পাহাড়ধস আতঙ্কে দুই লাখ রোহিঙ্গা
বৃহস্পতিবার ২৬ জুলাই, ২০১৮ ৮:৫১ অপরাহ্ন
238 বার এই নিউজটি পড়া হয়েছে
টেকনাফ নিউজ ডেস্ক []
প্রবল বর্ষণে ভয়াবহ পাহাড়ধস আতঙ্কে রয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। পাহাড়ধসের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থানরত অন্তত দুই লাখ রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে অধিক ঝুঁকিতে থাকা পাঁচ হাজার ৬৩৬ পরিবারের ২৪ হাজার ১২৬ জন রোহিঙ্গাকে ইতিমধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর বাইরের আরও বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা পাহা
ড়ধসের কারণে মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছেন। উখিয়া ও টেকনাফের বেশ কয়েকটি ক্যাম্পের পাহাড়ে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। তাই চলতি বর্ষা মৌসুমের যে কোনো সময় ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। জাতিসংঘের শরণার্থী পুনর্বাসনবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং বাংলাদেশ সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশন যৌথ উদ্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা রোহিঙ্গাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে কাজ করছে। ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে পাহাড়ধসে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। টানা ভারি বর্ষণের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর অধিকাংশ পাহাড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে কুতুপালংয়ের মধুরছড়া, বালুখালী, ময়নার ঘোনা, জামতলী, থাইংখালী ও উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা। এসব এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অনেক পাহাড়ে ভয়াবহ ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান জানিয়েছেন, অধিকাংশ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তোলায় এসব এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ইতিমধ্যে পাহাড়ধসের বেশি ঝুঁকিতে থাকা ঘরগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘরের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এদিকে ভূমি ও পাহাড়ধসের আতঙ্কে থাকা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দুই লাখেরও বেশি হওয়ায় চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতে তাদের সরানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম। পর্যায়ক্রমে নোয়াখালীর ভাসানচর ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশের নিরাপদ স্থানে এদের সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। ১২ এপ্রিল উন্নয়ন-সহযোগীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এশিয়ান ডিজাস্টার প্রিপারেডনেস সেন্টার (এডিপিসি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় সম্ভাব্য পাহাড়ধস ও বন্যার ঝুঁকি-সংক্রান্ত একটি সমীক্ষা করা হয়। এতে পাহাড়ধস ও বন্যার ঝুঁকিতে থাকা সম্ভাব্য এলাকা চিহ্নিত করা হয়। এতে দেখা যায়, পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে রয়েছেন ৩১ হাজার ৪৪১টি পরিবারের ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। পাহাড়ি ঢল ও বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন ১৬ হাজার ৩৭৫ পরিবারের ৬৯ হাজার ৩৫১ জন। ফলে সব মিলিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন ২ লাখ ৩ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক। অধিক ঝুঁকিতে পাঁচ হাজার ৬৩৬টি পরিবারের ২৪ হাজার ১২৬ জন রোহিঙ্গাকে আশপাশের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের রোহিঙ্গা সেল সূত্র জানিয়েছে, ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে উখিয়ার কুতুপালং সম্প্রসারিত ক্যাম্পের উত্তর-পশ্চিম দিকে ১২৩ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। ভূমি উন্নয়ন ও শেল্টার নির্মাণের কাজও কিছুটা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩০ একর জমি ব্যবহার উপযোগী করে সেখানে অধিক ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য শেড নির্মাণ করে তাদের স্থানান্তর করা হয়। অন্যদের নোয়াখালীর ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষ টিম ভাসানচরকে রোহিঙ্গাদের বসবাসের উপযোগী করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ভাসানচরে উখিয়া ক্যাম্পের চেয়ে আধুনিক ও উন্নতমানের ক্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে। এদিকে ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে উন্নয়ন-সহযোগীদের সঙ্গে সরকার যৌথ কনসালটেশন গ্রুপ গঠন করবে। এ গ্রুপটি ভাসানচরে সরেজমিন পরিদর্শন করে ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গা নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে এক লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে ভাসানচরে স্থানান্তরের কথা থাকলেও তা বর্ষা মৌসুমের শেষে শুরু হবে বলে সূত্র জানায়।