এটিএন ফায়সাল,টেকনাফ / টেকনাফ থেকে সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাত্রাকালে বুধবার আবারও ১১০ জনকে নিয়ে টেকনাফের অদূরে পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি ইঞ্জিননৌকা ডুবে গেছে। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড ২২ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও ৮৮ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। এর আগে গত ঈদ-উল আযহার আগের রাতে অর্থাৎ ২৬ অক্টোবর ভোরে একই স্থানে ১৩৫ জন বোঝাই মালয়েশিয়াগামী আরেকটি ইঞ্জিন বোট ডুবে যায়। এ ঘটনায় ৬ জন উদ্ধার হলেও বাকিদের অদ্যাবধি কোন খোঁজ মেলেনি। টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের কাটাবনিয়া ঘাট ও শাহপরীরদ্বীপ এলাকার দিকে এসব যাত্রী নিয়ে ইঞ্জিননৌকা সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছে বঙ্গোপসাগরের আট-দশ বাইন নামক এলাকায় ডুবে যায়।
এদিকে, টেকনাফ থেকে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় অবৈধপথে যাওয়ার তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, অপেক্ষাকৃত ঝামেলামুক্ত ও স্বল্প টাকার কিস্তিতে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দিয়ে কাজ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সংঘবদ্ধ দালাল প্রতারক চক্র টেকনাফ থেকে সাগর রুটকে বেছে নিয়েছে। বিজিবি, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশী তৎপরতা থাকা সত্ত্বেও প্রায়ই এভাবে দলে দলে অবৈধভাবে ইঞ্জিনবোটে করে মালয়েশিয়া যাওয়ার তৎপরতা উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ওয়াকিফহাল মহলকে তা ভাবিয়ে তুলেছে।
প্রলোভনের ফাঁদে পড়া বিদেশে অর্থ উপার্জনের স্বপ্নবিলাসী এসব যুবকের জীবন ঝুঁকি নিতেও কোন দ্বিধা নেই। পাহাড়সম ঢেউ ঠেলে দেশীয় প্রযুক্তির ইঞ্জিন নৌকায় শত শত নটিক্যাল মাইল সমুদ্রে দুঃসাহসিক যাত্রা। গভীর সাগরে আন্তর্জাতিক রুটের বাণিজ্যিক জাহাজে তুলে প্রতিমাসে বহু বাংলাদেশী যুবককে পাচারের জন্য গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ চক্র। এদের হাতে সমুদ্রে এ পর্যন্ত কত মানুষের সলিল সমাধি হয়েছে তার কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে মালয়েশিয়ায় ট্রানজিট হয়ে ইউরোপ, আফ্রিকাসহ বেশকিছু দেশে নানা বিপত্তির পর পাচারে সফলতার দৃষ্টান্তও রয়েছে।
অবৈধ পথে বিদেশে আদম পাচারের নতুন ট্রানজিট পয়েন্ট টেকনাফ। আগে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মাধ্যমে সমুদ্রপথে বেকার যুবকদের বিদেশে পাঠানোর প্রবণতা থাকলেও এখন তা পরিবর্তন হয়ে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে জমজমাট আকার ধারণ করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যুবকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজে তুলে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। আর মালয়েশিয়াকে বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক পাচারের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে সংঘবদ্ধ আদম পাচারকারী চক্র। সম্প্রতি বেশ কয়েক দফায় কক্সবাজার টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ইঞ্জিন নৌকাযোগে আদম পাচারের চেষ্টার বহু ঘটনা ধরা পড়েছে। কিন্তু পাচারকারী চক্র থেমে নেই।
সর্বশেষ বুধবার ভোররাতে টেকনাফের সাবরাং কাটাবুনিয়া ও শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিমপাড়া উপকূল ঘাট দিয়ে স্থানীয় ও মিয়ানমারের ১১০ রোহিঙ্গা নাগরিককে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে ছোট ছোট নৌকায় তুলে গভীর সাগরে অবস্থানরত ট্রলারে উঠানো হয়। যাত্রী বহনের ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত থাকায় এটি ভারসাম্য হারিয়ে পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের ‘আট-দশ বাইন’ এলাকায় ডুবে যায়। সাগরে মাছ ধরারত জেলেরা এ ধরনের কিছু লোককে ভাসতে দেখে তারা উদ্ধার করে এবং উপকূলে সংবাদটি পাঠায়। এরপরই শুরু হয় বিজিবি ও কোস্টগার্ডের উদ্ধার তৎপরতা। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী নৌবাহিনী ১১ জনকে উদ্ধার করে। অপরদিকে আরও ১১ জন সাঁতরে কূলে আসতে সক্ষম হয়। টেকনাফ উপকূলে এখন চলছে স্বজনহারাদের মাতম।
Leave a Reply