জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষে – আহত অর্ধশত – আটক ২০
Reporter Name
-
সংবাদ প্রকাশের সময় :
সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১২
-
২০৩
বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
রাজধানীর দৈনিক বাংলার মোড় থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত এলাকা জুড়ে সোমবার বিকেলে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের সময় পুলিশের একটি পিকআপ, বিআরটিসির একটি বাস এবং বেশ কয়েকটি মটর সাইকেলে আগুন দেয় জামায়াতকর্মীরা।এসময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ, পথচারী ও জামায়াত শিবিরের কর্মীসহ অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দৈনিক বাংলার মোড় থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বও পর্যন্ত বিভিন্ন গলি থেকে জামায়াত শিবিরের কর্মীরা তাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী মোতাবেক সোমবার বিকেলে মিছিল বের করে। এসময় পুলিশ তাদের মিছিলে বাঁধা দিলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিকাল পৌনে ৫টা থেকে পৌনে ৬টা পর্যন্ত বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটক থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত এলাকায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াতকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। আশপাশের গলিগুলো থেকেও জামায়াতকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে, এর জবাবে একপর্যায়ে জামায়াতের কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও পাল্টা ইটপাটকেল, টিয়ার সেল, রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে পুরো মতিঝিল, শাপলা চত্বর, বক চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তখন নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় এই সংঘর্ষের সময় সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অফিস থেকে বেরিয়ে বিপাকে পড়েন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। দৈনিক বাংলার মোড় হতে শাহপালা চত্বর পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে ৫টি মোটর সাইকেল ও একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট গিয়ে আগুন নির্বাপন করে। পুলিশের টিয়ার সেলে ধোঁয়া মতিঝিল, দিলকুশা, গুলিস্থানসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবীসহ পথচারীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাস্তায় রাস্তায় টায়ার, পেপারসহ বিবিন্ন বস্তুতে আগুন ধরিয়ে কিছুটা স্বস্থি নিশ্বাস ফেলেন। এ সংঘর্ষের ঘটনার জন্য পুলিশকে দায়ী করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এ ঘটনার জন্য পুলিশ দায়ী। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলাম। এ সময় পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে এবং লাঠিপেটা শুরু করে। রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শিবলী নোমান সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনাটি জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা ঘটিয়েছে। তারা অনুমতি ব্যাতিত মিছিল বের করে রাস্তা অবরোধ ও যানবাহন ভাংচুর করার চেষ্টা করে। ফলে পুলিশ তাদের বাঁধা দিতে গেলে পুলিশের উপর তারা হামলা চালায়। তিনি জানান, ভাঙচুর থামাতে গিয়ে আহত মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হায়াতুজ্জামান মোল্লা রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে এবং নায়েক আব্দুল লতিফ (৩০), কনস্টেবল মোহাম্মদ দোলন (২৫), সোহরাব (২৬), জালাল (২৩), নাজমুল (২২), খাদেমুল (২৩) ও আরিফ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদিকে ঢাকা মহানগর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মাসুদ জানান, তাদের সংগঠনের ২০/২৫ কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন। এ রিপোর্ট লেখার সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। প্রসঙ্গত, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বন্ধ এবং জামায়াতের নয়জন শীর্ষ নেতার মুক্তির দাবিতে সোমবার সারাদেশে জামায়াতের বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। অন্যদিকে,জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দর মুক্তি, জনদুর্ভোগ লাঘোব, কেয়ারটেকার সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবীতে দেশব্যাপী জামায়াতের বিােভ সমাবেশে পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস নিপে এবং রাবার বুলেট নিেেপর ফলে কমপক্ষে চারশতাধিক নেতা-কর্মী আহত এবং তিনশতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রোববার দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে সারাদেশ ব্যাপী ৫ নভেম্বর বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছিল। এ মিছিল ছিল শান্তিপূর্ণ । কিন্তু পুলিশ বিনা উস্কানীতে ঢাকা, বগুড়া, জয়পুরহাট, ফরিদপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া, ঠাকুরগাও, মৌলভীবাজার, নোয়াখালী, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, সাতীরা ও ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্নস্থানে শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে চারশতাধিক নেতা-কর্মী আহত ও তিনশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি । একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিনা কারনে পুলিশের এ ধরনের নির্যাতন গণতন্ত্রকে ধ্বংশ করবে। সরকার পুলিশকে তার লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এ ঘটনার মাধ্যমে সরকারের ফ্যাসিস্ট আচরণ আবারও প্রমাণিত হল। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তাই বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদেও বাধা সৃষ্টি করছে। এ সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জনগণের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ এ সরকার নিজেদের দুর্বলতা ঢাকা দেওয়ার জন্য বিরোধী দল বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর উপর হামলা চালাচ্ছে। মিছিল, মিটিং করা এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকারে হস্তপে করে সরকার সংবিধান লংঘন করছে। জুলুম নির্যাতন করে অতিতে কোন স্বৈরাচারী সরকার টিকে থাকতে পারেনি। এ সরকারও পারবে না। জনপ্রতিরোধের মুখে এ সরকারকে বিদায় নিতে হবে। দেশবাসীকে এ ফ্যাসিস্ট জালেম সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানানো হয় এবং জামায়াতের ৯ শীর্ষ নেতাসহ গ্রেফতারকৃত সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবী করা হয় বিবৃতিতে।
সংবাদটি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন...
More News Of This Category
Leave a Reply