সাইফুল ইসলাম চৌধুরী,টেকনাফ:…সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে এবার সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে । এতে গ্রামের সুপারি চাষিদের ও সুপারি বাগানের মালিকদের মূখে সুখের হাসি ফুটেছে । অনেক সুপারি গাছের মালিক জানিয়েছে,এবছর তাদের সুপারি গাছে ভাল ফলন হয়েছে । আবার অনেকে জানায়, এ বছর বাগান বাড়ীর সুাপারি গাছ থেকে জন প্রতি প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা ও তার চেয়েও বেশি টাকার সুপারি বিক্রি করেছে চাষিরা। অনুসন্ধানে জানাযায়,টেকনাফ উপজেলার সাবরাং,বাহারছড়া,টেকনাফ সদর,নিলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নে সুপারির ভাল ফলন হয়েছে । বাজারে সুপারির মূল্যও তেমন মন্দ নয় । প্রতি বছরের মত এ বছরও রংপুর,চট্রগ্রাম,ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রবিবার ও বৃহষ্পতিবার কোটি টাকার সুপারি যাচ্ছে । বাজার ঘুরে জানাযায়,প্রতি পন সুপারি ১৮০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে । তাছাড়া বাগান বাড়ীর সুপারির মালিকরা যেভার কাচা সুপারি ভিজিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে তাতে মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে সুপারি এ বছর টেকনাফে আসবেনা বলে মনে করেন ব্যাবসায়ীরা ।
কক্সবাজারের হাট-বাজারে কাঁচা সুপারীর বাজার জমে ওঠেছে। এসব বাজারে প্রতি হাটে অর্ধ কোটি টাকারও বেশী সুপারী বেচা-কেনা হচ্ছে। এ বছর মৌসুম শুরুর পর থেকে (গত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত) প্রায় ৩০ কোটি টাকার সুপারী বেচাকেনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, এ বছর জেলায় ৫০ কোটি টাকারও বেশী সুপারি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার উখিয়া,টেকনাফ ও রামু এ তিন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ সুপারি উৎপাদন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে ধানের পর এখানকার মানুষের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস সুপারি। শুধু রামু নয়, এখানে উৎপাদিত সুপারি রপ্তানী করা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে।
কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় গতবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে সুপারি পাকতে শুরু করে। জানুয়ারী মাস পর্যন্ত কাঁচা সুপারি বেচা-কেনা চলবে। সুপারীর উৎপাদন কম হলেও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এবার সুপারির আকার বড় এবং গুণে-মানে ভালো হয়েছে। তাই দামও মোটামুটি ভাল। কৃষি বিভাগের প্রাথমিক হিসাবে জেলার উখিয়া,টেকনাফ ও রামু এ তিন উপজেলায় এ বছর প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সুপারি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গাছের সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ।
তবে কৃষি বিভাগের এ তথ্যের সাথে ভিন্নমত পোষন করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এ সংখ্যা কমপক্ষে এখানে ৫ হাজারের অধিক হেক্টর এবং প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ছয়লাখ টাকার সুপারি উৎপাদন হয়েছে। সে হিসাবে এবছর জেলায় ৫০ কোটি টাকারও বেশী সুপারি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
কক্সবাজারে প্রাচীন রামু ফকিরা বাজারে সুপারীর হাট বসে সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার। গত বুধবার সকালে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিপুল পরিমাণ সুপারি বেচার জন্যে ব্যবসায়ীরা বাজারে আনেন।
রামু মেরংলোয়া গ্রামের সুপারী ব্যবসায়ী সুরেশ বড়ুয়া জানান, এ বছর ভাল মানের প্রতি পন সুপারি (৮০টি) ২০০-২২০ টাকায় বেচা হচ্ছে। মাঝারি মানের সুপারি দুইহাজার-দুইহাজার পাঁচশ, নিুমানের একহাজার একহাজার পাঁচশ টাকায় বেচা হয়েছে। উপজেলার জোয়ারিয়ানালা, রাজারকুল, গর্জনিয়া, কাউয়ারখোপ, কচ্ছপিয়া, ঈদগড়, চাকমারকুল, রশিদনগর, দক্ষিন মিঠাছড়ি, ফতেখাঁরকুল, খুনিয়াপালং ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটবাজারে হাটের দিন প্রায় অর্ধকোটি টাকার সুপারি বেচা-কেনা হয় বলে তিনি দাবি করেন।
তবে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, রামুর সুপারীর মান তুলনামূলক ভাল হওয়া সত্বেও উপজেলার বাইরে উখিয়ার সোনারপাড়া,টেকনাফের শাপলাপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সুপারী রামুতে আসায় এখানকার সুপারীর ন্যায্য দাম পাচ্ছেননা।
ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের হাজারিকুল এলাকার সুপারি ব্যবসায়ী শামসুল আলম জানান, ওই দিন তিনি নিজের বাগানের প্রায় দশ কাহন (১৬০ পন) সুপারি বাজারে নিয়ে আসেন। প্রতি কাহন সুপারি বেচেন তিনহাজার দুইশ টাকা করে। কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মনিরঝিল গ্রামের মনির আহম্মদ (৪৩) ৩৫ পন সুপারি বেচে সাত হাজার ৭০০ টাকা পান।
টেকনাফের ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, বসত-বাড়ির আঙ্গিনায় করা ৩০শতক বাগানের সুপারি বেচে এবছর একলাখ ৪০ হাজার টাকা পেয়েছেন। সুপারীর দাম থাকায় গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রায় ৪০ হাজার টাকা বেশী পান।
কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নরেশ চন্দ্র বারই জানান,
জেলার এ তিন উপজেলায় কৃষির পর অন্যতম অর্থকরি ফসল সুপারি। আবাদও হয় প্রচুর। কক্সবাজার জেলা থেকে যে পরিমান সুপারি উৎপাদন হয়, সেখান থেকে দেশের বাইরে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। কিন্তু এখানকার সুপারি বাগান মালিকেরা কৃষি বিভাগের কোনো পরামর্শ নেননা। পরামর্শ নিলে উৎপাদন আরও বহুগুন বাড়তো।
Leave a Reply