হাফেজ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ
আল কোরআন বিশ্বজাহানের অধিপতি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ সর্বশ্রেষ্ঠ মোজেজা। ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী (নবুয়াতের দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে) জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে এ গ্রন্থ অবতীর্ণ হয়। এর সাহিত্যিক অর্থ হচ্ছে নিদর্শন। পৃথিবীর সর্বাধুনিক গ্রন্থ আল কোরআন মানুষের হƒদয়ে পৌঁছে দিচ্ছে হাফেজে কোরআনের দল। তাদের কণ্ঠে কোরআনের অমীয় বাণী শুনে মনে হয় জগৎ সংসারের স্রষ্টা যেন সুবিশাল আটলান্টিক মহাসাগরকে ছোট একটি ঝিনুকের মধ্যে ঢুকিয়ে রেখেছেন। অথচ আল কোরআনের ধারক ও বাহকেরা আমাদের সমাজে আজ কতটাই বা মূল্যায়ন পাচ্ছেন। এ বিষয় আমরা কথা বলেছিলাম দু’জন সম্মানিত হাফেজর সঙ্গে। (১) হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ মুমীনুল ইসলাম দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক এবং জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তারাবির ইমাম।
প্রশ্ন : কোরআনভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের কী করা উচিত।
উত্তর : ইসলাম হাফেজদের যতটা মর্যাদা দিয়েছে ঠিক ততটা সমাজ ও রাষ্ট্রের বৃহৎ স্বার্থে এ মেধাবী মুখগুলোর মূল্যায়ন সমাজে নিশ্চিত করতে হবে।
প্রশ্ন : আমরা কীভাবে কোরআনের খেদমত করতে পারি।
উত্তর : ইসলামের স্বার্থে যত খেদমত রয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ খেদমত হচ্ছে সমাজে হাফেজদের যথাযোগ্য মর্যাদা নিশ্চিত করা। কারণ তারা কোরআন খতমের সওয়াব হাসিলের মতো ধর্মীয় ও সামাজিক সেবা দিচ্ছেন।
প্রশ্ন : রাষ্ট্রীয়ভাবে হাফেজদের কতটা মূল্যায়ন করা উচিত।
উত্তর : উচ্চশিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে সমাজ বা রাষ্ট্র হাফেজদের জন্য কোটার ব্যবস্থা না করলে মুসলিম জাতির মর্যাদা অদূরভবিষ্যতে আমাদের সমাজে কতটা অক্ষুণœ থাকবে তা ভাবনার বিষয়।
(২) হাফেজ কারি মোহাম্মদ আতাউল্লাহ আল-মামুন সাদেক : খান সড়ক, মোহাম্মদপুর জাফরাবাদ। মুহাম্মাদে আরাবি (সা.) তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসার ওস্তাদ। হাফেজখানায় প্রাইমারি স্কুলের সিলেবাস অনুসরণ করে ওই মাদ্রাসায় শিক্ষা দেয়া হয়।
প্রশ্ন : হাফেজদের জন্য আধুনিক শিক্ষার প্রয়োজন কেন?
উত্তর : হাফেজদের দেশের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে শিক্ষা দেয়া উচিত।
প্রশ্ন : হিফজুল কোরআনের সঙ্গে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে আপনার ছাত্ররা কোরআনের শিক্ষায় দুর্বল হয়ে পড়ছেন কি?
উত্তর : আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় আমার ছাত্ররা ইরান, জর্দান ও সৌদি আরবে চান্স পেয়েছে। আধুনিক শিক্ষা এ ক্ষেত্রে বলব তাদের কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে।
প্রশ্ন : শিক্ষা-দীক্ষায় হাফেজদের পিছিয়ে পড়ার কারণ কী?
উত্তর : আমাদের দেশের একঘেয়েমি শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে হাফেজে কোরআনরা পিছিয়ে পড়ছেন। হে কোরআনপ্রেমিক পাঠক সমাজ, সিভিল সার্ভিস থেকে শুরু করে আমাদের দেশে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, উপজাতি, শিল্পী, খেলোয়াড়, প্রতিবন্ধী, নারী প্রভৃতি শ্রেণীর মানুষের জন্য শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে কোটার ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ হাফেজে কোরআন একজন শিল্পী। কোটার ব্যবস্থা থাকলে একজন হাফেজের বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।
প্রশাসনের উচ্চ আসনে একসময় হাফেজে কোরআন খুঁজে পাওয়া যাবে। ফলে কোরআনভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাংলাদেশ নামক মুসলিম রাষ্ট্রের গৌরব বৃদ্ধির লক্ষ্যে হাফেজদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করতে স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। রাষ্ট্র কোরআনের খাদেমদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করলে ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে লাল-সবুজের পতাকা সমুন্নত রাখা হাফেজদের মাধ্যমেও সম্ভব হবে, ইনশাআল্লাহ।
Leave a Reply