আলোচিত কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) দর প্রস্তাব দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হচ্ছে। এ প্রকল্পের ৪১৬ কোটি চার লাখ ৯৫ হাজার ৪৬ টাকার দরপত্রে অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন তারা। গত ২০শে জুন এ বিষয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভা কমিটির তিন সিদ্ধান্ত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কমিটির দ্বিতীয় সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, দরপত্র মূল্যায়ন এবং ক্রয় প্রক্রিয়ার অন্যান্য পর্যায়ে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা (বেবিচক) ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়েছে কিনা তা যাচাই বাছাই করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে অনুরোধ করা হবে। ইতিমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ প্রস্তাবটি দুদকে পাঠানোর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। মন্ত্রিসভা কমিটির নেয়া প্রথম সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে- কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পটির ঠিকাদার নিয়োগের লক্ষ্যে উপস্থাপনকৃত ক্রয় প্রস্তাবে সুপারিশ করা দরদাতার আগের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ না থাকা এবং বিড সিকিউরিটি না থাকার কারণে প্রস্তাবটি অকার্যকর বিধায় এ দরপত্রটি বাতিল করে পুনঃদরপত্র আহ্বান করা যেতে পারে। মন্ত্রিসভা কমিটির এ সিদ্ধান্তের আলোকে ইতিমধ্যে দর প্রস্তাব প্রক্রিয়া করতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। ওদিকে মন্ত্রিসভা কমিটিতে নেয়া তৃতীয় সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, সুপারিশ করা তুর্কি ঠিকাদারের রানওয়ে পেভমেন্ট নির্মাণ কাজের আগের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পাঠানো প্রতিবেদনে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। শুধুমাত্র দরপত্র প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা রয়েছে মর্মে অভিমত প্রকাশ করে প্রতিবেদন দেয়া হয়। যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা যেতে পারে। বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এ তিন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এ সংক্রান্ত কার্যবিবরণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) ক্রয় প্রস্তাবটি পুনঃবিবেচনা করা প্রয়োজন। যে সকল বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে তার যথাযথ যুক্তি আছে বলে মনে হয় না। কক্সবাজার বিমানবন্দরের কাজ দ্রুত করা প্রয়োজন। বিশেষ করে সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর দেশের নিরাপত্তা রক্ষার বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। পরবর্তী সভায় বিষয়টি পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। একই কার্যবিবরণীর ৭৩ অনুচ্ছেদ পড়ে মন্তব্য করেন, যেটার দরপত্রে দাম কম সেটা বাদ দেয়ার কি যুক্তি থাকতে পারে? অভিজ্ঞতাও রয়েছে, দূতাবাসের চিঠিতে তা উল্লেখ আছে। কার্যবিবরণীতে প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একটি সারসংক্ষেপ গত ১৮ই জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠান। ওই সারসংক্ষেপে কক্সবাজার বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের দর প্রস্তাবের আদ্যোপান্ত তুলে ধরে বলেন, কক্সবাজার ক্রয় প্রস্তাব এর আগেও ক্রয় কমিটিতে ২০শে মে বিবেচিত হয়। ওই সময় প্রস্তাবটি ঠিকমতো উপস্থাপন করা হয়নি বিধায় পুনর্বিবেচনা করে যথাযথ প্রস্তাব পেশ করার জন্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়। গত ২০শে জুন কক্সবাজার বিমানবন্দর বিষয়ক ক্রয় প্রস্তাব ৬ নং আলোচ্য বিষয় ক্রয় কমিটিতে পুনঃবিবেচিত হয়। তারা আগের সভায় যেসব ব্যাখ্যা চাওয়া হয় তার মধ্যে দু’টি বিষয়ের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে যে ব্যাখ্যা দেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। ক্রয় কমিটি এই অভিজ্ঞতার প্রত্যয়ন গ্রহণ করেনি। ওই আলোচনায় আরেকটি বিষয় বেরিয়ে আসে যে কুয়ান্তা ইনসাত নামীয় প্রতিষ্ঠানের কোন বৈধ বিড বন্ড নেই। তাদের ব্যাংক গ্যারান্টি ইতিমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। তাই প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনা করলেও এটি গ্রহণের সুযোগ নেই বলে ক্রয় কমিটি নতুন করে দরপত্র আহ্বানের নির্দেশ দেয়। সারসংক্ষেপের শেষ প্যারায় অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সমীপে বিষয়টি পেশ করলাম। এই অবস্থায় বিষয়টি কি পুনর্বিবেচনা করবো। বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রীও ক্রয় কমিটির সিদ্ধান্তে ঐকমত্য পোষণ করেন। এর ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ক্রয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া যায়। তাই ক্রয় কমিটির তিন সিদ্ধান্ত এখন বহাল থাকলো।
Leave a Reply