প্রাইভেট টিউশনি কিংবা কোচিংয়ের ক্ষেত্রে সরকারের জারি করা নীতিমালা অমান্য করলে এর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হবে। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে এ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকার নিষিদ্ধ গাইড কিংবা নোটবই প্রকাশ করলে অথবা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত মূল পুস্তকের নোট কিংবা গাইড বইয়ের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে তার জন্যও একই শাস্তির বিধান রেখে শিক্ষা আইন করা হচ্ছে। দৈনিক যুগাšত্মর।
প্রস্তাবিত আইনে শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য ফি সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যা নির্ধারণ করবে তা গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা রাখা হচ্ছে। এর ব্যত্যয় ঘটলেই শাস্তি দেয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে আগামী ১৫ নভেম্বর সভা আহ্বান করা হয়েছে। প্রাইভেট টিউশনি বা কোচিংয়ের ক্ষেত্রে সরকার ইতিমধ্যে একটি নীতিমালা জারি করেছে।
সেই নীতিমালার আলোকে প্রাইভেট টিউশনি বা কোচিং করানো যাবে। কিন্তু এ নীতিমালার বাইরে কেউ যদি তা করে তাহলে তা হবে দণ্ডনীয় অপরাধ। আর এই অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। একইভাবে সরকার নিষিদ্ধ গাইড, নোটবই বিক্রির জন্য কেউ যদি মজুদ করে কিংবা নোটবই কিনতে শিক্ষার্থীদের প্ররোচনা করে অথবা বাধ্য করে তাহলে তা হবে দণ্ডনীয় অপরাধ। এ অপরাধগুলো জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া মীমাংসাযোগ্য হবে না।
প্রস্তাবিত আইনে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন কিংবা জাতীয়করণ অথবা এমপিও প্রদানের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নীতিমালার অধীনেই সম্পন্ন হবে। তবে প্রত্যেক উপজেলায় কমপক্ষে একটি মাধ্যমিক স্কুল ও সরকারি কলেজের অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন অথবা জাতীয়করণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা, জীবনব্যাপী শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয় প্রস্তাবিত আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে শিশুদের শিক্ষার বেলায় অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষার্থীদের জন্য দুপুরে হালকা নাশতার ব্যবস্থা করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাঙালি সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর নিজ নিজ সংস্কৃতির বিষয়গুলো পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কেউ যদি অন্তর্ভুক্ত না করে তাহলে এর জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকবে। ২ বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা শ্রেণীতে ভর্তিযোগ্য শিশুর বয়স হবে কমপক্ষে ৪ বছর।
প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ভর্তিযোগ্য শিশুর বয়স হবে কমপক্ষে ৬ বছর। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি ফি কিংবা অন্য কোন পরীক্ষা গ্রহণ করা যাবে না। প্রথম শ্রেণীতে যদি আসন সংখ্যার চেয়ে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হয়, তাহলে ভর্তির জন্য লটারির ভিত্তিতে শিক্ষার্থী নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রস্তাবিত আইনে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে কিন্ডারগার্টেন, ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে বাধ্যতামূলক নিবন্ধন করতে হবে। যদি কেউ না করে তবে তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কোন বিদ্যালয় স্থাপন কিংবা পরিচালনা করা যাবে না। বিশেষ করে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার জন্য এটি বাধ্যতামূলক।
প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বনিু যোগ্যতা হতে হবে কমপক্ষে দ্বিতীয় বিভাগসহ এইচএসসি পাস কিংবা তার সমমানের। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর সব স্তরের শিক্ষক নিয়োগের জন্য সর্বনিু দ্বিতীয় বিভাগ øাতক পাস হতে হবে। তবে সরকার প্রয়োজনে শিক্ষাগত যোগ্যতা পুনর্নির্ধারণ করতে পারবে।
প্রস্তাবিত আইনে মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর হবে নবম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত। মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচিতে কৃষি শিক্ষা, তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষাসহ অন্যান্য শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য কমপক্ষে দ্বিতীয় বিভাগসহ øাতক পাস হতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য সাধারণ ধারার উচ্চশিক্ষার সমন্বয় করে পর্যায়ক্রমে ৪ বছর মেয়াদি ফাজিল ও ১ বছর মেয়াদি কামিল কোর্স চালু করা হবে।
প্রস্তাবিত আইনে উচ্চশিক্ষার জন্য বেসরকারি মহাবিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় নিবন্ধন না করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা ১ বছর কারাদণ্ড দেয়া হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। অনুমোদনবিহীন কোন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস স্টাডি সেন্টার অথবা টিউটোরিয়াল কেন্দ্র পরিচালনা করা যাবে না। যদি কেউ করে তবে তার জন্য ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও ২ বছর কারাদণ্ড দেয়া যাবে।
প্রস্তাবিত আইনে শিক্ষা কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ কমিশন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে। এর পাশাপাশি শিক্ষাবিষয়ক চুক্তিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক দলিলের ওপর গবেষণা করে এর বাস্তবায়নযোগ্য দিকগুলো সরকারের কাছে সুপারিশ করবে। প্রস্তাবিত আইনে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।
বিশেষ করে যারা বিভিন্ন কারণে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তাদের জন্য এ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার ভর্তি হওয়ার বয়স ৮-১৪ বছর। আর বয়স্ক শিক্ষার ক্ষেত্রে ১৫-৪৫ বছর।
Leave a Reply