কালাম আজাদ॥..টেকনাফ থানা পুলিশের সাথে আতাত করে দালালরা গতকাল ঘূর্নিঝড় উপেক্ষা করে ২৫০ লোককে মালয়েশিয়ার পথে পাঠিয়েছে। থানা পুলিশের অসহযোগী মনোভাব, অর্থলোভী দৃষ্টিকোনের কারনেই থামানো যাচ্ছেনা মালয়েশিয়া যাত্রা বলে অভিযোগ। শীত মৌসুমের শুরুর আগে সাগর পথে মালয়েশিয়া মানব পাচার বেড়েই চলেছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবার ও টেকনাফের সাবরংকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে মানব পাচার চক্র বেপেরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই টেকনাফের কোন না কোন এলাকা থেকে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ট্রলারে করে পাড়ি দিচ্ছে শতশত লোক। কেউ কেউ হয়তো মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজে হাত দিয়েছেন। কেউবা প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরত এসেছেন। আবার কেউ যাত্রা করতে গিয়ে বিভিন্ন দেশের আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আবার অনেকে মালয়েশিয়া যাত্রাকালে পুলিশ কিংবা বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যদের হাতে ধরা পড়ে। তবে সাগরের অতলেই অধিকাংশ লোকের সলিল সমাধি হয়েছে। কিন্তু তারপর্ওে থেমে নেই মালয়েশিয়া যাত্রা। অনেক সময় টেকনাফ থানা পুলিশকে মালয়েশিয়া যাত্রার কথা বলা হলেও মালয়েশিয়ার দালালের কাছ থেকে পুলিশ মোটা অংকের টাকা নিয়ে আটক করতে তালবাহনা করেন বলে জানান টেকনাফবাসী। ইচ্ছে করেই দেরী করে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ। এমন একটি ঘটনা ঘটেছে গতকাল সন্ধ্যায়। সাবরাং ইউনিয়নের মুন্ডারডেইল বীচ ঘাট পয়েন্ট দিয়ে মালয়েশিয়া যাত্রা করছিল ২৫০ জন যাত্রী।
আমির হোসেন, জাফর আলম, রোহিঙ্গা খাইর হোসেন, নুর উদ্দিনের ছেলে হোছন, মোহাম্মদ ইউনুছ ইলামের ছেলে জসিম, জাফরের ছেলে ইব্রাহিম, এজাহার, জসিম সহ ২৫০ জন যুবক মালয়েশিয়্ াযাত্রার উদ্দেশ্যে ট্রলারে অবস্থান করছে। এ সংবাদ পুলিশকে দেওয়া হলেও পুলিশ প্রায় ২ ঘন্টার পর ঘটনাস্থলে যায় বলে জানান মুন্ডার ডেইলবাসী। বার বার বলা হলে ও পুলিশ সময় ক্ষেপন করেন বলে জানান প্রত্যেক্ষদর্শী সুত্র। আর পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে পৌছায় ততক্ষনে মালয়েশিয়ার যাত্রীরা উত্তাল সাগরে পাড়ি দিয়েছেন। ২৫০ লোকের মালয়েশিয়া যাত্রার খবর গ্রাম উন্নয়ন কমিটির পক্ষ থেকে টেকনাফ থানা পুলিশকে দেওয়া হলে ও পুলিশ বিষয়টিকে কর্নপাত করেনি বলে অভিযোগ করেন গ্রামবাসী। সন্ধ্যা ৬ টায় পুলিশ প্রশাসনকে খবর দেওয়া হয় আর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁেছ সাড়ে ৮টায়। এদিকে সন্ধ্যা ৭ টায় সমুদ্রকন্ঠের প্রতিবেদক মালয়েশিয়া যাত্রার খবর জানতে পের্ েটেকনাফ থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু টেকনাফ থনার ওসি মোহাম্মদ ফরহাদ বিষয়টিকে গুরুত্বসহ বিবেচনা করেননি। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে জানানো হলে বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে টেকনাফ থানার ওসিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানোর আদেশ দেন। আদেশ পেয়ে টেকনাফ থানার এস আই সাইফুল ঘটনাস্থলে গিয়ে মুন্ডার ডেইল এলাকার চিহ্নিত দালাল ইউসুফ আলীর ছেলে ফজল আহমদকে আটক করে।
গ্রামবাসীর অভিযোগ যদি সঠিক সময়ে পুলিশ পৌছতো তাহলে অবৈধ মালয়েশিয়াগামী যাত্রীকে ধরা সম্ভব হতো।
আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে এস আই সাইফুল জানান, চিহ্নিত দালাল ফজলের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
মালয়েশিয়া যাত্রা ব্যাপারে জড়িত অন্যান্য দালালরা হলো- ম্ন্ডুারডেইল এলাকার মৃত নাজির হোসেনের ছেলে নুরুল আলম নুরু, রোহিঙ্গা নাগরিক কবির আহমদ , রোহিঙ্গা নাগরিক নুর আলম। এ দিকে একটি সূত্র জানায় ঘটনাস্থলে ৪ দালালকেই টেকনাফ থানার পুলিশ পেলেও শুধু মাত্র একজনকে আটক করে বাকী ৩ জনকে ছেড়ে দেয়। এ দিকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন এসআই সাইফুল।
এ ব্যাপারে দালাল নুরুল আলম নুরুর সাথে (০১৮৩৬৬৩৩৯৭৪) যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি আমার পেশা। আপনারা যত পারেন তত লেখেন। আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ এ ব্যবসা করে আসছি।
মালয়েশিয়াগামী আয়াছের বাবা জহির আহমদ বলেন, আমার ১৮ বছর বয়সী ছেলে আ্য়াছ মালয়েশিয়া যাচ্ছে এখবর আমি নিজেও জানিনা। স্থানীয় দালাল নুরুল আলম নুরু আমার ছেলেকে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে মালয়েশিয়া যাত্রার জন্য প্রস্তুত করে। পরে আমি জানতে পেরে দালালের সাথে বাকবিতন্ডার পর ছেলেকে ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেয়।
কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়নি বলে জহির আহমদ জানান।
৪২ বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ জাহিদ হাসান জানায়, মালয়েশিয়া যাত্রা বিষয়ে বিজিবি তৎপর রয়েছে। বিজিবির পাশাপাশি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাও যদি এ ব্যাপারে আন্তরিক হয় তাহলে পাচার অনেকটা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। তিনি আরো জানান, স্থানীয় ও জনপ্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে সচেতন হলেই মালয়েশিয়া যাত্রার নামে প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতিনিয়ত মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের আটক করে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হলেও প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। যদি ও প্রতারণার কারণে একটি মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু দালালরা মামলা থেকে রেহাই পেয়ে যায়।। এ দিকে প্রতারণার শিকার স্থানীয়রা টাকা হারিয়ে পথে বসে। আবার এ দিকে ১০/১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে মালয়েশিয়া যাত্রা করতে গিয়ে বিভিন্ন দেশে আটক হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
স্থানীয় সমাজসেবক ফিরোজ জানান, প্রতিবছর মানব পাচার চক্র সাগর পথে মালয়েশিয়ায় যাত্রার নামে প্রতারণার করে যাচেছ। মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে কিছু লোক সাগরে প্রাণ হারাচেছ আবাার হাজার হাজার লোক ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ও মিয়ানমার কারাগারে আটক হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এ সব মানব পাচার চক্রকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে তা আরো ব্যাপক আকার ধারন করবে।
Leave a Reply