বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডে (বিটিবি) এর নতুন ওয়েবসাইটে সেন্টমার্টিন্সের যে ছবি শোভা পাচ্ছে তা মিথ্যা। বাংলানিউজ ছবিটি নিয়ে যাচাই করে দেখেছে, সেন্টমার্টিনসের বর্ণনা দিয়ে যে ছবিটি দেওয়া হয়েছে তা কোনোভাবেই সেখানকার নয়। অথচ গত ১ জুলাই বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান ঘটা করে ট্যুরিজম বোর্ডের নতুন ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন। মন্ত্রণালয়ে ওয়েবসাইট উদ্বোধনের সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, পর্যটন সচিব আতাহারুল ইসলাম, ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আখতারুজ্জামানসহ দেশের পর্যটন বিষয়ে সব কর্তাব্যক্তিই উপস্থিত ছিলেন। ছবিতে দেখানো হয়েছে, সেন্টমার্টিন্সের স্বচ্ছ পানি আর বালুকাময় তীরের অদূরেই সবুজ পাহাড়। বিষয়টি যাচাই করতে টেকনাফে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত দুই কর্মকর্তা ও একজন ট্যুরিজম বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলানিউজ। বর্তমানে ওই দুই কর্মকর্তা পর্যটন করপোরেশনের ঢাকা অফিসে কর্মরত। তারা দু’জন নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, টেকনাফে থাকার কারণে বহুবার তাদের সেন্টমার্টিন্সে যেতে হয়েছে। তাই ওখানকার সব জায়গাই তাদের পরিচিত। সেন্টমার্টিন্সের যে স্থান থেকে ছবিটি নেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে মিয়ানমারের আরাকান পাড়াহের ছবি কোনোভাবেই আসবে না। অথচ ওয়েবসাইটের ছবিটিতে পাহাড়ের ছবি খুবই স্পষ্ট। পর্যটন করপোরেশনের ওই দুই কর্মকর্তা বাংলানিউজকে আরো বলেন, সেন্টমার্টিনন্সের পানি স্বচ্ছ। তবে ছবিতে যতটা স্বচ্ছ দেখাচ্ছে ততটা নয়। এত স্বচ্ছ পানি মরিশাস অথবা ক্যারিবীয় সাগরের উপকূলে দেখা যায়। ট্যুরিজম বোর্ডের নতুন ওয়েবসাইটে সেন্টমার্টিন্সের ‘মিথ্যা’ ছবির বিষয়টি প্রথম নজরে আনেন বাংলানিউজের এক পাঠক। ওই পাঠকই ‘বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড’র নতুন ওয়েবসাইটে সেন্টমার্টিন্সের মিথ্যা ছবি শোভা পাচ্ছে শিরোনামে একটি ই-মেইল পাঠান। পাঠকদের জন্য ট্যুরিজম বোর্ডের নতুন ওয়েবসাইটের ঠিকানা ( www.tourismboard.gov.bd ) দেওয়া হলো। সেই সঙ্গে এই ছবিটি http://www.best-beaches.com/caribbean/st-martin। এই ওয়েবসাইট থেকে ছবিটি নেওয়া। যা কোনোভাবেই বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন্সের নয়। এটি আসলে ক্যারিবিয়ান এক দ্বীপমালার ছবি।
গুগলে ঢুকে কেউ বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন্স লিখে সার্চ দিলে ট্যুরিজম বোর্ডের দেওয়া ছবিটি চলে আসে। ঠিক একইভাবে ক্যারিবিয়ান সেন্টমার্টিন্স লিখে সার্চ দিলেও ওই ছবিটি আসে। তাই পাঠকেরা এই ছবিটি দেখে বিভ্রান্ত হতে পারেন। তবে বাংলাদেশের যারা সেন্টমার্টিন্সে গিয়েছেন তারাও ছবিটি সেন্টমার্টিন্সের নয় বলে দাবি করেছেন।
এমনই একজন পর্যটক সুলতান বায়েজিদ বাংলানিউজকে বলেন, “আমি তিনবার সেন্টমার্টিন্সে গিয়েছি। কিন্তু সেন্টমার্টিন্স দ্বীপে এ ধরনের পাহাড় কোথাও আমার চোখে পড়েনি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী আখতারুজ্জামান কবিরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বিষয়টি আমি দেখছি। যারা ওয়েবসাইটের কাজটি করেছেন তাদেরকে বিষয়টি সমাধানের জন্য বলবো।”
তিনি এ ব্যাপারে বাংলানিউজের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, “আপনাদের কাছে সেন্টমার্টিন্সের ছবি থাকলে আমাদের পাঠাতে পারেন।”
দেশ-বিদেশে পর্যটনের প্রসারে ট্যুরিজম বোর্ড ‘ভিজিট বাংলাদেশ ক্যাম্পেইন’ শীর্ষক একটি বিপণন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এ বছর। এরই অংশ হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর আওতায় এই নতুন ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে বলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়। দেশের পর্যটনস্থানের মিথ্যা ছবি দিয়ে পর্যটন কতটুকু বিকাশ হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে পর্যটন বিশেষজ্ঞ ও পর্যটন বিষয়ক পত্রিকা বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, এটি অজ্ঞতাপ্রসূত ভুল। এ ধরনের ভুল যাতে না হয় সেদিকে পর্যটন মন্ত্রীসহ উর্ধ্বতনদের সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, পর্যটন বিষয়ে পেশাদার লোকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। নতুবা এ ধরনের ভুলভ্রান্তি ভবিষ্যতেও হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘন্টা, জুলাই ৫, ২০১২
আইএইচ/এমএমকে- [email protected];সম্পাদনা:জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]
Leave a Reply