টেকনাফ-উখিয়া উপকূল এখন মালয়েশিয়া যাওয়ার ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। অল্প টাকায় সোনার হরিণ ধরার নেশায় হন্য হয়ে পড়েছে স্থানীয় বেকার যুবক ও রোহিঙ্গারা। কতিপয় দালাল সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার নামে প্রতারিত হয়ে কিছু কিছু যুবক অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম হলেও প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে সাগরে। গত কয়েকদিনে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের অভিযানে ১৭৮ জন মালয়েশিয়াগমনেচ্ছু যুবক আটক হয়েছে। আটককৃত যুবকদের তথ্য মতে অসংখ্য মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। জানা গেছে, উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পভিত্তিক সংঘবদ্ধ দালালচক্র সাগর পথে মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার নামে অভিনব প্রতারণা করে আসলেও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এসব দালালদের শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে পারেনি। যার ফলে আন্ডারগ্রাউন্ডে এসব দালালচক্র আরো তৎপর হয়ে অবৈধ উপায়ে টু-পাইস ইনকামের জন্য উখিয়া-টেকনাফের নিরীহ পরিবারের তরুণ-যবাদের সর্বস্বান্ত করছে। সমপ্রতি টেকনাফ পুলিশের হাতে আটক মালয়েশিয়াগমনেচ্ছু যুবকদের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, ২৫/৩০ হাজার টাকায় মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ায় জন্য দালালদের সাথে অলিখিত চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাদের কথামতো গভীর রাতে নির্ধারিত সাগর উপকূলে অপেক্ষা করতে হয়। পথিমধ্যে আসা ট্রলারের ওঠে রওনা দিতে হয়। এ সময় কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানার বা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কলাতলী ও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে পৃথক অভিযান চালিয়ে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতিকালে র্যাব-৭ ও বিজিবি ২৯ জন মালয়েশিয়াগমনেচ্ছু যুবককে আটক করে। কলাতলীতে আটক হওয়া ১৮ জনের মধ্যে ১৩ জনের বাড়ি যশোর, একজন জন নরসিংদী ও ৪ জন কক্সবাজার সদর উপজেলার বাসিন্দা। অপরদিকে ১৯ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে টেকনাফ বিজিবি শাহপরীর দ্বীপের ঘোলারচরে অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে আটক করে। এর মধ্যে দুইজন মায়ানমারের নাগরিক, ৯ জন কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা। আরো ৭০ জন যাত্রী ওই সময় সাঁতরে কূলে উঠে তাদের গন্তব্যে চলে যায়। ফিরে আসা যাত্রীদের মধ্যে কচ্ছপিয়া গ্রামের ফরিদ আহমদ, বড় ডেইল গ্রামের কামরুল জানান, আদম পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা জনপ্রতি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে নগদ ৩০ হাজার টাকা করে আদায় করে, বাদবাকি টাকা মালয়েশিয়া পৌঁছলে পরিশোধ করার কথা ছিল। তারা আরো জানান, তাদের বহনকৃত ট্রলারটি মায়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য নিয়ে এসেছিল। ট্রলারটি মায়ানমারে ফিরে যাওয়ার সময় মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহী যাত্রীদের বহন করে সেন্টমার্টিন অতিক্রম করে গভীর বঙ্গোপসাগরে পৌঁছলে মায়ানমারে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ট্রলার নিয়ে ধাওয়া করে। এসময় মালয়েশিয়াগামী ট্রলারের মাঝি-মালল্লারা তাদের সাগরে ফেলে দিয়ে চলে যায়। গত রবিবার গভীর রাতে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের বঙ্গোপসাগরের পার থেকে পুলিশ ১১২ জন মালয়েশিয়াগমনেচ্ছু লোকজনকে আটক করে। আটককৃতরা পুলিশের নিকট জানিয়েছে, তারা মূলত দরিদ্র খেটে-খাওয়া দিন মজুর। প্রতারকচক্র তাদের বাঁশখালী থেকে নৌকায় চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে বিমানে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া কথার বলেছিল। পুলিশ ওই নৌকার মাঝিকে আটক করে। আটককৃত যুবকেরা দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাস আগে বর্ষা শুরু হওয়া পর্যন্ত টেকনাফ-কক্সবাজারে কয়েকটি দালালচক্র অবৈধভাবে এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে করে মানবপাচার করে আসছে। এতে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে এবং থানায় স্থানীয় দালালদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রুজু হয়। থানা পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে নামে মাত্র কয়েকজন দালালকে আটক করলেও সমপ্রতি তারা জামিনে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে। বর্তমানে টেকনাফ উপজেলায় সাগর পথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার নামে দালালচক্রের সদস্যরা একটি সিন্ডিকেট করে পাচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
মালয়েশিয়াগমনে আগ্রহী আটককৃত বেশ কয়েকজন জানান, টাকার বিনিময়ে মালয়েশিয়া পৌঁছে দেওয়ার জন্য টেকনাফের নাইট্যংপাড়ার রহিম উল্লাহ, শাহপরীরদ্বীপের মো. কাসিম, বাজার পাড়ার ধলু হোছন, মো. তৈয়ব ওরফে বার্মাইয়া তৈয়ব, জিয়াবুল হক, শরীফ হোছন তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২০-২৫ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়েছেন। টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) স্বপন কুমার মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, দালালদের একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। তবে বিজিবি কর্তৃক দায়ের কৃত মামলায় অভিযুক্ত দালালদের গ্রেপ্তার করা হবে।
বিজিবির ৪২ অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহিদ হাসান জানান, মানব পাচারকারীচক্র সহজ-সরল লোকদের প্রলোভন দেখিয়ে সাগর পথে ট্রলারযোগে মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে বিপদসংকুল সমুদ্রে ঠেলে দিচ্ছে। মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে অনেকেই সাগরে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে। অনেকে ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও মায়ানমারের কারাগারে আটক রয়েছে। তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে স্থানীয়রা সচেতন না হলে কোন মতেই আদম পাচার ঠেকানো যাবে না। ধ
Leave a Reply