আবদুল্লাহ নয়ন:…রমজানের আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে কক্সবাজার থেকে ৫০ কোটি টাকারও বেশি ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার হবে। নিরাপদ কৌশলে এসব ইয়াবা পাচারের জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে। এজন্য সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে গোপনে ‘সমঝোতা’ও হয়েছে। নারী নেত্রী, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষিকা, ড্রাইভার ও কথিত সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত কয়েকটি চক্র নেটওয়ার্ক করে সপ্তাহ খানেক সময়ের মধ্যে এসব ইয়াবা পাচার করতে পারে বলে তথ্য পাওয়া গেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও সীমান্তের একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্রের কাছে।
যেভাবে করা হয় পরিকল্পনা : প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, রমজানের ঈদ আসন্ন। তারপর ঈদ পরবর্তী বিভিন্ন উৎসব। বিগত বছর গুলোতে এরকম ঈদ মৌসুমে ইয়াবা পাচারকারীরা নিরীহ মহিলা, বেকার যুবকসহ বিভিন্নভাবে ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার করতো। প্রশাসনের নজরে পড়া, বারবার ইয়াবাসহ পাচারকারীরা গ্রেফতার হওয়ায় একপর্যায়ে তারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করে। এজন্য কক্সবাজার শহরের বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল-রেস্তোরায় দফায় দফায় বৈঠকও হয়েছে। সর্বশেষ এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, কারা কোথায় থেকে কিভাবে কাজ করবে। সিদ্ধান্ত মতে চক্র গুলো ৫০ কোটি টাকারও বেশি ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার করার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে সুত্রগুলো জানিয়েছে।
যাদের নিয়ে চক্র গঠিত : ইয়াবা পাচারে গঠিত চক্রের মধ্যে সবচে’ বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিষয়টিকে। সে লক্ষ্যে চক্রে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, শীর্ষ দু’টি দলের ১০ জন নারী নেত্রী। যাদেরকে প্রতিনিয়ত মাঠে-ময়দানের রাজনীতিতে সক্রিয় দেখা যায়। স্কুল শিক্ষিকা, টেকনাফ, উখিয়া, হ্নীলা, মরিচ্যা, রামু ও কক্সবাজারের ২০ জন জনপ্রতিনিধি, দক্ষ ড্রাইভার, একটি আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও কয়েকজন কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারী ব্যক্তি।
যেভাবে পাচার হবে : সুত্র আরো জানায়, টেকনাফ থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট গুলো কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক, মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও নৌপথ হয়ে প্রথমে আসবে কক্সবাজারে। প্রাইভেট গাড়ি, মালবাহী ট্রাক, লবণ বোঝাই ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস, রোগীবাহী এম্বুলেন্স, বিভিন্ন এনজিও সংস্থার গাড়ি এবং ভিআইপিদের গাড়িতে করে এসব ইয়াবা ট্যাবলেটের চালান পৌঁছাবে গন্তব্যে। এছাড়া কন্টিনেন্টাল কুরিয়ার সার্ভিস, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস, এসএ পরিবহন ও মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে মাছ বোঝাই মিনিট্রাকেও এসব চালান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
যেখানে যাবে : প্রথমে কক্সবাজার আসবে। কয়েকটি চালান কক্সবাজারে না থামিয়ে সরাসরি চট্টগ্রাম ও ঢাকায় চলে যাবে। এরপর হাত বদল হয়ে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের নামী-দামী আবাসিক হোটেল, ফ্ল্যাট বাড়ি, অভিনেতা-অভিনেত্রী, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, যুবক-যুবতী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, প্রশাসনিক আমলার দপ্তরে পৌঁছাবে ইয়াবা গুলো। আর যে চালান গুলো কক্সবাজারে ‘যাত্রা বিরতি’ করবে। সেখান থেকে কয়েকটি চালান আসন্ন পর্যটন মৌসুমকে সামনে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্টার মানের হোটেল ও বাসা-বাড়িতে উঠবে বলে দাবী করেছে নির্ভরযোগ্য সুত্রটি।
এদিকে ইয়াবা পাচার সংক্রান্ত বিষয়ে টেকনাফ ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্ণেল জাহিদ হাসান জানান, ইয়াবা পাচারকারী চক্র যতই শক্তিশালী হোক বিজিবি’র হাত থেকে রক্ষা পাবেনা। ইয়াবা পাচার রোধে বিজিবি পক্ষ থেকে অভিযান আরো জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে ইফতার, তারাবিহ’র নামায ও সেহেরী সময় নজরদারী আরো বাড়ানো হয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মোঃ জাহাঙ্গীর জানান, জেলা পুলিশ ইতোমধ্যেই ইয়াবা পাচারকারী ও ব্যবসায়ীদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। আকারে ছোট হওয়ায় আসলে খুব তাড়াতাড়ি বিষয়টি দৃষ্টি গোচর হয়না। তবে পুলিশ যেভাবে নতুন কৌশল ও ফাঁদ পেতেছে, এতে পাচারী যতই প্রভাবশালী কিংবা চতুর হোক- পুলিশের জালে আটকা পড়বে।
যৌথ অভিযানের দাবী : স্মরণকালের এ বৃহৎ চালান ঠেকাতে যৌথ অভিযানের দাবী করেছে সুত্র গুলো। সুত্র জানায়, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড ও নৌ বাহিনীর সমন্বয়ে ফোর্স গঠন করে একেক দিন একেক জায়গায় অভিযান চালালে চালান গুলো আটক করা সম্ভব হবে। এছাড়া সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপিত বিজিবি’র চেকপোস্ট গুলোতে আরো বেশি নজরদারী বাড়াতে হবে। মেরিন ড্রাইভ ও বঙ্গোপসাগরে সন্দেহজনক ট্রলার গুলোতে তল্লাশী চালানো এবং নারী নেত্রীসহ চক্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে কড়া নজরদারীই পারে ইয়াবার এসব চালান ঠেকাতে-এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Leave a Reply