মোঃ আশেকুল্লাহ ফারুকী, টেকনাফঃ বাংলাদেশ মিয়ানমার দুই প্রতিবেশী দেশের নাফ নদীর জলসীমানা (জিরোপয়েন্ট) অরক্ষিত থাকায় চোরাচালান তৎপরতা (২০১১-২০১২) সালের জুন পর্যন্ত বৃর্দ্ধি পেয়েছিল। প্রসংগতঃ মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশটি নাফ নদী ও সাগর উপকূলীয় এলাকা এবং তার পূর্বে বিস্তীনপাহাড়। আরাকানের বেশীরভাগ সীমান্ত এলাকা টেকনাফ ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে পড়েছে। এ প্রদেশটি মৌলিক নাগরিক আর্ধকার থেকে বঞ্চিত এবং ভোগলিক প্রেক্ষাপটের প্রেক্ষিতে বিস্তীর্ন আরাকানের বসবাসরত জনগণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর জন্য বাংলাদেশের প্রতি সমপূর্ণরূপে নির্ভরশীল। এছাড়া ও রয়েছে দুদেশের সীমান্ত পর্যায়ে আতœীয়তার বন্ধন। এ কারনে চোরাচালান তৎপরতা চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। ১৯৯৫ সালে টেকনাফ সীমান্তে কেরুনতলীতে বাংলাদেশ মিয়ানমার পর্যায়ে সীমান্ত বাণিজ্য চালু হওয়ার পর চোরাচালান অনেকাংশে হাস হেয়েছে। সরকার প্রতি মাসে টেকনাফ স্থল বন্দর থেকে গড়ে ৭ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে আসছে। সীমান্তের একশ্রেণী পেশাদার চোরা কারবারী সীমান্ত বাণিজ্য থেকে মূখ ফিরিয়ে টেকনাফ সীমান্তে ৫টি চোরাই পয়েন্ট দিয়ে চোরাইপণ্য পাচার কাজে লিপ্ত থাকায় টেকনাফ সীমান্ত বাণিজ্যের উপর প্রভাব পড়েছে। যার কারণে সীমান্ত বানিজ্য রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠানে কাষ্ঠমস লক্ষমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়। টেকনাফ সীমান্তের শাহপরীরদ্বীপের বদরমোকাম হতে উখিয়া পালংখালী পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ৮ সীমান্ত ফাঁড়ি থাকলেও চোরাচালান তৎপরতা থামানো যাচ্ছেনা। প্রয়োজন আরো সীমান্ত ফাঁড়ি স্থাপনে প্রস্তাব রয়েছে। সীমান্তের স্থল পর্যায়ে সীমান্ত কড়াকড়ী থাকলে ও নাফ-নদীর জিরোপয়েন্ট থাকে অরক্ষিত। যার কারনে এ অরক্ষিত পথে বিনাবাধায় চোরাইপণ্য অনায়সে ঢুকে পড়ে। নাফ নদীর ও সাগর উপকূলীয় এলাকার চোরাচালান ও জলধস্যু তৎপরতা প্রতিরোধের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একটি অংশ কোষ্ঠগার্ড বাহিনী। সীমান্তের সচেতন মহলের মতে নাফ নাফনদীর জিরো পয়েন্ট যদি কড়াকড়ি থাকতো তাহলে মাদকসহ অন্যান্য চোরাইপণ্য সহজেই ঢুকতে পারত না। এমন মন্তব্য করছেন সীমান্তের সচেতন মহ। টেকনাফ ৪২ বর্ডার গার্ড ব্যাটলিয়ন (বিজিবি) ২০০৮ সালে টেকনাফ সীমান্তে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে চোরাচালান বিরুধী তৎপরতা সকলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১১-২০১২ সালের জুন পর্যন্ত বিজিবির জোয়ানেরা স্থাল ও নৌপথে পৃথক চোরাচালান বিরুধী অভিযান পরিচালনা করে চলতি বছর জুন পর্যন্ত ৬ মাসে অতœমূখী ও বর্হিরমূখী পথে আসা ৩৭কোটি ২৪ লাখ ৮১ হাজার টাকার বিভিন্ন প্রকারের মালামাল সহ চোরাকারবারীকে আটক করেছে। এতে মামলা হয়েছে ৪০৭২ টি এবং ধূত আসামী ৩৮৩ জন। এর মধ্যে অন্তমূখী ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৭৬ হাজার ও বর্হির মূখী ১০ কোটি ৪৭ লাখ ৪৩ হাজার ৪৩৬ টাকা। অপরদিকে ২০১২ সালের (৮এপ্রিল) পর্যন্ত মাদকদ্রব্যে ২১ কোটি ২১ লাখ ৬০ হাজার ৭৯৫ টাকা। মাদকের মধ্যে রয়েছে বোতলজাত মদ ইয়াবা হিরোইন চোরাইমদ ও গাজা। উল্লেখ্য বিজিবির সিংহভাগ ধৃত চোরাইপণ্যের মধ্যে ইয়াবা ও হিরোইন অন্যতম। বিজিবির মাসওয়ারী সিজার তালিকানুযায়ী জানুয়ারীতে ৩কোটি ৬২ হাজার ৬৭ টাকা, অন্তমূখী ৪৬ লাখ ১০ হাজার ২১৩ টাকা। ও বর্হিরমূখী ২ কোটি ৫৪ লাখ ৩১ হাজার ৫৫ টাকা। ফেব্র“য়ারীতে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৬৪ হাজার ২৪৪টাকা, অন্তমূখী ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪০ টাকা ও বর্হিরমূখী ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩১ হাজার ১০টাকা। মার্চে ১ কোটি ৮১ লাম ৭৬ হাজার ৪৩৪, অন্তমূখী ৮১ লাখ ৬৪ হাজার ৯৪৭ টাকা ও বর্হিরমূখী ৮০ লাখ ১১ হাজার ৪৭৭ টাকা। এপ্রিলে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৫৬ হাজার ২০৮ টাকা, অন্তমূখী ১ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার ৬শত টাকা ও বর্হির মূখী ৪৭ লাখ ৭০ হাজার ৬১৮ টাকা। মে তে ২০ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪০ টাকা অন্তমূখী ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ১৮৭ টাকা ও বর্হির মূখী ৩লাখ ৯৮ হাজার ৫৫৩ টাকা ও জুনে ৩৩লাখ ৪৬ হাজার ২২৮টাকা, অন্তমূখী ২১ লাখ ২৭ হাজার৪৯৫ টাকা বর্হিরমূখী ১২ লাখ ১৮ হাজার ৭৩৩টাকা। এ সময় জব্দকৃত অন্তমূখী ও বর্হিরমূখী পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইউরিয়াসার, জ্বালানী, ডিজেল, ভোজ্যতৈল, সোয়াবিন, চাউল, চামড়া, পামওয়েল, ফিলটার, ছাতা, সেন্ডেল, চিংড়ি, শুটকী, নৌকা, ট্রলার, স্বর্ন, ইয়াবা, হিরোইন, গাজা, বোতলজাতমদ চোরাইমদ ইত্যাদী। যে সব পয়েন্ট দিয়ে বিজিবি বেশীর ভাগ অন্তমূখী ও বর্হিরমূখী পথে চোরাইপণ্য সমূহ জব্দ করেছে, তার মধ্যে হোয়াইক্যং, হ্নীলা, লেদা, টেকনাফ ও সাবরাং নয়াপাড়া। অপরদিকে সীমান্তের যে সব চোরাইপয়েন্ট গুলো চোরাচালানীরা ব্যবহার করে আসছে, তার মধ্যে, উনচিপ্রাং, হ্নীলাওয়াবাং, চৌধূরী পাড়া, লেদা, জাদিমুড়া, বরইতলী টেকনাফের উত্তর নাইথং পাড়া, কায়কখালীখাল, সাবরাং ও নয়াপাড়া ঘাট ও শাহপরীরদ্বীপের জালিয়াপাড়া ও খোলার পাড়া ঘাট সমূহ। এসব অঘোশিত চোরাই ঘাট সমূহ যুগ যুগ ধরে চাালু থাকায় দুদেশের পণ্য সমূহ আদান প্রদান ছাড়া ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেই যাচ্ছে। বর্তমানে একটি পণ্য হিসাবে স্থান পেয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার প্রেক্ষিতে টেকনাফ সীমান্তে জনসংখ্যা ক্রমাস্ময়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানকার শ্রমবাজার রোহিঙ্গাদের দখলে চাল যাচ্ছে। সেই সাথে বনাঞ্চল উজাতসহ সীমান্তের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অবনর্তি ঘঠছে। এর জন্য মূলত দায়ী রোহিঙ্গা এবং এদের পৃষ্ঠপোশকতার জন্য দায়ী সীমান্তের জন কতিপয় জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিকদলের নেতা প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসীরা। ওদেরকে ওরা আশ্রয় ও পশ্রয় দিয়ে আসছে।
টেকনাফ ৪২ বর্ডারগার্ড ব্যাটলিয়ন (বিজিবি) অধিনায়ক লেঃ কর্ণের মোঃ জাহেদ হাসানের সাথে তার দপ্তরে এ প্রতিবেদক চোরাচালান সর্বক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চোরাচালান দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে ধংস করে ফেলে এবং ইহা দেশ ও জাতীর চীরশত্র“। এর প্রতিরোধে দেশ প্রেমিক নাগরিকদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বিজিবিকে গোপন তথ্য চোরাচালানের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন। শুরু মাত্র বিজিবি প্রতি লক্ষনা রেখে আপনিও দেশের নাগরিক হিসাবে দায়িত্ব পালন করলে সীমান্তের চোরাচালান অনেকাংশে হৃাস পাবে বলে তিনি দৃঢ়মত প্রকাশ করেন।
Leave a Reply