কক্সবাজার শহরে ইসলামিয়া বালিকা মাদ্রারাসার সড়কে ঝাউবিথি কেটে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বসতি। এটি কক্সবাজার পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ডের একাংশ। এখানে বসবাসকারীরা এই এলাকাকে পশ্চিম বাহারছড়া বলে দাবী করে। কিন্তু বাহারছড়ার স্থানীয় আদিবাসীরা এটিকে রোহিঙ্গা পল্লী নামেই চিনে। শুধু বাহারছড়ার স্থানীয় আদিবাসী নয়,পৌরবাসীর কাছেও এটা রোহিঙ্গা পল্লী হিসাবে ব্যাপক পরিচিত। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে বসবাসকারীদের শতকরা ৯০ভাগই রোহিঙ্গা। যদিওবা তাঁরা কক্সবাজার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসী বলে নিজদের দাবী করে। কিন্তু তাদের দাবী ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন বাহারছড়ার স্থানীয় অধিবাসীরা। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে হরহামেশাই লোকজন এই এলাকায় আসে বলে জানান এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা। এছাড়া এখানে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা মাঝেমধ্যেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান বলে নিশ্চিত করে ক্যাম্প সূত্র। অনুসন্ধানে জানা যায়, পশ্চিম বাহারছড়ার সরকারী খাস জমিতে গড়ে উঠা এই রোহিঙ্গা পল্লীতে প্রায়ই ৩/৪শ বসত বাড়ি রয়েছে। আর এখানে প্রায়ই ২২ শত লোকের বসবাস। এদের অধিকাংশই এখানে ভাড়ায় থাকে।আর এই অবৈধ বসত বাড়িগুলোর মালিক স্থানীয় প্রভাবশালীরা। আর তাদের ইন্ধনেই দিনে দিনে এখানে রোহিঙ্গা উৎপাত বাড়ছে বলে দাবী করেন শহরের সাধারণ লোকজন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আদলেই গড়ে উঠেছে এই অবৈধ বসতি। শুধু সবুজ বেষ্টনীর আওতায় সৃজিত সৈকতের ঝাউবাগান কেটে ক্ষান্ত হননি এই প্রভাবশালী মহল। রোহিঙ্গাদের জন্য অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগেরও ব্যবস্থা করেছেন।এখানে প্রায়ই দুই-তৃতীয়াংশ বাড়িতে অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ রয়েছে বলে জানা যায়। আর এই অবৈধ সংযোগের জন্য লাইট প্রতি মাসিক ২০০ টাকা করে আদায় করে বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলে জানায় ঐ এলাকায় বসবাসকারী রোহিঙ্গারা। এদিকে পশ্চিম বাহারছড়া নামধারী এই রোহিঙ্গা পল্লীর রোহিঙ্গাদের বিচরণ অপরাধের প্রতিটি পরতেই। এখানে বসবাসকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অপরাধী কার্যক্রমের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এখানে বসবাসকারী শতকরা ৭০ ভাগ রোহিঙ্গা অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত।মাদক ব্যবসা, মাদক পরিবহন, মাদক সেবন, ছিনতাই, চুরি, পতিতাবৃত্তি, পতিতাবৃত্তির দালালী, থানার দালালী ও অবৈধ গর্ভপাতের কাজেও এ এলাকার অনেকে রোহিঙ্গা জড়িত। জানা যায়, সারাদিনই এ এলাকায় মাদকের বেচাকেনা চলে। এ এলাকায় ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন ও বিদেশী মদ খুব সহজেই মিলে। আর এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে বার্মাইয়া সাইফুল (নিজেকে সে কুমিল্লার বলে দাবি করে) ও তার স্ত্রী বার্মাইয়া ছেনু। আর এদের মূল ক্রেতা হচ্ছে বিভিন্ন হোটেলের বয় ছেলেরা। আর সাইফুলের হয়ে ক্রেতাদের কাছে মাদক সরবরাহ করে তার শ্যালিকা জামাই রিক্সা চালক মুবিন। জানা যায়, সাইফুলের বাসায় নিয়মিত মাদক সেবনের আসর বসে। উত্তর বাহারছড়ার ইয়াবা ব্যবসায়ী আরফাত এখানে তার দখলকৃত জায়গায় ইয়াবা ব্যবসা করে। সারাদিনই ইয়াবার আসর বসে এখানে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে এই এলাকায় অনেক অপরিচিত লোকের আনাগোনা বেড়ে যায়। শহরের উঠতি যুব সমাজ এ এলাকায় আসে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এদের অনেকে আসে মাদক গ্রহণের জন্য আর অনেকে এই এলাকার চিহ্নিত পতিতার বাড়িতে যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই এলাকায় ৩টি কলোনি রয়েছে। এই ৩ কলোনিতে প্রায় ১৮টি বাসা রয়েছে। যেখানে প্রতিনিয়ত পতিতাবৃত্তির কাজ চলে। আর এ পতিতাবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করে শহরের চিহ্নিত পতিতার দালাল নুর ছালাম। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, বীচ এলাকায় যেসব ছিনতাইয়ের ঘটনা হয় তার সাথে জড়িত এ এলাকার মাদকাসক্ত রোহিঙ্গা যুবকরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই এলাকায় অনেক ভাঙ্গারির দোকান রয়েছে। মাদকে আসক্ত যুবকরা বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি করে এই ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করে। রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাইয়ের সাথেও এখানকার রোহিঙ্গা যুবকরা জড়িত বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। এ ছাড়া এই এলাকার রোহিঙ্গা নারীরা অপরাধী কর্মকান্ডে পিছিয়ে নেই বলে জানা যায়। তারা টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদক দ্রব্য নিয়ে আসে এবং শহরের বিভিন্ন মাদক বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। জানা যায়, নুর জাহান, বিলকিস, ময়নাসহ আরো ১০/১২জন নারী এই মাদক পাচারের সাথে জড়িত। এই এলাকার রোহিঙ্গা নারীরা অবৈধ গর্ভপতের মত জঘন্যতম ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। এই রোহিঙ্গারা ভোর থেকে সদর হাসপাতালের আশেপাশে অবস্থান নেয় এবং অবৈধ গর্ভপাতের মত অপকর্মে সহায়তা করে। অনেকবার এদেরকে এই সদর হাসপাতাল থেকে পুলিশ আটক করে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তারা বার বার আইনের হাত থেকে বেরিয়ে আসে এবং পূনরায় অপকর্ম শুরু করে বলে জানা যায়। পশ্চিম বাহার ছড়া এলাকাটি কক্সবাজার শহরের শীর্ষ অনৈতিক কর্মকান্ড সংঘটনকারী এলাকা হিসেবে চিনে কক্সবাজার শহরবাসী। বাহারছড়া হাইস্কুল ও ইসলামিয়া বালিকা মাদ্রাসা রয়েছে এ এলাকায়। কিন্তু এলাকার উঠতি বখাটে যুবকদের কারণে বাহারছড়া হাইস্কুলটি বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এই স্কুলে আসা-যাওয়া করা ছাত্রীরা প্রতিনিয়তই হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে জানা যায়। এই কারণে অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের এই স্কুলে পাঠাতে চান না বলে স্কুল সূত্র জানান। ইসলামিয়া বালিকা মাদ্রারাসার ছাত্রীদেরও ঠিক একই অবস্থা। প্রতিনিয়ত এ যুবকদের হয়রানির শিকার হয়ে তারা মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া করছে না বলে জানান একাধিক শিক্ষার্থী। মাদ্রাসায় আসার সময় ও মাদ্রাসা ছুটির সময় এ এলাকার বখাটে যুবকরা মাদ্রসার আশপাশে বিভিন্ন স্থানে অপেক্ষা করে বলে জানা যায়। মাদ্রাসা ও স্কুল শিক্ষার্থীদের এই এলাকার বখাটেদের তিক্ত মন্তব্য শোনে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করতে হয়। তাছাড়া বাহারছড়া হাইস্কুলে এক সময় ছাত্রছাত্রী ৫শ থেকে ১ হাজারের অধিক ছিল। তবে এখন ইভটিজিং ও নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে দিন দিন স্কুলের শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে।
Leave a Reply