*হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম-ঈদের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে টেকনাফের ১৫টি পয়েন্টে সাগর দিয়ে চোরাই পথে মালয়েশিয়ায় আদম পাচারকারীরা তৎপর হয়ে পড়েছে। ঈদের রাতেই টেকনাফের উপকূলীয় এলাকা শামলাপুর, শীলখালী, জাহাজপুরা, রাজারছড়া, হাবিরছড়া, লেঙ্গুরবিল, লম্বরী, মুন্ডারডেইল, বাহারছড়া, কচুবনিয়া, কাটাবনিয়া, শাহপরীরদ্বীপ ঘুলারচর দক্ষিণপাড়া, জালিয়াপাড়া, পশ্চিমপাড়া, ইত্যাদি ঘাট দিয়ে চোরাইপথে সাগর দিয়ে মালয়েশিয়ায় বিপুল সংখ্যক আদম পাচার হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রতি রাতে শত শত যাত্রী পাড়ি দিলেও প্রশাসন এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এলাকায় তীব্র সমালোচনা চলছে। বর্তমানে সাগর শান্ত থাকার সুযোগে এবং রামুর ঘটনা নিয়ে প্রশাসন ও আইন শৃংখলা বাহিনী ব্যস্ত থাকার সুবাদে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আদম পাচারকারী সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে সেই সাথে যুক্ত হয়েছে ঈদের সুযোগ। জানা যায়- প্রত্যেক ঘাটেই রয়েছে ৭ থেকে ১০ জনের সিন্ডিকেট। এদের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে- ম্যানেজ। এসব দালালদের মধ্যে রোহিঙ্গার সংখ্যাও কম নয়। একারণে যাত্রীদের প্রায় সকলেই মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গা। বাহারছড়ায় আদম পাচার এখন ওপেন সিক্রেট। আগে স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা বাধা দিতেন। কিন্তু যারা এসব কাজে বাধা দেয়, তারা বিভিন্ন হয়রানীর সম্মুখীন হতে হচ্ছে বিধায় আর বাধাও দেয়না। সদর ইউনিয়নের হাবিরছড়া ঘাট দিয়ে গত কয়েক রাতে শত শত আদম মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছে। এনিয়ে ১৫ অক্টোবর সকালে হাতিয়ারঘুনা হাজী সুলতানের পুত্র (ফিশিং ট্রলারের স্টাফ) আব্দুল হামিদ(৩৫) কে মারধর করেছে ইলিয়াছের পুত্র ছাবের। এঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। জানা যায়- মোঃ হোছন, ইউনুচ ও ছাবের এর নেতৃত্বে গত ৩ রাতে ৩ শতাধিক মালয়েশিয়াগামী যাত্রী হাবিরছড়া ঘাট দিয়ে পাড়ি দিয়েছে। এরা বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রী সংগ্রহ করে এনে মোঃ হোছনের পানের বরজে রেখে রাতে ছাবের ও ইউনুচের ফিশিং ট্রলারে ভরে সাগরে অপেক্ষমান জাহাজে তুলে দেয়। অনুরুপভাবে সাবরাং ইউনিয়নের কাটাবনিয়া, কচুবনিয়া, বাহারছড়া, মুন্ডারডেইল, শাহপরীরদ্বীপ জালিয়াপাড়া ঘোলারচর, পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণপাড়া ঘাট দিয়ে প্রায় প্রতি রাতেই আদম পাচার হচ্ছে। প্রত্যেক ঘাটে আদম পাচারকারী দালাল সিন্ডিকেট ছাড়াও শাহপরীরদ্বীপের ধলুহোছন ও শরীফ হোছন প্রসিদ্ধ নাম। এরা দু’জনই তালিকাভূক্ত আদম পাচারকারী । কাজের সুবিধার্থে তম্মধ্যে একজন আওয়ামীলীগে যোগদান করেছেন। একভাই ও ভ্রাতুষ্পুত্র আটক হয়েছিল। এই সিন্ডিকেট আদম পাচার ছাড়াও নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল চোরাচালান, গরুচুরি, পুশব্যাক করা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে। শাহপরীরদ্বীপের মাঝরপাড়ার আবুল বশর(রোহিঙ্গা), ছলিম, গোলাম হোছন, বাজারপাড়ার মোঃ রফিক জাপাইন্যা, জিয়াউল হক প্রকাশ ভুলাইয়া, মোঃ ইছমাইল, কালা মিয়া, জাফর, আলিরডেইলের আক্তার কামাল, মুন্ডারডেইলের ইউনুচ, কাটাবনিয়ার ছিদ্দিক আহমদ, কচুবনিয়ার বশির আহমদ, নজির আহমদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া শাহপরীরদ্বীপের ১ জন চৌকিদার এই আদমপাচারকারী দালালদের সহযোগিতা করে আসছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে বহুবার বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত, আইন শৃংখলা ও চোরাচালান প্রতিরোধ টাস্কফোর্স বিষয়ক সভায় আলোচনা হলেও আটক না হওয়ায় দ্বিগুন উৎসাহে আদম পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ বছরে যা পাড়ি দেয়নি, গত ২ মাসে তার কয়েক গুন বেশী আদম পাচার হয়েছে টেকনাফের উল্লেখিত ঘাট দিয়ে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। ঈদের আগের রাত ও পরের রাত উল্লেখিত পয়েন্ট গুলোতে নজরদারী বৃদ্ধির দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
Leave a Reply