এম. কফিল উদ্দিন…গ্রাম আদালত গ্রামীন মানুষের কাছে ‘আশার আলো’ জাগিয়েছে। বিচারপ্রার্থীরা আদালতে না দৌড়ে সহজেই নিজের ইউনিয়নে বিচার কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারছে। ফলে বিচারপ্রার্থীরা একদিকে ন্যায় বিচার পাচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিকভাবে সমস্যার সম্মূখীন হচ্ছে না। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও বিচারপ্রার্থীদের নির্বাচিত বিচারকরা আন্তরিকভাবে পক্ষপাতিত্ব ও স্বজনপ্রীতিবিহীন বিচার কাজ সম্পন্ন করছে। খোঁজ নিয়ে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গ্রামীন আদালতের বিচার কাজ স্বচ্ছ এবং আন্তরিক পরিবেশে। বিচারকরা পরিচিত হওয়ায় বাদী-বিবাদীরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এছাড়া, আনুষঙ্গিক খরচ কমে যাওয়ায় বিচারপ্রার্থীরা আদালতমুখী হচ্ছে না। জনপ্রতিনিধিরা জটিল সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন সহজেই। পেকুয়া উপজেলায় প্রত্যেকটি ইউনিয়নে গ্রাম আদালতের বিচারিক কার্যক্রম চলছে। আদালত চলে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে পরিষদ মিলনায়তনে। মূল বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইউপি চেয়ারম্যান। তাকে সাহায্য করেন ইউপির দুই সদস্য। মহিলা বিষয়ক সমস্যা হলে একজন মহিলা ইউপি সদস্য থাকেন। এছাড়া বাদী-বিবাদীর একজন করে প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন এ আদালতে সদস্য হিসেবে। গ্রামীণ আদালত সূত্রে জানা যায়, এ বিচারিক আদালতে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে। এ আদালাতে বিচারপ্রার্থী হতে হলে বাদীকে ইউনিয়নের নিজস্ব ফরম সংগ্রহ করে দেওয়ানি মামলার জন্য ৪টাকা, ফৌজদারী মামলার জন্য ২টাকা, পারিবারিক আদালতে মামলা হলে ২৫টাকা ফি দিয়ে জমা দিয়ে আবেদন করতে হয়। গ্রাম আদালতের কার্যক্রম সরজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, আবেদন করার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাদী-বিবাদীকে নোটিশ করা হয়। এবং বলা হয় তাদের পক্ষে একজন ইউপি মেম্বার ও স্থানীয় শালিষী কার্যে জড়িত (মুরব্বী) ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করার জন্য। প্রস্তাব পাওয়ার ৫ সদস্যের আদালত গঠন করা হয়। নির্দিষ্ট দিনে বাদী-বিবাদীর উপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। পক্ষের ও বিপক্ষের বক্তব্য শুনেন আদালত। বাদী-বিবাদীর পক্ষে যারা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন তার এ্যাডভোকেটের ভূমিকা পালন করেন। সব শুনে আদালত রায় দেন। প্রয়োজনে কোন পক্ষ সময় চাইলে তাও মঞ্জুর করে আদালত। বারবাকিয়া গ্রামীণ আদালতে আসা বিচারপ্রার্থী ওমরকাজীর কাছে গ্রামীন আদালতের বিচার কার্যক্রমের ব্যাপারে জানতে চাইলে জানান, গ্রামীন আদালত হওয়ায় আমাদের মত দরিদ্র বিচারপ্রার্থীরা অনেক উপকার পাচ্ছে। বিচারকরা সুষ্ট ও স্বচ্ছভাবে বিচারের রায় ঘোষনা করছে। বিশেষ করে আমরা সুবিধা পাচ্ছি আদালতের দ্বারে দ্বারে না ঘুরে নিজ এলাকায় বিচারের রায় পাচ্ছি। এখানে কোন পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি হচ্ছে না। আদালত তার নিয়মে রায় দিচ্ছে। এ ব্যাপারে পেকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ্ বলেন, বিচারপ্রার্থীরা চর্তুমূখী সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। এ আদালতে সাধারণত জায়গা-জমি, বিয়ে শাদী, টাকা-পয়সা পাওনা নিয়ে বিরোধ এবং বিভিন্ন সমস্যাধি নিয়ে নালিশ করে বিচারপ্রার্থীরা। তারা স্বচ্ছ ও ন্যায় বিচার পাচ্ছে। দূর দূরান্তের আদালতে গিয়ে তাদের রায় পেতে হচ্ছে না। সময়ক্ষেপন না হওয়ায় নিজের এলাকায় বিচারের রায় নিয়ে সন্তুষ্ট হচ্ছে বিচারপ্রার্থীরা। স্থানীয়ভাবে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়াতে কোন প্রকার পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রামীন আদালত গ্রামীন মানুষের জন্য। বিচার প্রার্থীদের ন্যায় বিচার পাওয়া নায্য অধিকার। এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ নেই বিচারকদের।
Leave a Reply