হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম,টেকনাফ / সিরিঞ্জ দিয়ে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের শিকার মাদ্রাসা ছাত্র আজিজ সিকান্দর সোহাগের (১৩) মা রহিমা বেগম শিশুপুত্র সোহাগ হত্যার বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে । মায়ের দাবী, এক রোহিঙ্গা তরুণের সাথে জনৈকা কিশোরীর অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলায় ওই তরুুুণসহ আত্মীয়তার সুবাধে এলাকায় বসবাস করা কয়েকজন মিয়ানমার নাগরিক মিলে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। তিনি এ হত্যাকান্ডের তদন্ত কার্যক্রম দ্ত করার জন্য স্থানীয় এমপি আবদুর রহমান বদি, প্রশাসন-র্যাব-পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, গোয়েন্দা বিভাগ, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের সহযোগিতা দাবী করেছেন ।
জানা যায়, সোহাগ দেড় বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে মায়ের সাথে নানীর বাসায় বসবাস করে আসছিল। হ্নীলা পুরাতন বাজারস্থ মনির হাজীর পরিত্যক্ত বাড়ী-ই সহায়-সম্বলহীন নানীর এখন স্থায়ী ঠিকানা। এখানেই হেসে-খেলে বেড়ে উঠে সোহাগ। সমবয়সী অন্যান্য শিশুর মত সে দুরন্ত ছিলনা , শান্তশিষ্ট স্বভাবের সোহাগের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান মার্বেল খেলা। দু’হাতের আঙ্গুল টুকে মার্বেল নিয়ে এই খেলায় তেমন কোন মাঠের প্রয়োজন হয় না। সামান্য এক চিলতে জায়গা পেলেই এই খেলা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। আশপাশের মগপাড়া ও বাজারপাড়া এলাকার অলিতে-গলিতে, বসতবাড়ীর উঠানে কিংবা ভিতরে যেখানে যখন সুযোগ পেত- সমবয়সীদের সাথে মার্বেল খেলত অবিরাম। আর এই খেলায় তার কাল হয়ে দাঁড়ায়। খুন হতে হয় তাকে। শরীরে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ দিয়ে বিষ প্রয়োগ করে তাকে পৈশাচিকভাবে খুন করা হয়। হতভাগী মা রহিমা বেগমের দাবী, সমবয়সীদের সাথে মার্বেল খেলতে গিয়ে সোহাগ কোন একদিন ঢুকে পড়ে প্রতিবেশী এক বাড়ীর অন্দরে। ওখানে সে দেখে ফেলে প্রতিবেশী ডা. ভূঁইয়ার ৩য় পক্ষের রোহিঙ্গা স্ত্রীর ছোট ভাই ২৬ বছরের রোহিঙ্গা যুবক সাইফুল ইসলাম সাবুকের সাথে ১৮ বছরের প্রতিবেশী জনৈকা তরুণীর রঙ্গলীলা। প্রমাদ গুণে সাবুক। সোহাগ কোনভাবে এ ঘটনা প্রকাশ করলে ডাক্তার দুলাভাই তাকে নির্ঘাৎ মিয়ানমারে ফেরত পাঠাবে ! হয়তো সাবুক সে মুহুর্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সোহাগকে হত্যা করে এঘটনা ধামাচাপা দিবে। সাবুক, তার ছোট ভাই রশিদ ও অপর শরণার্থী রোহিঙ্গা আবদুল্লাহ তাদের ডাক্তার দুলাভাইয়ের চেম্বারে বছর তিনেক আগে থেকে কম্পউন্ডারের কাজ শিখছে। ইতিমধ্যে তারা রোগীদের ইনজেকশন পুশ করা, ড্রেসিংসহ কাটাছেঁড়ায় সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছে। ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে তারাসহ আত্মীয়তার সুবাধে ও ভাড়াটে হিসেবে আশেপাশে বসবাস করা আরো ক’জন রোহিঙ্গা মিলে সোহাগকে হত্যা করে। রহিমা বেগম আরও জানায়, ১৯ সেপ্টেম্বর ছিল প্রতিবেশী ডা. ভূঁইয়ার জৈষ্ট্য পুত্র রিদুয়ান ভূঁইয়া বাহাদুরের মেহেদী অনুষ্ঠান এবং পরদিন বিয়ে। ডাক্তার বাড়ীর রোহিঙ্গা কর্মচারী আবদুল্ল¬াহর মাধ্যমে অন্যান্য সমবয়সীদের সাথে বাহাদুরের মেহেদী ও বিয়ে অনুষ্ঠানে সোহাগ আমন্ত্রিত হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে সোহাগরা মেহেদী অনুষ্ঠানে সারারাত আনন্দে মেতে উঠে এবং পরদিন দুপুরে দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে বাহাদুরের শ্বাশুড় বাড়ীর প্রীতিভোজে যোগ দেয়। খাওয়া-দাওয়া সেরে সন্ধ্যার একটু আগে সোহাগ হেঁটেই বাড়ী পৌঁছে এবং সন্ধ্যায় বিয়ে বাড়ীতে যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। ২১ সেপ্টেম্বর সকালে বাড়ী থেকে পৌণে দু’কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে হ্নীলা ষ্টেশনের উত্তরে টেকনাফে সড়কের আধ কিলোমিটার পূর্বে নির্জন লবণমাঠের একটি বড় আইলের আড়ালে তার বিকৃত লাশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে টেকনাফ থানার ওসি (তদন্ত) স্বপন কুমার মজুমদার ও সেকেন্ড অফিসার এসআই রাজু আহমদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর পর লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে। ২২ সেপ্টেম্বর সোহাগের জানাযা-দাফন শেষে রাতে মা বাদী হয়ে মামলা (৫৬-২২/৯/১২) রুজু করে। ওইরাতে পুলিশ ডাক্তার বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত জব্দ করে আবদুল্লাহকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। রাতভর এবং পরের সারাদিন আবদুল্ল¬াহকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করে। এরপর দীর্ঘ তিন সপ্তাহ পুলিশ নিরব থাকে। নিরবতার কারণ হিসেবে পুলিশ সম্প্রতি থানা ও সংখ্যালঘু পল্ল¬ী আক্রমনের ব্যস্ততার অজুহাত দেখায়। তবে এরমধ্যে সোহাগের মা রহিমার অহর্নিস ‘চাপাচাপিতে’ পুলিশ আবদুল্ল¬াহকে দু’দিনের রিমান্ড আনে এবং ১২ অক্টোবর সাইফুল ইসলাম সাবুককে আটক করে হাজতে পাঠায়। এরপর থেকে পুলিশ আবারো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। শুধু আশ্বাস আর আশার বানী শোনাচ্ছে। উল্লেখ্য, সোহাগ স্থানীয় শাহ মজিদিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ছিল । #
Leave a Reply