টেকনাফ নিউজ ডেস্ক :: বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী স্থানান্তরের প্রথম পর্যায়ে চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে করে ভাসানচরে যাচ্ছে এক হাজার ৬৪২ জন। রোহিঙ্গাদের বহনকারী জাহাজগুলো আজ শুক্রবার সকালে নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
চট্টগ্রামের অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে রাত্রি যাপন শেষে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের তিনটি ঘাট দিয়ে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যাত্রা শুরু হয়েছে। এর আগে, সকাল ৯টা থেকে তাদের জাহাজে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়।
আটটি জাহাজে করে মোট এক হাজার ৬৪২ জনকে ভাসানচরে পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। আজ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বোট ক্লাব থেকে আটটি জাহাজে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে উখিয়া কলেজ মাঠ থেকে ৩৯টি বাসে করে রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রাম আনা হয়। এরপর পতেঙ্গা বিএফ শাহীন কলেজ মাঠ ও বোট ক্লাব এবং আশপাশের এলাকায় অস্থায়ী ট্রানজিট শিবিরে তাদের রাখা হয়। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রস্তুতি শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য ভাসানচরে অবকাঠামোসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেছে। সেখানে অবকাঠামো উন্নয়ন, বনায়ন ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কাজ করছে নৌবাহিনী।
নৌবাহিনী সূত্র জানিয়েছে, প্রথম দফায় যেসব রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হচ্ছে, তাদের জন্য খাবার, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ অন্তত এক মাসের রসদ সরকার মজুদ রেখেছে।
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আছে। কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এক লাখ মানুষকে সরকার ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর জন্য চরটিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
এদিকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়ে আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থা আপত্তি করে আসছে। তাদের বক্তব্যের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, সরকার জোর করে কোনো রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাচ্ছে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জোর করে কোনো রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাচ্ছি না। যারা যেতে ইচ্ছুক তাদের নিয়ে যাচ্ছি। তারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাচ্ছেন।’
রোহিঙ্গাদের এ ধরনের স্থানান্তর নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ বিষয়ে ড. মোমেন বলেন, (রাখাইনে প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ব্যর্থতার জন্য) জাতিসংঘ তাদের আশঙ্কা ও উদ্বেগের কথা মিয়ানমারকে জানালে বাংলাদেশ সরকার খুশি হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার চায় না যে ভূমিধসের কারণে কক্সবাজার ক্যাম্পে মানুষ নিহত হোক। কক্সবাজারের চাপ কমিয়ে রোহিঙ্গাদের ভাসানচর আরো উন্নত সুযোগ-সুবিধা দেবে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থার অভাবের কারণে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং ২০১৯ সালের আগস্টে দুবার তাদের প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
Leave a Reply