বর্ষার উত্তল সমুদ্রের মধ্যেও থেমে নেই ট্রলারযোগে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার। বুধবার দুপুরে সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়াগামী ১৭ জনকে টক করেছে টেকনাফ মডেল থানা-পুলিশ। টেকনাফ পৌরসভার শাপলা চত্বর এলাকার আবাসিক হোটেল আল সাইফ থেকে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে ওই হোটেলে জড়ো হয়েছিল।আটককৃতরা হচ্ছেন যশোর এলাকার শার্শা উপজেলার শাহবুদ্দিন (২৭), তরিকুল ইসলাম (২৫), শিমূল হোসেন(২২), নাসির উদ্দিন (২৫), মো. হৃদয় হোসেন (২৫), রেজাউল করিম (৩৫), মো. ইয়াকুব হোসেন (২৮), আব্দুস সুহাব (৩৫), শাহজাহান আলী (২৮), জহির (২৮), রবিউল (২৫), মনিরুজ্জামান (২৬), বগুড়া এলাকার শরিফুল ইসলাম (২২), শাহজাহানপুর জগন্নাতপুরের নূরুল আলম (২৮), সাবরুলের মো. মিঠু (২৯), শিবগঞ্জ ছাতুয়ার মো. শাহীন (৩২) ও গামুড়ার রাগেব (২৫)।এ দিকে বর্ষায় উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ট্রলারযোগে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে সাগরে দুর্ঘটনায় টেকনাফ উখিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক লোকজনের সলিল সমাধি হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ৪০ দিন ধরে নিখোঁজ এসব লোকজনের হদিস না পাওয়ায় স্বজনদের মধ্যে দেখা দিয়েছে শোকের মাতম। কান্নার রোল পড়েঠে হতভাগ্যদের ঘরে ঘরে।
প্রতিকুল আবহাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গত ১৫ জুলাই রাতে টেকনাফের উপকূল দিয়ে আরো প্রায় ৭০ ব্যক্তি ট্রলারে করে মালয়েশিয়া অভিমুখে রওয়ানা করেছে বলে জানা গেছে। এ দলের মধ্যে টেকনাফের হোয়াইক্যং, উনচিপ্রাং, লম্বাবিল, রইক্যং এলাকার ২০ বাসিন্দা রয়েছে।
শাহপরীর দ্বীপ বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার মুঠোফোনে জানান, রোববার রাতে সাবরাং নয়াপাড়া সমুদ্র চর দিয়ে লোকজন মালয়েশিয়া যাত্রার কথা শুনেছি। খবর পেয়ে রাতে ওই এলাকায় অভিযানে গিয়ে কাউকে পাওয়া যাইনি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বর্ষায় প্রতিকুল আবহাওয়াতেও টেকনাফে আদম পাচারকারী চক্র থেমে নেই। তারা সমুদ্রপথে প্রলোভন দেখিয়ে দরিদ্র লোকজনকে মালয়েশিয়া পাঠাচ্ছে। বাণিজ্য জাহাজে করে নিরাপদে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে প্রায় দেড় শতাধিক লোকের কাছ থেকে জনপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা করে আদায় করছে তারা।
গত ৮ জুন টেকনাফের সাবরাং উপকুলীয় এলাকা দিয়ে একটি ট্রলারে করে ১২০ জন করে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। ট্রলারটি থাইল্যান্ড উপকূলীয় সমুদ্র এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের সলিল সমাধি হয়েছে এমন আশঙ্কা করছেন স্বজনরা।
ওই ট্রলারে করে হোয়াইক্যংয়ের কুতুবদিয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিমের ছেলে আবছার, ধলা মিয়ার ছেলে সরওয়ার, আব্দু শুক্কুরের ছেলে হারুন, সফু মিয়ার ছেলে আজিজুল হক, আবু তালেকের ছেলে মো. রফিক, কবির আহমদের ছেলে আনিসুর রহমান, নুরুল আলমের ছেলে সোনা মিয়া, নুর আহমদের ছেলে জসিম, উনচি প্রাং এলাকার অমির হামজার ছেলে আব্দুর করিম, আব্দুর রহমানের ছেলে শাহ আলম, রইক্ষং এলাকার কালু মিয়ার ছেলে আবু ছিদ্দিক, উখিযার পালংখালী এলাকার মোহাম্মদের ছেলে নুরুল কবির, লেদা রোহিঙ্গা বস্তি এলাকার রহমত উল্লাহ, নজির আহমদসহ স্থানীয় লোকজন রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে এসব অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসব লোকজনের হদিস না থাকায় হতভাগ্যদের বাড়িতে মা-বাবা, ভাই-বোনসহ স্বজনদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।
শাহপরীর দ্বীপ সাবরাং হোয়াইক্যং এর উনছিপ্রাং এলাকায় দালাল চক্র নানা প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে দরিদ্র লোকজনের লাখ লাখ টাকা। সাগরে ঝড়ো হাওয়া, উত্তাল ঢেউয়ে প্রতিকুল পরিবেশ হওয়া সত্বেও দালাল চক্র প্রতারণা করে অর্থের আদায় করে এসব লোকজনদের ঠেলে দেয় মৃত্যুর মুখে। এসব দালালরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।স্বজনের সাথে কথা বলে জানা যায়- শাহপরীরদ্বীপ মিস্ত্রি পাড়া মৌ.কলিম উল্লাহ টেকনাফে আদম পাচারকারী চক্রের সাথে হাত করে লোক কলেক্সন করে এবং থাইল্যন্ড থেকে মোটা টাকার কন্ট্রাকে উদ্ধার করে মালয়েশিয়া নিয়ে ভাল বেতনে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আদায় করছে। তাদের উদ্ধারে উক্ত কলিম উল্লাহ এপর্যন্ত কয়েক বার থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া ঘুরে আসেন কিন্তু এখনো তাদের খোজ দিতে নাপেরে তিনি এলাকা ছাড়া হয়ে চিটাগাং আতœঘোপনে রয়েছেন। তারা দালাল কলিম উল্লাহকে ধরে এন কলিজার সন্তানের শেষ খবর জানার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
টেকনাফ থানার দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার মজুমদার জানিয়েছে,কয়েকজন স্থানীয় দালাল আটককৃত এসব লোকজনকে টেকনাফ থেকে সাগরপথে মালয়েশিয়া পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এখানে নিয়ে আসে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। বর্ষায় উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ট্রলারযোগে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া মানব পাচারের প্রতারক চক্রের তৎপরতা থেমে নেই। এ প্রতারক চক্র দেশের বিভিন্ন স্থানের লোকজনকে খপ্পরে ফেলে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচেছ।
Leave a Reply