ইমরুল চৌধুরী কক্সবাজার সদর হাসপাতাল কর্মস্থল হলেও কোন দিন আসেননি অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। কর্মস্থল কক্সবাজার হলেও কক্সবাজারে না এসে ঢাকা-চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এমনকি হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারিরাও তাদের চিনেন না। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনী, সার্জারী, প্যাথলজী ও শিশুবিভাগের চার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কর্মস্থলে না আসার ফলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে দেখা দিয়েছে চিকিৎসক সংকট। ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেও চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন জেলার দূরদুরান্ত থেকে আগত রোগীরা। এতদিন ঐসব চিকিৎসক কক্সবাজার সদর হাসপাতলের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় কর্মস্থলে নাএসেও সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছিলো। সম্প্রতি হাসপাতালে নতুন তত্ত্বাবধায়ক যোগদানের পর থেকে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগিদের মানসম্মত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সুযোগ থাকলেও কতিপয় ডাক্তারের হাতে হাসপাতালের প্রশাসন জিম্মি হয়ে পড়ায় মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডাক্তার মোহাম্মদ সেলিম জানান, মাত্র দুইজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগ। শিশু বিভাগের কনসালটেন্ট এনায়েতুল ইসলামের বড়ি গাজীপুরে তিনি কোন সময় এখানে আসেননি। একই বিভাগে কর্মরত ডাক্তার মাইনু জানিয়েছেন কনসালটেন্ট এনায়েতুল ইসলাম কর্মস্থলে কেন আসেন না তা তিনি জানেন না। বেশীর ভাগ সময় মেডিকেল অফিসারদের সবকিছু সামাল দিতে হয়। একজন ডাক্তারকে প্রতিদিন প্রায় ১ শ’ রোগি দেখতে হয়। তিনি আরো জানান অতিরিক্ত রোগির চাপে সকলকেই হিমশিম খেতে হয়। যার কারণে রোগিরা আশানুরূপ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একই বিভাগে কর্মরত একজন নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চেম্বারে রোগি কমে যাওয়ার ভয়ে কক্সবাজারের কয়েকজন চিকিৎসক চাননা শিশু বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডা. এনায়েতুল ইসলাম কক্সবাজার আসুক। কৌশলে ঐ সকল চিকিৎসকরা শিশু বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডা. এনায়েতুল ইসলামকে সকল অনৈতিক সুবিধা প্রদান করে কক্সবাজারে আসতে নিরুৎসাহিত করছেন। জানা যায় ডাক্তার এনায়েতুল ইসলামের বাড়ি গাজীপুরে হওয়ায় তিনি প্রতিমাসে গোপনে বেতন ভাতা উত্তোলনের জন্য কক্সবাজারের আসতেন। নবাগত তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার অজয় ঘোষ যোগদানের পর থেকে অনুপস্থিত ডাক্তারদের কাজে যোগদানের তাগিদ দেওয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হিসাবে পরিচিত গাইনী বিভাগ। রোগিদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে এই বিভাগ ইতোমধ্যে শীর্ষে রয়েছে। এতে বিভাগীয় প্রধান হিসাবে আছেন ডাক্তার জিন্নাহ আরা। তিনি কোন দিন হাসপাতালে আসেননি। ডাক্তার জিন্নাহ আরা চট্টগ্রামে প্রাইভেট ক্লিনিক ও নিজস্ব চেম্বারে নিয়মিত রোগি দেখেন। গাইনী বিভাগে কর্মরত একজন ডাক্তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডাক্তার জিন্নাহ আরা নাম মাত্র যোগদান করে কর্মস্থলে না আসায় এই গুরুত্বপুর্ণ বিভাগটিতে চিকিৎসা প্রদানে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। সবাই এক যোগে কাজ করলে মানুষ আরো ভাল চিকিৎসা পেত। হাসপাতালে সামর্থ থাকলেও ডাক্তারের কারণে তা ভেস্তে যেতে বসেছে।
প্যাথলজী বিভাগের বিশেষঙ্গ চিকিৎসক সেতারা পারভীনও কক্সবাজারে আসেন মাস শেষে একবার। মাসে একবার এসে হাজিরা খাতায় পুরো মাসের স্বাক্ষর করে তিনি চলে যান। প্যাথলজী বিভাগের বিশেষঙ্গ চিকিৎসক সেতারা পারভীন চট্টগ্রামে নিয়মিত চেম্বার করছেন ।
সার্জারী বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মতিউর রহমান কে কেউ চেনেন না। কর্মরত এমএলএস মোহাম্মদ রফিক জানায় জরুরী প্রয়োজন হলে তিনি আসেন বলে শুনেছেন। তবে কোন দিন দেখেন নি। জানা যায় তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগিদের অপারেশন করে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন । কিন্তু কর্মস্থল কক্সবাজার সদর হাসপাতালে কোন দিন আসেন না। সদর হাসপাতালের আর এমও ডাক্তার পুচনু কয়েকজন বিশেষঙ্গ চিকিৎসকের অনুপস্থির কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন জনবল সংকটের কারনে হাসপাতালে আগত রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি জানান, ঈদের ছুটিতে বর্হিবিভাগে তিনি রোগি দেখেছেন। রোগির সংখ্যা বেশী হলে তত্ত্বাবধায়ক ও বিভিন্ন সময় রোগি দেখেন বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার অজয় ঘোষ জানান, তিনি এ হাসপাতালে যোগদানের পর হাসপাতালে অনুপস্থিত চিকিৎসকদের কর্মস্থলে যোগদানের জন্য ইতোমধ্যে একবার চিঠি দিয়েছেন। এখন দ্বিতীয় চিঠি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা যাতে যথাযথ চিকিৎসা পায় তার জন্য আমরা বদ্ধ পরিকর।
Leave a Reply