কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে প্রতিদিন ছয় শতাধিক ছোট-বড় যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে চরম ঝুঁকি নিয়ে। প্রায় ৭৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত এবং ২৪টি নড়বড়ে সেতু-কালভার্ট সড়কটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে বসা ৪৫টির বেশি অবৈধ হাটবাজারের কারণে দুই ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগছে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। এতে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। বন্যার পানির স্রোতে সেতু ও কালভার্টগুলো ধসে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।সৌদিয়া ও এস আলম পরিবহনের একাধিক চালক জানান, এ সড়কে প্রায় প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় লোকজন হতাহত হলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ও কালভার্টগুলো মেরামতের কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। হাটবাজারগুলো সরানোর উদ্যোগও নেই। এতে পরিবহন মালিক-শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কক্সবাজার পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘এ সড়কে যাত্রীবাহী তিন শতাধিক দূরপাল্লার বাস ও ট্রাক, পিক-আপ, মাইক্রোবাস, জিপসহ ছয় শতাধিক যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু সড়কের দুরবস্থা ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৩৫টি হাটবাজার বসে। এসব হাটবাজারে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে গন্তব্যে পৌঁছতে প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগে।’
টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সাইফুল করিম বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে বন্দরে আমদানি করা বিভিন্ন জাতের বিপুল পরিমাণ হিমায়িত মাছসহ নানা রকম ভোগ্যপণ্য ও অন্যান্য মালামাল ট্রাক বোঝাই করেই সড়কপথে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সড়ক ও সেতুর খারাপ অবস্থার কারণে মালবাহী ট্রাকের দ্বিগুণ সময় লেগে যায়। এতে অনেক সময় হিমায়িত মাছসহ অন্যান্য পণ্য নষ্ট হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে সরকার প্রতি মাসে গড়ে সাত কোটি টাকার রাজস্ব আয় করলেও সড়কটির সংস্কারে তেমন উদ্যোগ নিচ্ছে না।
টেকনাফের উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শফিক মিয়া বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে উৎপাদিত সুপারিসহ লাখ লাখ মেট্রিক টন ফসল ও লবণ ট্রাকে করে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সড়কের দুরবস্থার কারণে ট্রাক মালিক-চালকেরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’ অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের লিংকরোড, বিসিক শিল্প এলাকা, চেইন্দা, মরিচ্যাবাজার, রাবেতা হাসপাতাল, কোটবাজার, কুতুপালং, উখিয়াবাজার, নয়াবাজার, ঝিমংখালী, কাঞ্জরপাড়া, মৌলভিবাজার, নীলা, চৌধুরীপাড়া, খারাংখালী, জাদিমুরা, লেদা, দমদমিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ৩৪টি সেতু ও কালভার্ট নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে গত চার-পাঁচ মাস ধরে ১০টি সেতু ও কালভার্ট সংস্কারের কাজ চলছে। এসব সেতুর পাশে তৈরি বিকল্প সড়কের অবস্থাও খারাপ।
এসব বিকল্প সড়ক দিয়ে টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। গত ২৩ জুন বন্যার পানির স্রোতে রামু উপজেলার খুনিয়া পালং ও ধেছুয়া পালং গ্রামের দুটি নড়বড়ে সেতু ধসে পড়লে টানা পাঁচ দিন এই সড়কে সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে সেতু দুটির পাশে বিকল্প মাটির রাস্তা তৈরি করে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হলেও নতুন করে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে তা আবার বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এরই মধ্যে কয়েকটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। অবশিষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ও কালভার্ট এবং সড়ক সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই মেরামতকাজ শুরু করা হবে।’
সড়কের ওপর হাটবাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত মে মাসে যৌথ অভিযান চালিয়ে কোটবাজার, মরিচ্যা ও উখিয়া এলাকায় আট শতাধিক অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আবার এসব দোকানপাট বসানো হয়েছে। লোকবল-সংকটের কারণে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।
Leave a Reply