আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষৎ। শিশুরাই বয়ে নিয়ে আসতে পারে একটি দেশের জন্য গৌরব। জয় করতে পারে মাউন্ট এভারেষ্ট(মুছা ইব্রাহিম)এবং ছিনিয়ে নিয়ে আসতে পারে নোবেলের মত বিশ্বখ্যাত পুরষ্কার। কিন্তু আশংকা জনকভাবে দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা। এই সব শিশুর বেশির ভাগ বয়স ৫-১০/১২বছর পর্যন্ত। এই শিশুরা এসেছে দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস কারী হত দরিদ্র পরিবার থেকে। এদের মধ্যে কারো পিতা নেই ,মাতা নেই, দেখভাল করার মত নেই কোন স্বজন-আত্মীয় কিংবা ভাল প্রতিবেশি। অবহেলা-অনাদরে গড়ে ওঠা এই শিশুরা দু মুঠো খেয়ে পড়ে বাঁচার তাগিদে বেছে নিয়েছে বড় বড় ঝুকিপূর্ণ কাজ। এই সব ঝুকি পূর্ণ কাজ করতে গিয়ে তাদের দেহে দেখা দিয়েছে মারত্বক ক্যান্সার,রক্ত শূন্যতা,জন্ডিস(হেপাটাইটিস-বি),খোঁস-পঁচড়ার মত ভয়ানক রোগ ব্যাধি এবং পুষ্টি হীনতায় চোখ মুখ চলে গেছে গর্তে। গায়ের চামড়া খসখসে,হাতে পায়ের আঙুলের ফাঁকে ঘাঁ জমে দগ্ধ হয়ে আছে।তারা বাঁচার তাগিদে দু;মুঠো ভাতের জন্য দিনের পর দিন অবর্ণীয় অত্যাচার সহ্য করে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে।স্বচক্ষে না দেখলে সেইসব করুন চিত্র বোঝা বড় কঠিন।
চোখ-কান খোলা রেখে রাস্তা-ঘাটে চললে বিভিন্ন জায়গায় শিশু শ্রমিকের ঝুকিপূর্ণ কাজ পরিলক্ষিত হয়। বড় বড় কারখানায়,বড় বড় বিল্ডিংয়ের কনস্ট্রাকশনের কাজে,দেশের বিভিন্ন সামুদ্রিক বন্দরে, লোহা-লেদেও কারখানায়,বিভিন্ন ওয়ার্কশপে,চিনি কারখানায়,ইলেকট্রিক কাজে, তাঁত শিল্পে,প্যাথোলজি সেন্টারে, গৃহপরিচালিকার কাজে এই সব অসহায় শিশুদের নির্বিঘেœ ব্যবহার করা হয়। শরীরের তুলনায় ভারি ওজনের কাজ করায় এসব শিশুরা অপ্রাপ্ত বয়সেই দৈহিক অক্ষমতা,প্রতিবন্ধী ও অন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কেউবা আবার মানুষিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পথে পথে ঘুরছে।
এই সব কোমল মতি শিশুরা যে পরিবেশে কাজ করে দেখলে গা হাত-পা ঝিমঝিম করে। এই সব পরিবেশে একজন সুস্থ মানুষ কাজ করতে পারে! না কাজ করা যায়! শরীরে ধুলা ময়লা নিয়ে কংকালসার এই সকল শিশুকে এক নজর দেখলে যে কোন বিবেকবান মানুষ ছোখের পানি ধরে রাখতে পারবে না। পাওয়ার লুমে(বিদ্যুৎ চালিত তাঁত) ২০সহস্্রাধিক শিশু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। সেখানে প্রতিটি পাওয়ার লুমের চারিদিকে টিনের বেড়া ও টিনের চাল। বাইরে থেকে আলো বাতাশ প্রবেশ করার মত কোন ব্যবস্থা রাখা নেই। শুধু মাত্র একটা প্রবেশ পথ। শিশুদের নাক মুখ দিয়ে ঢুকছে তাঁতের সুতার ডাস্ট। মুখে কোন ধরনের মাস্ক পরিধানের ব্যবস্থা করা হয়নি। এছাড়াও পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। এই সব ধুলো-ময়লায় শিশুদের স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে ,সেদিকে মালিক পক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই । রোগ-শোকে তাদের কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। সপ্তাহ শেষে যে টাকা পায় সে টাকা দিয়ে খাওয়া দাওয়া কোন মতে চলে। অনেকেই আবার অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হয়। এই সব শিশুর পিতা-মাতা হতদরিদ্র। শুধু পেটের দায়ে কোন উপায়ান্তর না পেয়ে এই সব শিশুরা ঝুঁকি পূর্ন কাজে আসে।
যেসকল শিশুরা তাঁত শিল্পে কাজ করে,তাদের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,তাঁত শিল্পে শিশু শ্রমিকেরা ৪ঘন্টার বেশি সময় অবস্থান বরলে তাদের শারীরিক ও মানুষিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্বক ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। । এই শিল্পে কর্মরত শিশুদের চোখের দৃষ্টি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায় এবং শ্রুতি প্রতিবন্ধী হয়।বিশষজ্ঞ চিকিৎসকেরা মনে করেন ৯০ ডেসিবেল মাত্রার বেশি শব্দে ৪ ঘন্টার বেশি কাজ করলে শারিরি ও মানুষিক প্রতিবন্ধী হওয়ার আশংকা বেশি থাকে। আজকাল অনেক শিশুদের বিভিন্ন ডায়াগনোসিস সেন্টারে কাজ করতে দেখা যায়। সেখানে লেজার ভিশন এবং এক্স-রে মেশিনের আল্ট্রা আলোক-রশ্মি মারাত্বক ক্যান্সার সৃষ্টি করে। বড় বড় বিল্ডিংয়ে কনস্ট্রাকশনের কাজে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেক শিশু শ্রমিক ছাঁদেও উপর থেকে পড়ে গিয়ে অকালে মারা যায়।কিংবা পঙ্গুত্বে অভিসাপ নিয়ে সারা জীবন ভিক্ষাবৃত্তি কওে জীবন চালাতে হয়। প্রতিদিন গৃহপরিচালিকার নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুরা। তাদেও বুকে,পিঠে শরীরে লেগে আছে খুনতি পোড়ানোর দাগ। অসহ্য যন্ত্রনায় রাতের অন্ধকার কিনারে গোপনে ডুকরে ডুকরে কেঁদে মরছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুযায়ী ৪ ঘন্টার বেশি থাকা শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর হুমকি স্বরুপ। অনেক অসাধু মালিকেরা টু-পাইস কামানোর জন্য দেশের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দুটো পয়সার লোভ দেখিয়ে কমলমতি শিশুদের অতিরিক্ত সময় কাজ করানোর প্রবনতা পরিলক্ষিত হয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো মানবতার কথা বললেও,অনেক সময় তাদের অধিকারের কথা অদৃশ্য সূতায় বেঁধে যায়। জাপানীদের সবচেয়ে প্রিয় হল শিশুর মুখের নির্মল হাসী। কান্না তাদের কাছে বিষ বাস্প। আমি মনে করি বিবেকহীন মালিকদের স্বার্থে গড়া কারাগার ভেঙ্গে নিস্পাপ শিশুদের মুক্তি করে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করা,খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থানের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করা একটি সভ্য রাস্ট্র প্রধানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সর্বোপরি মনে রাখতে হবে-” শিশুরাই জাতীর কর্ণধর।
Leave a Reply