বাংলাদেশী এক টাকার সমপরিমাণ মায়ানমারের ১০ কিয়ট লেনদেন হওয়ার সুবাদে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারকে মধ্যপ্রাচ্য মনে করে এখানে ব্যবসার পাশাপাশি স্থায়ী বসবাসের সুযোগ করে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফে ২ লাখ ভাসমান রোহিঙ্গা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করছে। তারা এখানকার শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ায় এলাকার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। এসব রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির আশংকা করছে সচেতনমহল।
সরেজমিনে বাহারছড়া উপকূলে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্র সংলগ্ন ঝাউবীথির আড়ালে গড়ে উঠেছে বিশাল রোহিঙ্গা বস্তি। স্থানীয় গ্রামবাসীর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এসব রোহিঙ্গারা সামুদ্রিক মাছ ধরার জেলে নৌকায় মাঝি-মাল্লা হিসাবে চাকরি করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। এ রোহিঙ্গাদের ইন্ধনে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করে ওই বস্তিতে আশ্রয় গ্রহণ করে। পরে তারা বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় ট্রলার মালিক নুর মোহাম্মদ (৪৫) জানান, মনখালী-বাহার ছড়া উপকূলে পাঁচ শতাধিক জেলে নৌকায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা শ্রমিক কাজ করছে। এদের কারণে স্থানীয় জেলেরা কাজ না পাওয়ায় আর্থিকভাবে চরম বেকাদায় পড়ে গেছে। স্থানীয় বহদ্দার খলিল মাঝি (৪০) জানান, গভীর সমুদ্রে ঝড়-ঝাপটার বিপরীতে রোহিঙ্গারা মাছ ধরতে পারদর্শী ভেবে তাদেরকে চাকরি দেওয়া হয়। এভাবে রোহিঙ্গারা উখিয়া-টেকনাফে ১২০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকার শ্রমের বাজার দখল করে নিয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশী ১ টাকার বিপরীতে মায়ানমারের ১০ কিয়ট সে দেশে লেনদেন হচ্ছে। পাশাপাশি মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও ব্যবসা-বাণিজ্য করতে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় সেখানে অর্থনৈতিক সংকটের কবলে পড়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় এদেশীয় পণ্যসামগ্রীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় সীমান্তে চোরাচালান আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১ মাসে সীমান্তের বিজিবি সদস্যরা প্রায় এক কোটি টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী মায়ানমারে পাচারকালে উদ্ধার করেছে বলে বিভিন্ন চেকপোস্ট ও বিজিবি ক্যাম্পের দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন।
একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংকট অন্যদিকে মুদ্রার বিশাল ব্যবধানের কারণে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারকে মধ্যপ্রাচ্য হিসাবে বিবেচনা করে এখানে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে। শ্রমের বাজার এখন রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে বললেই চলে। উখিয়ার হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মুজাম্মেল হক জানান, বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও মুদির দোকানে কর্মচারী হিসাবে রোহিঙ্গারা কাজ করে যাচ্ছে। এদের কারণে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ নষ্ট হচ্ছে। মানবেতর দিনযাপন করছে অসংখ্য স্থানীয় গরিব-দুঃখী পরিবারের বেকার যুবকরা। এছাড়াও গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন কৃষিনির্ভর এলাকাগুলোতে কৃষিশ্রমিক হিসাবে রোহিঙ্গারা অবাধে কাজ করছে। এ দেশীয় শ্রমিকের মজুরের তুলনায় রোহিঙ্গা শ্রমিকের মজুরি কম হওয়ার সুবাদে স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের কাজ দিচ্ছে। স্থানীয় শ্রমিক মালিক আবুল কাশেম (৫৫) জানান, রোহিঙ্গারা সীমান্ত পার হয়ে এখানে আসা মাত্র কাজ পেয়ে যায়, তারা কম টাকায়ও কাজ করে। এ কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থামানো যাচ্ছে না। তারা উখিয়া-টেকনাফকে দুবাই-সৌদি আরব বলে বেড়াচ্ছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। উখিয়া-টেকনাফের দুটি ক্যাম্পে বিদ্যমান রোহিঙ্গা ছাড়াও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থানরত প্রায় দুই লাখ ভাসমান রোহিঙ্গার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
Leave a Reply