের হাতে।
পাহাড়ে বিশাল এই অস্ত্রের মজুদ শুধু পাহাড়ি অঞ্চল নয়, গোটা দেশের নিরাপত্তার জন্যই মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। বলাই বাহুল্য, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের রয়েছে দেশজুড়েই নেটওয়ার্ক। এই অস্ত্র যেমন যাচ্ছে পেশাদার সন্ত্রাসী, ডাকাত, অপহরণকারীদের কাছে একই সঙ্গে যাচ্ছে রাজনৈতিক ক্যাডারদের হাতেও। এই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে রাজধানী সহ সারা দেশে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এই অস্ত্রভান্ডার উচ্ছেদ করতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে। দুর্গম পাহাড়ে এ কাজ যতো কঠিনই হোক। বন্ধ করতে হবে অস্ত্র চালানোর রুটও। উচ্ছেদ করতে হবে দেশী বিদেশী সন্ত্রাসী গ্রুপের আস্তানা। (সৌজন্যে-ভোরের কাগজ তাং-১৭-০৭-১২ইং)।
Leave a Reply